সোহেল মিয়া: আর কিছুদিন পরই অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। আর তাই এখনই ঘরে ঘরে চলছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। এরই মধ্যে শুরু হতে যাওয়া আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় এখন পার করছেন রাজবাড়ীর মৃৎশিল্পীরা। তারা দিন রাত পরিশ্রম করে আপন মনে নিপুণ হাতে তৈরি করেছে মা দেবী দুর্গাকে। একাগ্র চিত্তে মনের মাধুরী মিশিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
আগামী ৬ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারে দূর্গা পূজা। এরপর ১১ই অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে পূজার মূল পার্বন শুরু হয়ে ১৫ ই অক্টোবর দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় এ ধর্মীয় উৎসব। পুরাণ অনুযায়ী দুর্গা শব্দের অর্থ অপ্রতিরোধ্য। এ বছর মহাষষ্ঠীতে এই মহামায়া দশভূজা দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে ঘোটকে(ঘোড়ায়) করে এবং পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে দোলায়(দোলনা) চড়ে কৈলাশে ফিরবেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখা সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজবাড়ী জেলায় মোট ৪৪১ টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এতে রাজবাড়ী সদরে ১০৪ টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও গোয়ালন্দ উপজেলাতে ২১ টি, পাংশা উপজেলাতে ১০৭ টি,কালুখালি উপজেলাতে ৬১ টি এবং বালিয়াকান্দি উপজেলাতে ১৪৮ টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা যায়, শিল্পীদের নিপুণ হাতে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।নিখুঁতভাবে মনের মাধুরি মিশিয়ে কারিগররা ফুটিয়ে তুলেছেন দেবী দুর্গাকে। পাশাপাশি চলছে লক্ষী, স্বরস্বতী, গণেশ ও কার্তিক, অসুর, সিংহ, মহাদেবসহ ১২টি প্রতিমা তৈরির কাজ। কোন কোন মন্ডবে চলছে কাঠামো তৈরির কাজ। আবার কোন কোন মন্ডবে চলছে মাটির কাজ।
জেলার পৌর এলাকায় বড়পুল হরিতলা স্বার্বজনীন পূজা মন্দিরে গেলে প্রতিমা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় শ্রী পলাশ পাল কে। আলাপকালে তিনি বলেন, আমি ৩০ বছর যাবত এই প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। আমার বাপ-দাদও প্রতিমা তৈরির কাজ করতো। মৌসুম এলেই কাজের চাপ বেড়ে যায়। তাছাড়া সারা বছর বসেই থাকতে হয়। এ বছর আমি ৮ টি মন্দিরের প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। প্রতিমা প্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিচ্ছি। তবে করোনার কারণে সবাই মজুরিও কম দিচ্ছে।
বড়পুল হরিতলা সার্বজনীন পূজা মন্দিরের সভাপতি গণেশ মিত্র বলেন, আমাদের মন্দিরে প্রতি বছরই শারদীয় দুর্গা পূজা উদযাপন হয়। এবছরও হচ্ছে। এখন প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। গত বছর করোনার কারণে সীমিত করা হয়। এবছরও করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমিত করা হবে। জেলা পূজা উদযাপন কমিটি থেকেও আমাদের কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্ত বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গতবারের মতো এবারেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপনের নির্দেশনা রয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া নির্দেশনা মেনেই পূজা উদযাপন করা হবে। এবছর রাজবাড়ী জেলায় ৪৪১ টি মন্দিরের পূজা উদযাপনের আয়োজন চলছে।
জেলা পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এ পূজায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটা মন্দিরেই জেলা পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম পুলিশের স্বেচ্ছাসেবক দল থাকবে। এছাড়াও র্যাবের মোবাইল টিম মাঠে থাকবে। দেবী বিসর্জন পর্যন্ত সার্বক্ষণিক প্রশাসনিক নজরদারি থাকবে।আশা করছি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।