শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০২১, ০২:০২ দুপুর
আপডেট : ১৮ জুলাই, ২০২১, ০২:০২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাসান আলী: আপনার মায়ের সেবাযত্ন দেখাশোনা কে করেন?

মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক চিরদিনের। প্রত্যেকেই মাকে ভালোবাসেন। এমন একটি বাক্য আমরা সবাই বিশ্বাস করি। মাকে কতটুকু ভালোবাসি এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ মাকে কেমন ভালোবাসেন এ প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে এ প্রশ্নটি বারবার আসে। আমি যখন কোনো বিখ্যাত ক্ষমতাবান মানুষকে দেখি, তখনই জানতে ইচ্ছা করে, তার মা কার সঙ্গে থাকেন? এ প্রশ্নটি সরাসরি করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমি ড্রাইভার, দারোয়ান, পিয়নকে জিজ্ঞেস করি স্যারের মা কোথায় থাকেন? তারা আমাকে প্রায় একই ধরনের উত্তর দেন, স্যারের মা বাড়িতে থাকেন। অর্থাৎ স্যারের মা স্যারের বাসায় থাকেন না। আরেকটু গভীরে খোঁজ নিলে জানা যায়, স্যারের মা অন্য সন্তানের সঙ্গে থাকেন। আমাদের সমাজে ক্ষমতাবান ‘স্যার’ মাঝে মধ্যে মাকে নিয়ে গল্প করেন। আবেগপূর্ণ স্মৃতিচারণ করেন।

আক্ষেপ করে বলেন, ‘মাকে নিজের কাছে রাখার অনেক চেষ্টা করি; কিন্তু তিনি থাকতে চান না। তার নাকি ভালোলাগে না। আসলে মার মন টেকে না।’ এসব কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সত্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এমন অবস্থা হয়? যারা সামর্থ্যবান, তারা কেন মায়ের সেবাযতœ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন? চাকরিবাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে, মাকে পাশে নিয়ে দুপুর কিংবা রাতের খাবার খাওয়ার সময় হয় না।
গবেষণায় দেখা যায়, পুরুষের তুলনায় নারী দীর্ঘায়ু হন। বৃদ্ধ নারীর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিধবা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ৮৫ বছরের বেশি বয়স্ক নারী সবাই বিধবা। ৬০ বছর বয়সী নারীর অর্ধেকই বিধবা। এ বিধবাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই আবার বিয়ে করেন। আমাদের সমাজ বৃদ্ধের বিয়ে মেনে নিলেও বৃদ্ধার বিয়ে মানতে পারে না। বিধবা নারী প্রথম দিকে স্বামীর গৃহে বসবাস করতে চান। কারণ এখানে তার জীবনের উল্লেখযোগ্য স্মৃতি রয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে। প্রায়ই নিজের পরিচিত স্থান থেকে সরে আসতে হয়। পরিচিত স্থান ছেড়ে আসার যাতনা কখনও কখনও তীব্র হতে পারে। রোগ-শোক আস্তে আস্তে কাবু করে ফেলে। আবেগময় আচরণের পরিবর্তন শুরু হয়। অল্পতেই চিৎকার, বকাবকি, হৈ-চৈ, অভিশাপ, নালিশ করেন। নিজেকে সংসারের অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তি মনে করেন। সংসারের বোঝা মনে করতে থাকেন। মৃত্যুর চিন্তা আসে। কীভাবে কখন মৃত্যু হতে পারে তা নিয়ে ভাবেন। নিজেকে নিয়ে অনেক সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সমাজের অনেকেই বিশ্বাস করেন, যৌবনে একজন মানুষ যত সুন্দর গুণাবলি অর্জন করুক না কেন বৃদ্ধকালে কলহপ্রিয়, নীচুমনা, সন্দেহপ্রবণ, স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিতে পরিণত হন।
ছেলেবেলায় গ্রামে মা-চাচিদের মুখে শুনতাম, ‘চাল নষ্ট মুড়ি- পাড়া নষ্ট বুড়ি’। অর্থাৎ যারা বুড়ি তাদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। বুড়ি শাশুড়ির ভূমিকায় থাকে। সদ্য ক্ষমতা হারানোর যাতনা তাকে আক্রমণাত্মক করে তোলে। ক্ষমতার পালাবদল, শারীরিক পরিবর্তন, মানসিক যাতনা সবকিছু মিলিয়ে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। এ অবস্থায় ছেলেমেয়েরাই বিধবা নারীর আশ্রয় হয়ে ওঠে। ছেলেমেয়েরা বার্ধক্যের এ সংকট সম্পর্কে সচেতন না হলে মাকে বুঝতে পারবে না। বৃদ্ধ বয়সের হতাশা, অসন্তোষ, ব্যক্তিকে মনে করিয়ে দেয় জীবন ব্যর্থ। মায়ের এ সংকটকালে সন্তানের উপস্থিতি, ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা, কর্তব্য পালন খুবই জরুরি।

আমাদের দেশের ১ কোটি প্রবাসী শ্রমিক এবং শহরে চাকরি-ব্যবসায় নিয়োজিত অধিকাংশের মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তারা মাকে প্রত্যক্ষভাবে সেবাযতœ করতে পারেন না। মায়ের বার্ধক্য স্বস্তিময়, শান্তিপূর্ণ, কর্মক্ষম রাখতে সন্তানসন্ততি, নিকটাত্মীয়ের সঠিক ভূমিকা পালন জরুরি। নারীর বার্ধক্য শান্তিপূর্ণ, আনন্দদায়ক না হলে জন্মদান হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে বলে আমার ধারণা। মাকে ভালোবাসি মানে মাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করি, যাতে তিনি স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। মাকে সহযোগিতা করি মানে মাকে অতিরিক্ত পরিশ্রম ছাড়া দৈনন্দিন কাজকর্ম আনন্দের সঙ্গে করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারায় সহায়তা। মাকে খুব মনে পড়ে মানে মার সঙ্গে ঘন ঘন দেখা-সাক্ষাৎ নিশ্চিত করা। যিনি বৃদ্ধা হবেন তাকেও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হতে হবে, যাতে করে নিজ সম্পর্কে কম উদ্বিগ্ন হয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম উপভোগ করতে পারেন।

সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন- মেলা, বিয়ে, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ। যাতে করে বিভিন্ন বয়সী লোকের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ রাখা সহজ হয়। বর্তমান কর্মকা- উপভোগ করার মতো মানসিক ক্ষমতা অর্জন করা। যেসব বৃদ্ধ নারী অলস, কল্পনার জগতে বসবাস করেন, সব সময় সমালোচনামুখর, প্রতিনিয়ত স্মৃতিচারণ করেন তারা তুলনামূলক বেশি কষ্ট পান। বৃদ্ধ বয়সে সুখী হওয়ার জন্য স্বীকৃতি, কৃতিত্ব, স্নেহ-ভালোবাসা অবশ্যই প্রয়োজন। যুব বয়সে যারা এসব অর্জন করেছেন, তারা সহজেই বৃদ্ধ বয়সে তা অর্জন করতে পারেন। মাকে তার পছন্দের জায়গায় বসবাস করতে সহায়তা করুন। তার ওষুধপথ্য, খাওয়া-দাওয়া, কাপড়-চোপড়, বিনোদনের প্রতি সজাগ থাকুন। এসব না করলে আইনের চোখে আপনি একজন অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

প্রতিদিন অথবা সপ্তাহে একদিন মায়ের সঙ্গে কিছু সময় গল্প করে কাটান। যারা দূরে থাকেন, তারা যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি মায়ের সঙ্গে দেখা করুন। মায়ের হাতখানি ধরে পাশে বসুন। থাকে বলুন, ‘মা আমি তোমায় ভালোবাসি। এ সুন্দর পৃথিবী তুমি আমাকে দেখালে। আমার জন্য জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছ।’

লেখক - সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়