হেলাল মহিউদ্দীন: ১. জাপানি ও কানাডীয়রা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার নিয়ে মহাবিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। জাপানিরা হারুকি মুরাকামির নাম শুনতে গিয়ে ম্যালা ধৈর্য দেখিয়েছে। কানাডীয়রা মার্গারেট অ্যাটউড বা অ্যান কার্সনের নাম শুনতে হা হয়ে ছিল গত কয়েক বছর। সবচেয়ে বেশি বিরক্ত বাজিকর-জুয়াড়িরা। মুরাকামি- অ্যাটউটদের নামে বাজি ধরে জুয়াড়িদের কেউ কেউ সর্বস্ব খুইয়েছে। ক্রিকেটের বাজিকররা কীভাবে কীভাবে যেন খেলোয়াড়দের ঘুষ খাইয়ে পাতানো খেলা খেলিয়ে বাজিতে জিতে যায়। কিন্তু নোবেলের বাজিকররা নির্বাচকদের ঘুষ খাওয়াবে কী জানতেই পারে না তারা কারা!
তারা নাকি আসলে বাজিকরদেরও বাজিকর। ক্ষমতাধর দেশগুলোই নাকি নোবেল রাজনীতির ক্রীড়নক জুয়াড়ি। তাদের টিকির নাগাল পাওয়াও তাই নাকি পাব-বারের জুয়াড়িদের কম্মো নয়! শান্তি পুরস্কারটিকে তো বরাবরই ক্ষমতাধরদের ইচ্ছার রাজনৈতিক পুরস্কার ধরা হয়। নোবেল ঋতু শুরু হতে চলেছে। আবারো টেনশন...
২. আইজি নোবেলের জনপ্রিয়তাও দারুণ বাড়ছে। অস্কারকে ভ্যাংচানো পুরস্কার র্যাজিস অস্কার। আইজি নোবেলও সে রকম পুরস্কার। সিনেমায় সবচাইতে বাজে অভিনয়, পরিচালনা-প্রযোজনা-গল্প, বাজে কৃৎকৌশল ইত্যাদির জন্য র্যাজিস পুরস্কার। সিলেভস্টার স্ট্যালোন দশবার এবং ম্যাডোনা নয়বার এই পুরস্কার পেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন। প্রথম সারির কয়েকজন চলচ্চিত্র আইকনও পাঁচ ডলার মূল্যমানের পুরস্কারটি (হাস্যোচ্ছলে) গ্রহণ করে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
সাহিত্য, শান্তি ও বিজ্ঞানের হাস্যকর গবেষণা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশার পুরস্কার আইজি নোবেল। আইজি নোবেলের যাত্রা শুরু এরিখ ফন দানিকেনের মতো বিশ্ববিখ্যাত সুপরিচিত কল্প-গল্পকারকে সাহিত্য পুরস্কারের জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে । দানিকেন বিশ্বাস করতেন গ্রহান্তরের এলিয়েনরা হাজার বছর আগে এসে মানুষদের সভ্যতার পথ দেখিয়ে গেছে।
এই যে হাজার হাজার দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসাসফল এলিয়েন মুভিস এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী রচিত হয়েছে এবং হচ্ছে, সকলের মেসিয়াহ পথপ্রদর্শক দানিকেন। আইজি নোবেল তাকে নির্বাচিত করে বৈজ্ঞানিক কল্পগল্পের নামে সাহিত্যে চ‚ড়ান্ত গাঁজাখুরিতা আমদানির কৃতিত্বের জন্য।
৩. ঠাট্টা-মশকরার হলেও আইজি নোবেল চিন্তা ও ভাবজগতের জন্য যথেষ্ট উসকানিপূর্ণই বটে। পুরস্কারটির গান হচ্ছে‘আগে মুখে হাসি, তারপর গভীর ভাবনা’।
দানিকেনের কথাই ধরা যাক। আগে দানিকেনের ভাবনাধারণাকে বৈজ্ঞানিক বিষয় মনে করা হতো। আইজি নোবেলের পর হাসাহাসি শেষ হলেই তার ধারণাকে সন্দেহ, পর্যালোচনা, সমালোচনা ও অবিশ্বাসের নিক্তিতে তোলা হতে থাকে। পরিবেশ নৃবিজ্ঞানীদের আলোচনা ও ব্যাখ্যা অনেক বেশি মর্যাদা ও গুরুত্ব পেতে থাকে। বিশেষত ইস্টার আইল্যান্ডের ৫০ টনি প্রস্তরমূর্তিগুলো যে এলিয়েনরা এসে বানিয়ে দিয়ে যায়নি, মানুষই বানিয়েছে সেই বিশ্বাস পোক্ত হতে থাকে। জ্যার্ড ডায়মন্ড ও রয় রাপাপোর্ট পঠিত হতে থাকেন। ইস্টার আইল্যান্ডের জনবসতি বিনাশের পরিবেশগত কারণের আলোচনায় গ্যারেট হার্ডিনের ‘ট্রাজেডি অব দ্যা কমন্স’ ধারণাও সমাবিজ্ঞান-নৃবিজ্ঞানে প্রাসঙ্গিক সহপাঠ হয়ে ওঠে।
এবারও আইজি নোবেল মজার মজার সব বিষয়ে পুরস্কৃত করেছে। বিভিন্ন দেশের জাতীয় পত্রিকায় ভালো কভারেজও পাচ্ছে। আমার আগ্রহ সাহিত্যে কে বা কারা পেলো দেখার। যে বা যারাই পাক, সেই কর্মটি যে কোনোভাবে হোক জোগাড় করতে হবে। দেখতে হবে কোন মধুগুণে সেটি আইজি পুরস্কারের যোগ্যতা অর্জন করে বসেছে! ফেসবুক থেকে