জন্নাতুন নাঈম প্রীতি: নেটফ্লিক্সের খুবই ইন্টারেস্টিং একটা ডকুমেন্টারি সিরিজ আছে, নাম ‘স্পাই ক্রাফট’। এখানের একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্বের নাম- সেক্সপিওনাজ। এই সেক্সপিওনাজ আসলে কী? এসপিওনাজ কিংবা স্পাইদের জগতে একটা কমন টার্ম আছে, সেটা হলো- সেক্সপিওনাজ। এইটা জেন্ডার নিউট্রাল পেশা হলেও এই হিসেবের প্রথমে থাকে মডেল এবং অভিনেত্রীরা, যারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানদন্ডে সুন্দর। তারা এজেন্ট হিসেবে ক্ষমতাবান পুরুষদের সেক্স থেকে শুরু করে সফরসঙ্গী হয় এবং হাতিয়ে নেয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। কিন্তু তাদের নিয়োগ কে দেয়? সেক্সপিওনাজ এজেন্ট হিসেবে নারীদের নিয়োগ দেওয়ার চল বহু দেশের গোয়েন্দা সংস্থার যেমন আছে সেরকম আছে মাফিয়া গ্রুপগুলোর।
তারাও নিজেদের এজেন্ট হিসেবে এইসব নারীদের নিয়োগ দেয় যারা সেক্সের বিনিময়ে তথ্য সংগ্রহ করা। এই তথ্য দিয়ে কি করা যায়? এই তথ্য দিয়ে বন্ধুরূপী শত্রু যেমন চেনা যায়, সেরকম দলের মধ্যে থাকা বিশ্বাসঘাতকদেরও খুঁজে বের করা যায়। আমলা থেকে শুরু করে বিদেশি কূটনৈতিকরা খুব স্পর্শকাতর তথ্য ইদানীং সাধারণত ফোনে বিনিময় করে না। বিশেষ করে পেগাসাস কিংবা অন্যান্য স্পাইওয়ারের রমরমা নজরদারির মধ্যে তথ্য বিনিময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে দরকার হয় সেক্সপিওনাজদের।
মূল কথা হলো এসকল সেক্সপিওনাজ এজেন্টদের দ্বারা কম্প্রোমাইজড তথ্য দিয়ে দুনিয়ায় মিলিটারী অপারেশন পর্যন্ত এদিক সেদিক হয়ে গেছে। ঐতিহাসিক হিসেব করতে গেলে সেক্সপিওনাজ এজেন্ট হিসেবে মার্গারিটা জিল বা মাতা-হারির নাম প্রথমেই চলে আসে।
মাতাহারির মৃত্যু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তথ্য পাচারের ঘটনায় ১০০+ সৈন্যের মারা যাওয়ার সাথে সরাসরি জড়িত থাকায়। মৃত্যুর সময় ফায়ারিং স্কোয়াডের ব্যাপারে বহুল প্রচলিত কথাটি হলো- তাকে গুলি করার সময় তিনি গুলি করতে আসা সৈন্যদের সবাইকে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান আয়রন ক্রস পাওয়া বেলজিয়ান নার্স মার্থা মেকেনা নিজেই ছিলেন স্পাই, তার দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি নিজের আত্মজীবনী লিখেছিলেন- আই ওয়াস আ স্পাই। আমার খুবই প্রিয় এই আত্মজীবনী কৌতূহলী পাঠকদের অবশ্যই পড়া উচিত। এমনকি এই ২০১৯ সালেও এফবিআই ধরেছিল রাশান ইন্টিলিজেন্স অফিসার মারিয়া বুটিনাকে, ১৮ মাসের জেল হয়েছিল তার আমেরিকায় বসে রাশিয়ার হয়ে সেক্সপিওনাজ এজেন্ট হিসেবে স্পাইং করার জন্য!
তাই, দুনিয়ার কোথাও ধুপধাপ করে মডেল অভিনেত্রী জাতীয় লোকজন গ্রেপ্তার হলে প্রথমেই আমার আজকাল মাথায় আসে এই আন্ডারকাভার এজেন্টদের কথা। মনে প্রশ্ন আসে- আমাদের আশেপাশে কোথাও কি তারা আছে? অবশ্য সেক্সকে ট্যাবু বানিয়ে রাখা সমাজ ব্যবস্থায় সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অস্ত্রের নাম যে সেক্সই হবে, সেই ব্যাপারে আর সন্দেহ কি আছে? ফেসবুক থেকে