ফিরোজ আহমেদ : ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারা, তারা ছাত্রনেতাদের কথায় ওঠেন বসেন’, বলেছেন ওবায়দুল কাদের। কথিত এই ছাত্রনেতা পরিভাষাটি নিয়েই আপত্তি করা যায়। বরং বলা যায় তৃণমূল পর্যায়ে সরকার মনোনীত গুন্ডাসর্দারদের কথায় ওঠেন কিংবা বসেন, অথবা তা করতে বাধ্য হন। কারণটা কি আমাদের অজানা? কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সর্বত্র যখন নিয়োগ দেওয়ার বেলায় তাদের শিক্ষকসুলভ যোগ্যতার চাইতে অন্য কিছুকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং বিশেষকরে তারা টিকে থাকেন থাকেন প্রধানত আমলাতন্ত্রের মনোনয়নে ও আংশিকভাবে গুন্ডান্ত্রের দয়ার ওপর নির্ভর করে, ‘ছাত্রনেতা’ নামধারী গুণ্ডাতন্ত্রের তৃণমূল প্রতিনিধিরাও তাদের ওজন ঠিকই বুঝে যান। অর্থাৎ, যে পরিস্থিতির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের এনারা উপহাস করছেন, সেই পরিস্থিতির জন্ম তারা নিজেরাই স্বয়ং নিজের হাতে দিয়েছেন। এই কথিত ছাত্র নেতারা ছ্ত্রাদের নেতাও নয়, নির্বাচিতও নয়, বহুক্ষেত্রে ছাত্রও নয়।
এ কারণেই সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রবাসে ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে অনেকেই অধ্যক্ষের গাফিলতি দেখলেও অধ্যক্ষকে দোষী করার পাশাপাশি যে পরিস্থিতি অধ্যক্ষকে পাড়াতো একজন গুণ্ডা, একজন নিন্মপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা এবং উপজেলা পর্যায়ের আমলাদের অধীনস্ত করে রেখেছে, সেই পরিস্থিতিটার দিকেও সবাইকে তাকাবার অনুরোধ করি। এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে সেখানকার মেয়র বলেছিলেন (০৫ নভেম্বর ২০১৫, প্রথম আলো থেকে তুলে দিচ্ছি):
‘দলীয় নিয়োগ না দেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি উপাচার্যের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনি আপনার যোগ্যতায় ভিসি হননি। প্রোভিসি হননি। আপনি আওয়ামী লীগ করেন বলে ভিসি-প্রোভিসি হয়েছেন। এই কথাটি ভুলে যাবেন না।’
রাজশাহীর মত পুরনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে যখন এই কথা সামান্য একজন মেয়র বলতে পারেন, বোঝা যায় দেশটার হালহকিকত কী। এবং মেয়র যে অসত্য বলেন নি, তা নিয়ে মনে হয় না কারও সন্দেহ আছে। অসৎরা অসৎ কিংবা অন্ততপক্ষে নতজানুদের সঙ্গ পছন্দ করবে, এই তো স্বাভাবিক। ফলে উপাচার্য কিংবা অধ্যক্ষদের মাঝ থেকে বেছে নেয়ার চেষ্টা হবে দুর্নীতি পরায়ন ও শিক্ষা বিষয়ে উদাসীন মানুষদের, এই তো স্বাভাবিক। বহু জায়গাতে এই গুন্ডতন্ত্র যে ততটা দুর্নীতিপরায়ন শিক্ষকদের খুঁজে পায় না, সেটাই বরং দেশ নিয়ে একটা আশার দিক।
শিক্ষকতা এভাবে এই দেশে ভয়াবহ অমর্যাদার একটা পেশায় পরিণত হয়েছে। তাকে দিয়ে এখন গুণ্ডাসর্দারদের বাজারের থলিও টানানো যাবে, এবং তাকে নিয়ে দুইবেলা তামাশাও করা যাবে। জানি না আরও কতদূর তারা এই টেনে নামানোকে অব্যাহত রাখবেন, কিন্তু সেই বাস্তবতাটাই দেখা যাচ্ছে। শুধু যে অধ্যক্ষরাই ওঠ-বস করেন তেমন তো না, বরং ওবায়দুল কাদেররাও যথাযথ ব্যক্তিদের হুকুমে ওঠেন এবং বসেন। স্বাধীন মত বা দায়িত্বের অধিকার তো এই দেশে কারও আর নেই। এমন অবস্থায় একটাই প্রশ্ন হতে পারে: শিক্ষকরা কী করছেন? তাদের প্রতিক্রিয়া কী? পরিস্থিতি আমরা বুঝলাম, পরিস্থিতির অবসান কীভাবে ঘটবে? ফেসবুক থেকে