শিরোনাম
◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০২১, ০৩:৫৬ রাত
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০২১, ০৩:৫৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ট্রেনে পাথর ছোড়ার শাস্তি কঠিন, মামলার নজির কম

ইত্তেফাক: বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে এক বছরের মধ্যে ৭৪টি পাথর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পশ্চিম রেলের বিভিন্ন রুটে এসব পাথর হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলায় ক্ষতি হয়েছে ট্রেনের জানালা ও দরজার কাচের। আহত হয়েছেন ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও যাত্রীরা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, লকডাউনের কারণে ট্রেন বন্ধ ছিল। তা না হলে পাথর হামলার সংখ্যা আরো বেশি হতো। খেলার ছলে শিশু-কিশোরেরাই এসব হামলার সঙ্গে জড়িত বলে তারা জানতে পেরেছেন।

গত ১৫ আগস্ট নীলফামারীর সৈয়দপুরে ট্রেনে ছোড়া পাথরের আঘাতে আজমির ইসলাম নামে পাঁচ বছরের এক শিশু চোখ হারাতে বসেছে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে সৈয়দপুর রেলস্টেশনের মাস্টার ময়নুল হোসেন বাদী হয়ে রেলওয়ে থানায় মামলা করেছেন। কিন্তু অন্য ঘটনাগুলোতে মামলা করার নজির কম। যদিও এ ধরনের হামলার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এ ব্যাপারে ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় শাস্তির বিধান আছে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কথা বলা আছে। আর কোনো রেলযাত্রী মারা গেলে ৩০২ ধারায় ফাঁসিরও বিধান আছে। পাথর নিক্ষেপকারী অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে সেক্ষেত্রে তার অভিভাবকের শাস্তির বিধান আছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল খুলনা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল কমিউটার ট্রেনে দায়িত্ব পালন করছিলেন রেলওয়ের পরিদর্শক বায়েজিদ হোসেন। পাথর নিক্ষেপের পর তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ৪১ দিন চিকিত্সাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনে কর্তব্যরত গার্ড নাজমুল ইসলাম সোলেমান গুরুতর আহত হন।

পাথর নিক্ষেপের ফলে এভাবে যাত্রীদের পাশাপাশি ট্রেনের চালকসহ অন্যান্য দায়িত্বরতদেরও জীবন ঝুঁকিতে পড়ে। ২০১৯ সালের ৫ মে রাতে সিরাজগঞ্জের জামতৈল ও মনসুর আলী স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে পদ্মা আন্তঃনগর ট্রেনে পাথর হামলায় জিসান নামে চার বছরের এক শিশু গুরুতর আহত হয়। তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। জিসান যখন এই হাসপাতালে ভর্তি হয়, তখন জুঁথি (১২) নামে আরেক শিশু পাথর হামলায় আহত হয়ে ভর্তি ছিল।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জানিয়েছে, এক বছরে ৭৪টি পাথর হামলার ঘটনায় ৬৩টি ট্রেনের দরজা-জানালার কাচ ভেঙেছে। আহত হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে দুজন চালক ও একজন সহকারী চালকও ছিলেন। এছাড়া দুজন গার্ড, একজন সহকারীও আহত হয়েছেন। অন্যরা শিশুসহ নানা বয়সের যাত্রী। পাথর নিক্ষেপের কারণে ট্রেনে এখন যাত্রীরা জানালার পাশে বসতেই ভয় পায়।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সারা দেশের ২০ জেলার ৭০টি স্থানকে পাথর নিক্ষেপের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ১৫টি জেলা পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মধ্যে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে আছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, ডোমার, পাকশী, ঈশ্বরদী বাইপাস, পোড়াদহ জং, মিরপুর, ভেড়ামারা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট, খুলনার দৌলতপুর, ফুলতলা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, দর্শনা হল্ট, আলমডাঙ্গা, লালমনিরহাট, নোয়াপাড়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাঁচবিবি ও চাটমোটর।

পশ্চিম রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলাম বলেন, শিশু-কিশোরেরা ট্রেন যাওয়ার আগে লাইনে কান পেতে শোনে। এতে তারা বুঝতে পারে ট্রেন আসছে। তখন রেললাইন থেকে পাথর নিয়ে তারা প্রস্তুত থাকে। কে কোন বগিতে মারবে, কে কাচ ভাঙবে, কে ইঞ্জিনে মারবে—এসব প্রতিযোগিতা করে। এটা তারা খেলা মনে করে। এ জন্য যাত্রী ও রেলের চালক-সহকারীদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। যেহেতু শিশু-কিশোরেরা কাজটি করে, তাই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে সচেতনতায় জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ না করার ব্যাপারে সচেতনতা তৈরিতে লিফলেট তৈরি করে বিতরণ করা হয়। রেললাইনের পাশের মসজিদের ইমামদের এসব লিফলেট দেওয়া হয়। তারা জুমার দিন পড়ে শোনান। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়ে কাজ করা হয়। আরএনবি ও জিআরপি পুলিশও কাজ করে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সভা করা হয়। পাশাপাশি ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে এর কুফল সম্পর্কে শিশুদের অবগত করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়