দীপক চৌধুরী: বাংলাদেশের সুদীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আমাদের মুক্তি আন্দোলন ও স্বাধীনতার ইতিহাসে সবসময়ই অনন্য ভূমিকা রাখতেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। বঙ্গমাতা তাঁর স্বামী বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে এগিয়ে আসতেন।
আজ বঙ্গমাতার ৯১তম জন্ম-বার্ষিকীর দিন। তাঁর সম্পর্কে কথা বলার একমাত্র কারণ, তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনে না এলে সম্ভবত ইতিহাস অন্যরকম হতো। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সহযোগী ছিলেন। প্রচার-বিমুখ বঙ্গমাতা আড়ালে থেকে নীরবে সবসময়ই ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পর, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সবসময়ের মণিকোঠায় বঙ্গমাতা। বাঙালির অরাধ্য ধন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও বাঙালির সবচেয়ে বেশি ভরসার জায়গা ছিলেন তিনি।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, গণ-অভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বঙ্গমাতা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের দিনে সেই সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ও অন্যরা বঙ্গবন্ধুকে তাদের মতামত ও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার সারাটা জীবন এ দেশের মানুষের জন্য লড়াই করেছ। ভাষণে কি বলতে হবে- সেটা তুমিই সবচেয়ে ভাল জান। তুমি তোমার হৃদয়ের কথা শুনো।’ এবং বঙ্গবন্ধুও সঠিকভাবে এ কাজটিই করেছেন। এককথায় বঙ্গমাতাকে পাশে পেয়েই বঙ্গবন্ধু পূর্ণতা পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে কাজ করেছেন, গরীব-এতিম-অসহায় মানুষদের সাহায্য করেছেন, বীরাঙ্গনাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার মতো মহৎ দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদেশের মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে বেগম মুজিব যে কর্তব্যনিষ্ঠা, দেশপ্রেম, দূরদর্শী চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন এর ফলে জাতির পিতার পাশাপাশি তিনি আজ বঙ্গমাতার আসনে অধিষ্ঠিত। এ দেশের রাজনীতিতে তাঁর অনন্য সাধারণ ভূমিকার জন্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক