শিরোনাম
◈ আজ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ◈ ভয়ানক অভিযোগ জাহানারার, তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন (ভিডিও) ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সময়মতো জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের আহ্বান বিএনপির স্থায়ী কমিটির ◈ কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ব্যয়  ৪৫ লাখ টাকা ◈ ভার‌তের কা‌ছে পাত্তাই পে‌লো না অস্ট্রেলিয়া, ম‌্যাচ হার‌লো ৪২ রা‌নে ◈ শুল্ক চুক্তির অধীনে মা‌র্কিন উ‌ড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি বিমান কিনছে বাংলাদেশ ◈ টিটিপাড়ায় ৬ লেনের আন্ডারপাস, গাড়ি চলাচল শুরু শিগগিরই (ভিডিও) ◈ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বার্তা ◈ ভালোবাসার টানে মালিকের সঙ্গে ইতালি যাওয়া হলো না সেই বিড়াল ক্যান্ডির! ◈ ৬৬ পর্যবেক্ষক সংস্থা পেল নিবন্ধন, নতুন নীতিমালায় পুরনো ৯৬টির নিবন্ধন বাতিল

প্রকাশিত : ১০ আগস্ট, ২০২১, ১১:০২ রাত
আপডেট : ১০ আগস্ট, ২০২১, ১১:০২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চাঞ্চল্যকর ৩৫ লাখ টাকা ডাকাতি, মামলার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই

সুজন কৈরী : শেরপুর সদর থানার চাঞ্চল্যকর প্রকাশ্য দিবালোকে ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) জামালপুর কার্যালায়। সেইসঙ্গে ঘটনায় জড়িত আসামি তুষার রঞ্জন দাস ওরফে রিপনকে (৪৩) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ৮ আগস্ট দুপুরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনাপাড় এলাকা থেকে তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হলে তুষার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মঙ্গলবার পিবিআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, চলতি বছরের ২১ মার্চ শেরপুর সদরের মধ্যশেরী ধোপাবাড়ী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী নূর হোসেন শেরপুর সদর থানায় মামলা করেন।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে শেরপুরের সাতপাকিয়ায় নিজ বাড়ি থেকে ৩৩ লাখ এবং মনোয়ার পেট্রোলিয়াম থেকে নগদ ২ লাখ টাকা (মোট ৩৫ লাখ) একটি কাপড়ের তৈরি ব্যাগে ভরে ভাতিজা লিটন মিয়ার মোটর সাইকেলে করে ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে তারা শেরপুর সদরের মধ্যশেরী ধোপাবাড়ী সাকিনস্থ জনৈক উজ্বল ঠিকাদারের বাড়ির সামনে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা ৫ জন ব্যক্তি দুটি মোটর সাইকেল দিয়ে নূর হোসেনের ভাতিজার মোটর সাইকেলের গতিরোধ করেন। মোটর সাইকেলটি থামানো মাত্রই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা নিজেদের আইনের লোক হিসেবে পরিচয় দেন। তারা নূর হোসেনে ভাতিজা লিটনের হাত চেপে ধরে হ্যান্ডকাপ মোটর সাইকেলের হেন্ডেলের সাথে লাগিয়ে দেয় এবং মরিচের গুড়া নূর হোসেনের চোখে ছিটিয়ে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে দ্রুত পালিয়ে যায়।

পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ভুক্তভোগীদের মোটর সাইকেলসহ থানায় নিয়ে হাতের হ্যান্ডকাপ খুলে দেয়।

পিবিআই জানায়, মামলাটি থানা পুলিশ দুই মাস ধরে তদন্ত করে এবং তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে পিবিআই জামালপুর জেলায় পরবর্তী তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এরপর পিবিআই’র ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই জামালপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার এম.এম. সালাহ উদ্দীনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান মামলাটি তদন্ত শুরু করেন। একপর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তকারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি তুষারকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার তুষার জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি গত বছর ডিসেম্বরে একটা সমিতির টাকা আত্মসাতের মামলায় নেত্রকোনা জেলা কারাগারে আটক ছিলেন। ওই সময় কারাগারে আটক খোকন ওরফে নুরু ও জুয়েলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। নুরু ও জুয়েল কলমাকান্দা থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় হাজতে ছিলেন। নুরু ও জুয়েল তাকে বলেছিলেন তাদের বালুর ব্যবসা আছে। তাছাড়া তারা অনেক টাকা পয়সা খরচ করতেন দেখে তাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। তুষার তাদের কাছে একটা কাজ চান। তারা তাকে কারাগার থেকে বের হয়ে যোগাযোগ করতে বলেন এবং ফোন নাম্বার দেন। প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন তারা এক সাথে কারাগারে থাকার পর নুরু ও জুয়েল জামিনে মুক্তি পান। আরও মাস খানেক পর তুষার জামিন পায়। কারাগার থেকে বের হয়ে তুষার নুরু ও জুয়েলকে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করলে তখন তাদের কাছে কাজ নাই বলে জানান।

পরে ঘটনার একদিন আগে খোকন একটি কাজ আছে তুষারকে জানান এবং এবং ময়মনসিংহ যেতে বলেন। ওই দিনই বিকেলে তুষার ময়মনসিংহ চলে যান। রেলস্টেশনে নুরুর সাথে তার দেখা হয়। এরপর তারা দুজন শেরপুরের বাসে উঠে ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থলে চলে যান। নুরু তাদের সমস্ত প্লান পরিকল্পনা তাকে বুঝিয়ে বলে। ঘটনাস্থল দেখিয়ে নুরু তাকে নিয়ে জামালপুর তার বাসায় চলে যান। রাত ৪টা পর্যন্ত তারা নুরুর বাসায় থাকেন। এরপর ঢাকা থেকে অপর আসামী উৎপলকে ময়মনসিংহ চলে আসতে বলেন নুরু। রাত ৪টার পরে একটা লোকাল ট্রেনে করে নুরু ও তুষার ময়মনসিংহ চলে যান। সেখান থেকে সকাল ৯টার দিকে একটা প্রাইভেটকারে করে নুরু ও উৎপল শেরপুরের দিকে রওনা হন। প্রায় ১১টার দিকে ঘটনাস্থলের একটু আগে পৌঁছে জুয়েল, রাজু ও লেমনকে দাড়ানো দেখেন তুষার। তখন দুজন অপরিচিত ছেলে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। তুষার, জুয়েল, উৎপল একটা মোটরসাইকেলে উঠে এবং রাজু, লেমন আরেকটি মোটরসাইকেলে চড়ে ঘটনাস্থলের দিকে যান। নুরু গাড়ির চালকসহ শেরপুর শহরের দিকে চলে যান। নুরু ও জুয়েলের সার্বক্ষনিক ফোনে যোগাযোগ হচ্ছিল। প্রায় সাত মিনিট পর দুজন লোককে মোটরসাইকেলে আসতে দেখে তারা হাত দিয়ে ইশারা করে দাঁড়াতে বলে। জুয়েলের হাতে একটা হ্যান্ডক্যাপ ছিলো। জুয়েল হ্যান্ডক্যাপটি মোটরসাইকেল চালকের হাতে পড়িয়ে ফেলেন। লেমন তখন দ্রুত মরিচের গুড়া পিছনে বসা লোকের চোখে ছিটিয়ে তার হাতে থাকা কাপড়ের ব্যাগটি ছিনিয়ে নেন। এরপর জুয়েল ও রাজু ব্যাগ নিয়ে দ্রুত চলে যান। আরেকটি মোটরসাইকেলে লেমনের পিছনে উৎপল ও তুষার উঠেন।

প্রায় ৪০ গজ গিয়ে তুষার পেছনে বালুতে পড়ে যান। লেমন ও উৎপল তাকে রেখেই চলে যান। এরপর তিনি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নুরুকে ফোন করেন। নুরু তাকে ময়মনসিংহ চলে যেতে বলেন। তুষার বাসে করে ময়মনসিংহ চলে যান। তুষার পরে যোগাযোগ করলে তাদের ফোন বন্ধ পান। পরে তুষার জানতে পারেন যে উৎপল ঢাকায় ও বাকিরা কক্সবাজার চলে গিয়েছিলো। প্রায় ১২ দিন পরে নুরু তাকে ফোন দিয়ে একটা নাম্বার চায়। নাম্বার দিলে নুরু ৪০ হাজার টাকা পাঠান। এরপর আর কখনো তাদের সঙ্গে তুষারের যোগাযোগ হয়নি।

পিবিআই জামালপুরের পুলিশ সুপার এম.এম. সালাহ উদ্দীন বলেন, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আন্তঃজেলা ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। তারা মোবাইল ফোনে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশপাশের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডাকাতি ও দস্যুতা করে থাকে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার ও লুন্ঠিত টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়