শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ২১ জুলাই, ২০২১, ০৩:১৫ দুপুর
আপডেট : ২১ জুলাই, ২০২১, ০৩:১৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী: কৌশলী হতে জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দীপক চৌধুরী: ঈদের ছুটিতে কী লেখা উচিৎ বা কী লেখা উচিৎ নয় এটা ভাবতে ভাবতেই মনে হলো খুবই কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই তো আমরা হেঁটে যাচ্ছি। বর্তমান সরকারকে কী নিরুপদ্রবে এগিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে? প্রতি পদে পদে বাধা আর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে করে শেষপর্যন্ত এখন তো বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আমরাও আক্রান্ত। অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে। ধৈর্য ধরতে হবে আমাদের সবাইকে। ইতিহাস থেকে পাই, আমাদের মেধা ও শ্রমের যুগপৎ সম্মিলনে আমরা আজকের এ অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এখন নিজেদের সভ্য ও আধুনিক মানুষ হিসেবে দাবি করি কিন্তু এখানে আসতে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক জটিল, কঠিন ও দুর্গম পথ। যুগে যুগে, আমাদের সঠিক নেতৃত্বের সন্ধান করতে হয়েছে। আমরা বেছে নিয়েছি প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতা। পেয়েছিও তাঁকে।

যিনি প্রয়োজনে দেশের জন্য, বাঙালির জন্য জীবন দেবেন- এমন নেতা। এবং তা-ই হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ওপর নানারকম ষড়যন্ত্র চলেছে। এ চক্রের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবনের জন্য আমরা হারিয়েছি। ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকারীদের বেড়াজালে আমরা হারিয়েছি বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। এ কারণেই বলি, তিলে তিলে গড়ে ওঠা এ মানবতার পেছনে নানান গুণীজনের সদিচ্ছা ও সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কঠিন ও জটিল স্তর থেকে বাংলাদেশকে সুন্দরের পথে এনেছেন। ২০০৪-এর আগস্টে তাঁকে হত্যা করা অপচেষ্টা চালিয়েছে ঘাতকরা। প্রগতিশীল শক্তির জন্য কখনো মসৃণ পথ ছিলো না। সুদীর্ঘ পথে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে এর বিশ্লেষণ সংক্ষেপে করা সম্ভব নয়। আজ খুশির ঈদ। ভিডিও শুভেচ্ছা বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “দেশের সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। এছাড়াও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।”

ভয়ংকর করোনায় আক্রান্ত সারাবিশ্ব যেখানে বিধ্বস্ত, হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের মতো সাধারণ দেশে যে ভ্যাকসিন আসবে তাও ছিল কল্পনাতীত। কিন্তু ভ্যাকসিন এসেছে, আরো আসার পথে রয়েছে, আসবেও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ধারাবাহিকভাবে গত সাড়ে ১২ বছরে উন্নয়ন-অগ্রগতির সকল সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, সাহসিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আজ বিশ্বনন্দিত। ধনী-গরিব, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার অধিকার রক্ষায় কাজ করেছেন পরিশ্রমী নেত্রী শেখ হাসিনা। গত সাড়ে ১২ বছরে কতকিছু যে ঘটে গেছে এদেশে। ভয়ংকর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব সকল চক্রান্ত থেকে এদেশকে রক্ষা করেছে। সেসব ভাবতে বসলে গা শিহরণ দিয়ে ওঠে। সরকার ভালো করে বসতেও পারেনি। দুমাসও হয়নি। এলো ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ। পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড। যা কোনোভাবেই বাংলাদেশ ভুলবে না। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।

আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই দেশের ইতিহাসে বৃহত্তর মামলা। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ২৭৮ জনকে খালাস দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানিশেষে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। পত্রিকায় দেখলাম, শুধু ৯ জন আসামির আপিলে নথিপত্রে পৃষ্ঠার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৫। অন্য আসামিদের ক্ষেত্রে যেন এসব নথি না দিতে হয়, সে ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি বরাবরে আবেদন করা হয়েছিল। পরের খবরটি জানা হয়নি আমার।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে হাজির হলো হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হলেও তাদের কাজগুলো রাজনৈতিক হয়ে গেলো। ২০১৩ সালের হেফাজত কী নৃশংসতা-ই না ঘটালো বাংলাদেশে। ঢাকার মতিঝিল-দিলকুশায় ভয়ংকর ত্রাস সৃষ্টি করে ও পুলিশ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মারাত্মক আস্ফালন দেখালো। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিসহ সমমনা ইসলামি দলগুলোর সমর্থনে বাংলাদেশ দেখলো এক নতুন তাণ্ডব। ভাবখানা তাদের, যেনো সরকারের পতন ঘটিয়েই তারা ঘরে যাবে। এমন দৃশ্যে জাতি অবাক হয়ে গেলো! এ কী? নির্বাচিত সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা নাকি! একইসঙ্গে সরকার পতনের লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটামের ঘোষণা এলো। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের ‘চৌদ্দগোষ্ঠী’ উদ্ধারের পাশাপাশি টিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছিল-হেফাজতিদের নানারকম উস্কানী। যেনো ওদের মুখে সরকারবিরোধী বক্তৃতার খৈ ফুটছে।

‘আমরা কাফনের কাপড় নিয়ে এসেছি, লাশ পড়ে যাবে তবুও আমরা এখান থেকে যাবো না, দাবি আদায় করেই যাবো!’ তৎকালীন ডিএমপির পুলিশ কমিশনার ছিলেন অত্যন্ত সুদক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা ড. বেনজীর আহমদ। সাংবাদিক হিসেবে তখন মনে প্রশ্নও জেগেছিল, আসলে এগুলো কী দেখছি। কী হতে যাচ্ছে? কিন্তু হায়, দেখলাম কী? কী দেখলাম একদিন সকালে!! হায়!!! শুধু আফসোস্ করলাম। যারা দম্ভ করে বলেছিলেন কাপনের কাপড় নিয়ে এসেছেন- তারাই দৌড়ে পালালেন যেনো। দেখতে হলো, মতিঝিলের সেই খালি মঞ্চের আশপাশের খালি জায়গায় শুধু ফেলে যাওয়া ছেঁড়া সেন্ডেল-জুতোর ছড়াছড়ি।

এরপর দশম নির্বাচনকে ঘিরে আরেক ভয়াবহতা সৃষ্টি হলো। দেশের সর্বত্র পেট্রোলবোমা আর ট্রাক-বাসে বোমা নিক্ষেপের তাণ্ডব চলেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ ছিলো, ‘বিএনপি-জামায়াত এই ষড়যন্ত্রে মেতেছে।’ দেশে হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারা হলো। শিশুর লাশ, বাস শ্রমিকের লাশ, ট্রাক শ্রমিকের লাশ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার লাশ দেখা গেলো। প্রায় দুইশ মানুষের মৃত্যু ঘটানো হলো। নির্বাচনের দিন সহিংসতায় নিহত হয়েছিলেন ১৯ জন। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার দিক থেকেও ওই নির্বাচন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ৪১ দিনে মারা গেছেন ১২৩ জন। ভোটের দিন এতসংখ্যক মানুষের প্রাণহানী এর আগে দেখা যায়নি। আমাদের মনে আছে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলেছিল কানাডার আদালত। এটি হয়েছিল হরতাল-অবরোধে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের কারণে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিএনপি সন্ত্রাসে ছিল, আছে বা ভবিষ্যতেও থাকতে পারে- এমন ধারণা করার যৌক্তিক কারণ আছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরু থেকে বিএনপির ডাকে টানা তিন মাসের হরতাল-অবরোধের সময় গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এখানেই কী শেষ? না। বাংলাদেশের স্বপ্ন পদ্মা সেতু নিয়ে শুরু হয়েছিল জোর আলোচনা। নেতিবাচক নানাকথা প্রচার করা হলো। এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মাসেতু থেকে সরে দাঁড়ালো তখন সবচেয়ে খুশি হয়েছিল যে রাজনৈতিক দলটি এর নাম বিএনপি। এরপর একদিন শোনা গেলো, পদ্মা সেতু নিয়েই সাংবাদিকদের কিছু বলবেন প্রধানমন্ত্রী। গেলাম গণভবনে। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বললেন, নিজেদের অর্থে আমরা পদ্মা সেতু বানাবো। সর্বত্র একধরনের বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল। পদ্মা সেতু নিয়ে কী থামা যায়? এটির রেশ থাকতেই আরেক ভয়ংকর বিপদ।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে নৃশংস জঙ্গি হামলা হলো। সেই হামলার ভয়াবহতায় হতবিহ্বল হয়ে যায় পুরো দেশ। জঙ্গিরা হত্যা করেছিল ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে। যাদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয় ও তিনজন বাংলাদেশি। এমন নৃশংসতার পর জাইকা নিয়ে দুশ্চিন্তা এদেশের সরকারের দুশ্চিন্তা, মানুষেরও। জাইকার ভূমিকা আমাদের অনেকের কাছে বিস্মিত মনে হয়। বাইশ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্প কী না কী হয় অবস্থা। নাকি মেট্রোরেল প্রকল্প চলবেই না বাংলাদেশে। জাপানী নাগরিক হত্যার পর এদেশে ওরা আমাদের পাশে থাকবে কি না এটা তখন অনেকের ধারণায় নেই।

এই ঘটনায় অর্থাৎ হলি আর্টিজানে নিহত হলেন সাত কর্মকর্তা। তারা মেট্রোরেল প্রকল্পের সহায়ক কর্মকর্তা ছিলেন। গুলশানে হলি আর্টিজান হামলার পর যখন বিশে^ও বিভিন্ন সহযোগী দেশ এদেশ থেকে প্রকল্প গুটিয়ে নিতে চাইছিল তখনও এই ভয়াবহতার মধ্যেও জাপান তাদের শোক কাটিয়ে মেট্রোরেলের কাজ বন্ধ করেনি। আজ দৃশ্যমান ঢাকার মেট্রোরেল। অবশ্য, জঙ্গি ওই হামলার পর দেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়।

এখন যারা যতো রকম মায়াকান্নাই করুক না কেনো এতে কান দেওয়া ঠিক হবে না। অনেক কঠিন সময় অতিক্রম করতে হয়েছে। এ দেশের গুণীজনের যে চিন্তা ও আদর্শ তার বিপরীত অবস্থান জামায়াতে ইসলাম, হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ইসলামী দলের। বিএনপি নামের দলটির পুঁজি কেবল ওরা। ধর্মপ্রাণ মানুষকে কীভাবে যেন হেফাজত বিভ্রান্ত করে শেখ হাসিনার আধুনিক ও প্রগতিশীল সরকারের মুখোমুখি করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তাঁর সরকার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক, দূরদর্শী ও সর্বত্যাগী বলেই আমরা নানামুখী চক্রান্ত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে কঠিন, সুদৃঢ় ও ইস্পাতের মতো ধারালো এবং কৌশলী হতে জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়