মুনমুন শারমিন শামস : আমার খুব কাছের একজন বন্ধুর সঙ্গী মারা গেছেন কোভিডে। আমি সেই বন্ধুর বুকফাটা কান্না শুনেছি বহুবার। বহুদিন খারাপ থেকে সেই বন্ধুটি নিজেকে তার ছোট্ট সন্তানের জন্য আবারও শক্ত করে দাঁড় করিয়েছে। এখন সেই বাচ্চাটার বাবা মা দুই-ই। বাচ্চাটার জন্য শুধু নয়, নিজের জন্যও তার ঘুরে দাঁড়ানো খুব জরুরি। মা মানে তো রোবোট না। মাকেও তো বাঁচতে হবে। তো আমার সেই সাজগোজপ্রিয়, বিনয়ী, বুদ্ধিমান বন্ধুটি আবারও অফিস জয়েন করেছে। ধীরে ধীরে নিজের অন্য সব কাজও শুরু করেছে। তার পরিবার তাকে আনন্দে রাখার ভীষণ চেষ্টা করে। ভাই বোন, মা-বাবা মিলে তাকে বাইরে নিয়ে যায়। হ্যাঙ আউট করে।
আমার বন্ধুটা আবারও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একটু যত্ন নিতে শুরু করেছে। কিন্তু এসব কিছুর ভেতরেই হঠাৎ হঠাৎ আমি তার ফোন পাই। সেই ফোন ধরলে কোনো কথা শোনা যায় না। শুধু বুকফাটা কান্না ছাড়া আর কিছুই শুনি না। আমার এই বন্ধুটিকে নিয়ে, জ্বি, এই সদ্য সঙ্গী হারানো শোক কাটিয়ে উঠবার যুদ্ধে রক্তাত্ত ও লড়াইরত বন্ধুটিকে নিয়ে সমাজের কিছু ‘বিচ’ এর চুলকানি শুরু হয়ে গেছে। তারা তাকে নিয়ে জঘন্য সব কথা বলতেছে। তারা ভেবেই পাচ্ছে না, কেন সঙ্গী মারা গেলে সব বাদ দিয়ে মেয়েটি বসে বসে চুল ছিঁড়ছে না। কেন কেঁদে কেঁদে মরে যাচ্ছে না। কেন চোখে পিচুটি আর নাকে সর্দি ঝরিয়ে পাগলের মতো রাস্তায় বেরিয়ে যাচ্ছে না!
কেন সে অফিস যাচ্ছে! কেন সে হাসে? কেন সে চুল আঁচরায়? কেন সে লিপিস্টিক দেয়? কেন সে বাচ্চাকে নিয়ে চিলড্রেন রাইডে ওঠে? কেন সে ভাই বোনের সঙ্গে ঘুরতে যায়? এসবের মানে কী? তার মানে মেয়েটা চরিত্রহীন। তার মানে মেয়েটা খারাপ। তার মানে মেয়েটা আবার বিয়ে বসবে। অবাক হয়েছেন পড়ে? অবাক হবেন না। আমি শুধু আমার বন্ধুকে বলেছি, জাস্ট ঠাসস করে দুটো লাথি মেরে সামনের দিকে হাঁটতে আর খুব খুব বেয়াদপ আর দজ্জাল হয়ে যেতে, যেন ভয়ে কেউ ওর ছায়াও না মারায়! ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :