লুৎফর রহমান হিমেল : সুখের গ্রহণযোগ্য কোনো সংজ্ঞা নেই, সুখী হওয়ারও কোনো ফর্মূলা নেই। তারপরও মনীষীরা নানা সময় নানা অভিজ্ঞতার নিরিখে কিছু পথ বাতলে দিয়েছেন। সেগুলোর কিছুটাও মেনে চলতে পারলে ব্যক্তি তার জীবনে অনেক আশার পথ দেখতে পাবেন। ১. ঘুম থেকে উঠেই প্রথমেই কৃতজ্ঞ থাকুন এই ভেবে যে, আপনি অন্তত বেঁচে আছেন। এরপর নিজেকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রকৃতির নির্মল পরিবেশের সান্নিধ্যে থাকার চেষ্টা করুন। সারাদিনের করণীয়গুলো সম্পর্কে মনে মনে বা লিখিতভাবে একটি পরিকল্পনা করুন।
২. ঘরে তৈরি খাবার বেশি খাবেন, আর বাইরের বা প্রক্রিয়াজাত খাবার যতো পারেন কম খাবেন। শরীরের জন্য ঘরে তৈরি খাবার ভালো। সারাদিনে সবুজ চা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এগুলো আপনার শরীর ভালো রাখবে। শরীর ভালো তো মন ভালো। আর মন ভালো থাকলে এই জগতে আপনিই রাজা। ৩. আশপাশের সবার মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করুন। এ নিয়ে একটি অলিখিত চুক্তি নিজের সাথে নিজেই করে ফেলুন। দেখবেন তাদের হাসি আপনার মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে আরো বহুগুণে।
৪. গালগপ্প, অতীতের স্মৃতি, বাজে চিন্তা করে আপনার মূল্যবান সময় এবং শক্তি অপচয় করবেন না। ভালো কাজে সময় ও শক্তি ব্যয় করুন। এটার ফল পাবেন তাৎক্ষণিক এবং দিনের পর দিন। ৫. খাদ্যাভাস নিয়ে এই ফর্মূলাটা মেনে চলার চেষ্টা করুন, ‘সকালের নাস্তা রাজার মতো, দুপুরের খাবার রাজকুমারের মতো এবং রাতের খাবার সারবেন ভিক্ষুকের মতো’। শরীর সহজে খারাপ করবে না। ৬. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। যারা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করেন না, এই হাঁটাহাঁটি করাটা তাদের টনিকের মতো কাজ দেবে। ৭. নির্জন কোনো স্থানে মোবাইল ফোনসহ সকল ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ রেখে একাকি কিছু সময় কাটান ও নিজেকে নিয়ে ভাবুন। সংসার, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র বা বিশ্বকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি নিজেকেও সময় দিতে হয়। মনে রাখবেন, আপনি হচ্ছেন আপনার সবচে কাছের খাঁটি বন্ধু।
৮. কারো জীবনই সব সময় সমান যায় না, তবুও ভাল কিছুর অপেক্ষা করতে শিখুন। এই খারাপ সময় আপনাকে একদিন সুন্দর সময়ের কাছে পৌঁছে দেবে। ৯. অন্যকে ঘৃনা করে সময় নষ্ট করার জন্য আপনার জন্ম হয়নি। জীবন খুবই ছোট। সকলকে ক্ষমা করে দিন সব কিছুর জন্য। দেখবেন ক্লান্তিকর জীবন বদলে গেছে প্রশান্তিতে। ১০. কঠিন করে কোন বিষয় ভাববেন না। সকল বিষয়ের সহজ সমাধান চিন্তা করুন। জীবন কঠিন; আর আপনি নিজেও যদি কঠিন হন, দুই কঠিনে সংঘর্ষ অনিবার্য। ১১. সব তর্কে জিততে হবে এমন তো নয়, তবে মতামত হিসেবে হলেও অন্যের কথা মেনে নিতে পারেন। আবার না-ও মেনে নিতে পারেন। তবে এ নিয়ে তর্ক বাড়ানো মোটেই সুখকর কিছু নয়।
১২. আপনার অতীতকে শান্তভাবে চিন্তা করুন, ভুলগুলো শুধরে নিন। অতীতের জন্য বর্তমানকে নষ্ট করবেন না। বর্তমানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিন এবং ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করুন। ১৩. অন্যের জীবনের সাথে নিজের জীবন কখনোই তুলনা করবেন না। আপনি এ জগতে স্বতন্ত্র। প্রত্যেকটা মানুষ অন্যের থেকে গঠনে, মন-মননে পুরোপুরি ভিন্ন। সুতরাং তুলনার যৌক্তিকতা নেই। ১৪. মনে রাখতে হবে, কেউ আপনার সুখের দায়িত্ব নিয়ে বসে নেই। আপনার কাজই আপনাকে সুখ এনে দেবে। সুখের আয়োজনটা আপনাকেই করতে হবে। ১৫. প্রতি একবছরের একটি এবং ৫ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা করে সেভাবে অগ্রসর হোন। ওই সময়ের মধ্যেই তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করুন।
১৬. দেওয়ার চেষ্টা করুন, শুধু নেওয়ার নয়। এতে আপনার মন প্রসন্ন হবে। কাজে গতি আসবে। ১৭. অন্যরা আপনাকে নিয়ে কি ভাবছে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই, বরং আপনি আপনাকে নিয়ে কি ভাবছেন সেটাই মুল্যায়ন করুন ও সঠিক কাজটি সঠিক সময়ে করুন। ১৮. কখনো কষ্ট পুষে রাখবেন না। কারণ কষ্ট পুষে রাখলে এটা বড় হয়। তাই কষ্টের ব্যাপারে খোলামেলা আলাপ করুন ও সবার সাথে নয় ঘনিষ্টদের সাথে তা শেয়ার করুন। ১৯. মনে রাখবেন, সময় যতই ভাল বা খারাপ হোক তা বদলাবেই। সময় মূল্যবান, তাই তার দিকে ঘনিষ্টভাবে খেয়াল রাখুন।
২০. আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনার ব্যবসা বা চাকরি কিন্তু অন্যরা কেউ এসে দেখভাল করবে না। এ কারণে ভাল বন্ধু কিংবা নিকটাত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখুন। যারা সুসময়ে বন্ধু তাদের নয়; বরং বিচক্ষণ খাঁটি বন্ধুদের কাছে রাখুন। ২১. ফেসবুক অনেক সময় নষ্ট করে। আবার এ যুগে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফেসবুক ছাড়া আপনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন, ফলে এখানে আপনার সময় নির্দিষ্ট করুন। কতক্ষণ সময় থাকবেন, প্রয়োজনে ঘড়িতে টাইমার সেট করে দিন। আর স্মার্টলি ফেসবুক ব্যবহার করুন। গুজব ও মিথ্যায় ভরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাকে যথেষ্ট সচেতন হয়ে তা ব্যবহার করতে হবে।
২২. প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে আপনার জীবনের জন্য বাবা মাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিন। তাদের ছাড়া আপনি আসলে এ পৃথিবীতে এই মূহুর্তে থাকতেনই না। এই লেখাটিও পড়তেন না। এবার দিনের ভাল কাজগুলোর কথা মনে করতে করতে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে যান। আগামী কালের পরিকল্পনার কথা ঘুমের আগে না ভাবলেও চলবে। সকালটাতো পরিকল্পনার জন্য পড়েই আছে। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।
‘বিবেক’-এর ছবি
কামাল পাশা চৌধুরী: আমাদের যাত্রা পালায় অসম্ভব জনপ্রিয় এক রূপক চরিত্র ছিলো ‘বিবেক’। ভিলেনের বিবেকের মূর্ত প্রতীক হয়ে মঞ্চে প্রবেশ করে তার অশুভ চিন্তাকে গান গানে যুক্তি দিয়ে বাধা দিত এই বিবেক। এক সময় দেশের সেরা বিবেক ছিলেন ওস্তাদ গৌরাঙ্গ চন্দ্র আদিত্য। দেশের শ্রেষ্ঠ যাত্রা দল গুলোতে তিনি অভিনয় করেছেন বিবেক হিসাবে। বর্তমানে তিনি রোগে-বার্ধক্যে শয্যাশায়ী। দেশের প্রখ্যাত এবং একইসঙ্গে অবহেলিত লোকশিল্পীদের একটি করে পোর্ট্রেট এঁকে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনা কালে এই লোকশিল্পীরা জীবীকার অভাবে সবচেয়ে মর্মান্তিকভাবে বিপন্ন। নাগরিক শিল্পীরা সামান্য ভিক্ষান্ন অনেকে পেলেও আমাদের সংস্কৃতির এই শিকড়দের নিয়ে কেউ ভাবেনি। আমার সাধ্য তো এটুকুই। তাই জলরং-এ গৌরাঙ্গ আদিত্যের ছবি এঁকেই প্রকল্পটি শুরু করলাম। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :