অমি রহমান পিয়াল: জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীন পর্যন্ত যাওয়ার নির্দেশ আছে ধর্মগ্রন্থে। উল্লেখটা আসলে দূরত্ব বুঝাইতে ব্যবহৃত, শিক্ষার জন্য যতোদূর যেতে হয় যাবা। হয়তো তখন চীনরেই পৃথিবীর (জনবসতি অর্থে) শেষসীমা মনে করতো আরবরা। তো ধর্মব্যবসায়ী যারা নিজেদের ব্যবসা টিকায়া রাখার স্বার্থে শিক্ষাদিক্ষারে (বিশেষ করে নারীদের) নিরুৎসাহিত করে, তারা ইসলামের যাবতীয় ভুলব্যাখ্যায় এই নির্দেশনারেও ভুলভাবে উপস্থাপন করে। তাদের কথা শুনলে মনে হয়ে যে জ্ঞান অর্জন করতে হইলে চীনে যাইতে হবে, আর তেমনটাই বলা হইছে ইসলামে। এবং চীন থেকে জ্ঞান নিয়ে আসা এই বিশেষ প্রজাতির কিন্তু ব্যাপক কদর তাদের কাছে। খালেদা জিয়ার জন্য যেমন তাদের নারী বিষয়ক যাবতীয় নির্দেশনা শিথিল, তেমনি চীনা বিশেষজ্ঞদের জন্য সাতখুন মাফ সনদ দিয়া তারা রীতিমতো অ্যাসেট জ্ঞান করে। ধর্মব্যবসায়ী জামায়াতে ইসলামি যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়াদের নাস্তিক আখ্যা দিয়া তাদের ভোক্তাশ্রেণী ধর্মভীরুদের উত্তেজিত, প্ররোচিত ও বিভ্রান্ত করে, সেই তারাই নাস্তিক শিরোমনি বদরুদ্দিন উমরকে তাদের মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লেখায়। কয়েক যুগ বৈধ বিয়ে ছাড়াই সন্তানের জনক হওয়া এবং লিভিং টুগেদার করে কাটানো ফরহাদ মজহার তাদের উপদেষ্টা, একওয়াক্তও নামাজ না পড়া মাহমুদুর রহমান কিংবা হালের পৈতাধারী মুমিন (মুসলমান নারী বিবাহসূত্রে) পিংকিদারে তাত্বিক মানতে তাদের ঈমান কাঁপে না।
বেসিকালি তারা একই মুদ্রার দুই পিঠ মাত্র। লেনিনবাদী কমিউনিজমকে ঠেকাতে ভারতীয় উপমহাদেশে যখন ‘কমিউনিস্টরা নাস্তিক’ স্লোগান তুলে ধর্মীয় মোকাবেলার নীল নকশা সাজালো সিআইএ এবং জামায়াতে ইসলামীকে প্রসব করলো তখন দক্ষিণ এশিয়া ও ইন্দোচীন বলয়ে একইসঙ্গে জন্ম নিলো আস্তিক কমিউনিজম যার কেবলা পিকিং (বেইজিং)। এই বেল্টে যেমন মওলানা ভাসানী ইসলামিক সোশালিস্ট স্লোগান নিয়ে টুপি মাথায় রেড মাওলানা উপাধি নিয়ে শুরু করলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি সদস্যদের আশ্রয়দান, তার ন্যাপের সাইনবোর্ডে। কালে গিয়া এই ন্যাপই বিলীন হইলো কিংবা জন্ম দিলো বিএনপির। জামায়াতের সঙ্গে ভায়রাভাই সম্পর্কটা তাই অনেক পুরানো। হালের চিংকুদের তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ভেবে যারা ভুল করে তারা টের পায় পরে, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। তো জ্ঞান কী দেয় চীন? দেয় কীভাবে দামী ও জনপ্রিয় জিনিসের সহজ রেপ্লিকা বানানো যায়। কপিরাইটের তোয়াক্কা না করে তারা যাবতীয় বিলাসব্যসনের সস্তা নকল বাজারে ছাড়ছে। কমিউনিজমেরও। উৎপাদিত পণ্যের বাজার বাড়াতে তাদের দরকার ছিলো কিছু ক্যানভাসার, বাঙাল দেশের মতো এমন নিবেদিতপ্রাণ দালাল তারা আজও চোখে দেখেনি। খাজলিমলম বিক্রেতারা যেমন ক্যানভাসিংয়ের সময় রূপবানের গল্প বলে আলিফ লায়লার গল্প বলে, ওই দালালরা তেমন বলে চিংকুবাদের গল্প। এইভাবে শার্পনার, পেন্সিল থেকে শুরু করে মোবাইল, কম্পিউটারজাত পণ্য,টিভি, এসি সবকিছুর মনোপলিতে চীনাদের পকেটভারি করে দেয় তারা। এইখানেই শেষ না, গার্মেন্টসে বড় কোনো কনট্রাক্টের আগে, রমরমা মৌসুমে তারা আশুলিয়া-সাভার-মিরপুরে শুরু করে হাঙামা। তেল গ্যাস জ্বালানির কোনো টেন্ডার ডাকার পর শুরু করে হাউকাউ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ যাতে কনট্রাক্টটা বাপে পায়। আছে সেনাবাহিনীর হালকা ও ভারী অস্ত্রের টেন্ডার।
দালালেরা ভোদাই পোলাপাইনের কাছে গল্প করে চারু মজুমদার, সিরাজ শিকদারের। তারা যেই চীনা সংস্কৃতিক বিপ্লবের ছায়ায় যেই লিন বিয়ানের জনযু্দ্ধর রণকৌশল ঠোটস্ত করে হাজার হাজার মেধাবী তরুণকে কবরে পাঠালেন নিজেরাও অনুগামী হলেন, সেই লিন বিয়ান চীনা কমিউনিস্ট পার্টির তরফে প্রতিবিপ্লবী, আর সংস্কৃতিক বিপ্লবের হোতারা চার কুচক্রি। হইলো কিছু? যাহোক আসল এজেন্ডা এটা না, চীন-পাকিস্তান ভাই ভাই, চিংকু জামাতও ভাই ভাই। কিন্তু তারাই দখল করে রাখছে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি বিনোদনের মূল জায়গাগুলা এবং তাদের যাবতীয় পক্ষপাত গোলাম আযমেই। প্রশ্ন উঠতেই পারে, আওয়ামী লীগের আমলে এতো সোচ্চার চিংকুরা, বিএনপি জামায়াত আমলে কী করে? তখন তাদের টিকি থাকে কই? দোস্ত রেজা বললো- তারা তখন চাকরি করে, পড়াশোনা করে, আখের গোছায়। যতো পরিশ্রম তাদের আওয়ামী আমলেই! ব্যাপক বিনোদন...। লেখক : অলনাই অ্যাক্টিভিস্ট। ফেসবুক থেকে