শিরোনাম
◈ আবারও মে‌সির জোড়া গোলে ইন্টার মায়ামির জয় ◈ এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ ‘তুমি কেন ফুয়েল কেটে দিলে?’ ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের আগে পাইলটদের শেষ ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং ◈ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের জন্য সুখবর: মৃত্যু হলে লাশ দেশে পাঠাবে সরকার, ক্ষতিপূরণ মিলবে বীমার আওতায় (ভিডিও) ◈ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত: পিউ রিসার্চ ◈ বেপরোয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩ ◈ স্প‌্যা‌নিশ ক্যাবরেরাই থাক‌ছেন বাংলা‌দেশ ফুটবল দ‌লের কোচ ◈ সন্ধ‌্যায় নেপালের বিরু‌দ্ধে লড়াই‌য়ে নাম‌ছে বাংলা‌দে‌শের মে‌য়েরা ◈ ঢাকায় হবে এশিয়া কাপের সভা, ভারত অংশ নে‌বে না ◈ এবার যে কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন ড. ফয়জুল হক

প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:১১ রাত
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রেজা ঘটক ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবিটি নির্মিত হোক

রেজা ঘটক: ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সরকারি অনুদান চেয়ে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ'র ‘পেন্সিলে আঁকা পরীর পান্ডুলিপি জমা দিয়েছিলেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। সিনেমাটির জন্য তিনি ৬০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছেন। অনুদানের প্রথম কিস্তি হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি ১৮ লাখ টাকাও সরকারি কোষাগার থেকে পেয়েছেন। হঠাৎ জানা গেলো অমিতাভ রেজা চৌধুরী ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবিটি আর বানাচ্ছেন না এবং সরকারের কাছ থেকে পাওয়া অনুদানের টাকাও ফেরত দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সরকারের অনুদান কমিটিকেও তিনি তার এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। যে ছবিটি নিয়ে তিনি কয়েক বছর স্বপ্ন দেখলেন, রঞ্জন রব্বানীকে সঙ্গে নিয়ে চিত্রনাট্য করলেন, ছবিটির জন্য সরকারি অনুদান পেলেন, এখন হঠাৎ কেন সেই ছবিটি না বানানোর এই সিদ্ধান্ত নিলেন অমিতাভ?

অমিতাভ দাবি করেছেন হুমায়ূন পরিবারের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে গেলে বেশকিছু নতুন শর্ত সামনে আসে। এই শর্তগুলো মেনে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে চান না তিনি। হুমায়ূন পরিবার কী কী শর্ত দিয়েছে? মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় যে, হুমায়ূন পরিবার চলচ্চিত্রের গল্পের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করেছেন এবং একই সঙ্গে চলচ্চিত্র মুক্তির পর ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ থেকে আয়েরও অংশীদারিত্ব চেয়েছেন।

উল্লেখ্য ২০০৪ সালে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালক আবু সাইয়ীদকে ‘জনম জনম’ ও ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ দুটি উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বত্ব দিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে আবু সাইয়ীদ ‘জনম জনম’ থেকে ‘নিরন্তর’ নামে একটি ছবি বানান। ২০০৮ সালে অমিতাভ রেজা তার কাছে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’র জন্য অনুমতি চাইলে তিনি হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি আনতে বলেন। হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে অমিতাভ তখন মৌখিক অনুমতিও নিয়েছিলেন। অনেকে বলছেন যে অমিতাভকে হুমায়ূন পরিবার অনুমতি না দিলে আবু সাইয়ীদ তো চাইলে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ বানাতে পারেন। কিংবা উনিই তো অমিতাভকে লিখিত অনুমতি দিতে পারেন। কিন্তু দেশের কপিরাইট আইন অনুযায়ী, আবু সাইয়ীদ তার কাছে থাকা কপিরাইট অমিতাভকে স্থানান্তর করতে পারবেন না। আর মৌখিক অনুমতিতে কোনো কপিরাইট হয় না।

কপিরাইট আইনের ১৯ (৫) ধারা অনুযায়ী, লিখিত চুক্তিতে যদি কপিরাইটের কোনো মেয়াদ উল্লেখ না থাকে, সেক্ষেত্রে তার মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর। এখন আবু সাইয়ীদের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের চুক্তিতে যদি মেয়াদ উল্লেখ না থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী তিনিও আর আগের চুক্তিতে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবি নির্মাণ করতে পারবেন না। এখন অমিতাভ যদি মনে করেন হুমায়ূন আহমেদের উত্তরাধিকারীরা ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ উপন্যাসের জন্য কপিরাইট বাবদ অতিরিক্ত অর্থ চাইছেন, সেক্ষেত্রে তিনি ইচ্ছা করলে কপিরাইট আইনের ৫০ নং ধারা অনুযায়ী, কপিরাইট অফিসে অভিযোগ জানাতে পারেন। তখন কপিরাইট অফিস যদি দেখে হূমায়ূন পরিবার থেকে অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া হয়েছে, তাহলে তারা চাইলে একটি ‘যৌক্তিক অর্থ’ উত্তরাধিকারীদের জন্য নির্ধারণ করে দিতে পারবে। হূমায়ূন পরিবার এই ‘যৌক্তিক অর্থ নির্ধারণে’ যদি সন্তুষ্ট না হন, সেক্ষেত্র হুমায়ূন পরিবারকে সন্তোসজনক অর্থ দিয়ে অমিতাভ ছবিটি নির্মাণ করতে পারবেন। চলচ্চিত্র যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক মাধ্যম সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাংলাদেশের কপিরাইট আইনের বাইরেও ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির জন্য অমিতাভকে আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন মানতে হবে। সেক্ষেত্রে হুমায়ূন পরিবারকে সন্তোসজনক জায়গায় নিতে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির জন্য অমিতাভকে আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন অনুসরণ করতে হবে। শুধুমাত্র দেশীয় কপিরাইট আইনে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে না।

এবার কয়েকটি যৌক্তিক প্রশ্ন নিয়ে কথা বলি। [১] ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির জন্য হুমায়ূন পরিবার থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন না নিয়ে অমিতাভ রেজা চৌধুরী সরকারি অনুদানের জন্য কীভাবে আবেদন করলেন?[২] সরকারি অনুদান কমিটি ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির জন্য হুমায়ূন পরিবার থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন না দেখে কীভাবে ছবিটির জন্য সরকারি অনুদান বরাদ্দ করলো? অমিতাভ রেজা চৌধুরী হুমায়ূন পরিবার থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন না নিয়ে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির জন্য সরকারী অনুদানের যে আবেদন করেছিলেন, তা আদতে মোটেও ভ্যালিড নয়। অপূর্ণাঙ্গ আবেদনপত্র। অমিতাভের যে আবেদনপত্রটি বাস্তবিক অর্থে ভ্যালিড নয়, সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারি অনুদান কমিটি ‘পেন্সিলে আঁকা পরীর জন্য ৬০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে, সেটিও আইনগতভাবে ভ্যালিড নয়। আমি মনে করি, অমিতাভ এবং সরকারি অনুদান কমিটি দুই পক্ষই ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির ক্ষেত্রে ননভ্যালিড একটি ইস্যুতে আবেদন করা এবং সরকারি অনুদান দিয়ে উভয়পক্ষই চরম অরাজকতা করেছেন। যা শিষ্টাচার বহির্ভূত। একজন লেখকের একটি উপন্যাস নিয়ে আপনি সিনেমা বানাবেন আর তার চূড়ান্ত লিখিত অনুমোদন নেবেন না, এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অমিতাভ রেজা চৌধুরী এবং সরকারি অনুদান কমিটি উভয় পক্ষই ননভ্যালিড ইস্যুকে প্রশ্রয় দিয়ে একটি জটিলতা তৈরি করেছেন। সরকারি অনুদান কমিটি অমিতাভের একটি অপূর্ণাঙ্গ আবেদনপত্রেই সরকারি অনুদান দিয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি অনুদান কমিটি যে ছবি বাছাই প্রক্রিয়ায় অসততা করেছে, তাই প্রমাণ পাচ্ছে।এখন অমিতাভ সরকারি অনুদান ফেরত দিতে যে ইচ্ছা দেখাচ্ছেন, সেটা স্রেফ একটা স্টান্টবাজি। বাংলাদেশে সরকারি অনুদানের ছবি নিয়ে যে লবিং, লিয়াজোঁ, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণের অভিযোগের কথা আমরা জানি, ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির ঘটনায় সেটি এবার সবার সামনে উন্মোচিত হলো।

বিষয়টি এওতাই দুঃখজনক যে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন না করেও ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির জন্য অমিতাভ সরকারি অনুদান পেয়েছেন এবং সরকারি অনুদান কমিটি যাচাই বাছাই না করেই হয়তো কোনো অলৌকিক ক্রিয়া বলেই অমিতাভকে সরকারি অনুদান দিয়েছেন। বাস্তবে উভয় পক্ষই অন্যায্য আচরণ করেছেন। অথচ দেশের অনেক প্রতিভাবান ছেলে-মেয়ে প্রতিবছর সরকারি অনুদানের জন্য ছবি জমা দিয়ে শুধুমাত্র লবিং, লিয়াজোঁ, স্বজনপ্রীতি, দলীয়প্রীতি না থাকায় সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিকভাবে যে সকল শর্ত অনুসরণ করে একজন নির্মাতা ছবি নির্মাণ করেন, হুমায়ূন পরিবারের উচিত হবে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির জন্য অমিতাভকে সেসকল শর্ত জুড়ে দেওয়া। সরকারি অনুদানের জন্য আবেদনের আগে অমিতাভের উচিত ছিলো হুমায়ূন পরিবার থেকে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া। সেই কাজটি না করে অমিতাভ নিজেই একটি চরম ভুল করেছেন। আর সরকারি অনুদান কমিটি সঠিকভাবে আবেদনপত্র যাচাই বাছাই না করে অমিতাভকে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবির জন্য ৬০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান দিয়ে চূড়ান্ত অরাজকতা করেছেন। সরকারি অনুদান কমিটির এরকম চরম অরাজকতার জন্য আমি বরং তাদের ধিক্কার জানাই। এখন অমিতাভ ছবির টাকা সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে দিলে, তা হবে সরকারি অনুদানের ছবি যে চরম বিশৃঙ্খলা মেনে দেওয়া হয়, তা যথাযথভাবে প্রমাণ করা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের জন্য এটি একটি চরম জঘন্য উদাহরণ। যা সরকারি অনুদান কমিটির জন্যও চরম লজ্জ্বাজনক বটে। আমি চাই হুমায়ূন পরিবারের সঙ্গে বৈঠক করে অমিতাভ একটি সন্তোসজনক সমাধান বের করুক। ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবিটি নির্মিত হোক এবং আমি ছবিটি দেখতে চাই। ছবিটি যদি অমিতাভ না বানানোর সিদ্ধান্ত নেন, সেটা হবে এক ধরনের স্টান্টবাজি এবং তা হবে সরকারি অনুদানের ছবির জন্য আরেকটি কলংকজনক অধ্যায়। ফেসবুক থেকে 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়