মোশায়ারা আক্তার: [২]আষাঢ়ের কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির তীব্র স্রোতে ফুলে উঠেছে ধনাগোদা নদীর পানি।আর এই পানির প্রবল স্রেতধারায় পাশাপাশি দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের হরিণা বাজারখোলা গ্রামের ধনাগোদা নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি,বসতভিটা ও ঘর-বাড়ি ভাঙতে শুরু করেছে।
[৩] প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেই কোনো পদক্ষেপ।ধনাগোদা নদীর তীব্র স্রোতে ভয়াবহ নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে ৩০টি পরিবার।
[৪]সরেজমিনে জানা যায়,উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের হরিণা বাজারখোলা গ্রামের প্রায় ৩০টি জেলে পরিবার ভাঙন আতঙ্কে দিন যাপন করছেন। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে ধনাগোদা নদীর শাখায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোতের কারণে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে গৃহহীন হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে হরিণা বাজারখোলা গ্রামের ৩০টি পরিবার।
[৫]ইতোমধ্যে বসন্ত,নগেন্দ্র,যতীন্দ্রের ঘরবাড়ি তীব্র স্রোতে ভেঙ্গে গেছে।এমনকি এর আগে তাদের ফসলী জমি ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা নদী গর্ভে নদী বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে শেষ সম্বল বসত ভিটের ঘরটি খুলে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে।একদিকে করোনার প্রভাবে কাজ নেই অন্যদিকে নদীভাঙনে সম্পদ হারিয়ে দিশেহারা জেলেপাড়ার মানুষগুলো।হুমকির মুখে রয়েছে একটি কালি মন্দির সহ ৩টি মন্দির ও ৩০টি পরিবারের সহায় সম্পদ ভাঙন রোধে সরকারের হস্তক্ষেপ চান নদ-নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
[৬]হরিণা বাজারখোলা গ্রামের বাসিন্দা সুনীল মিস্ত্রী,রতনেশ^র মন্ডল,যতীন,সুভাষ,ও মানিক বলেন, আমরা দিন এনে দিন খাই। এভাবে আমাদের সংসার চলে? নদীতে মাছ ধরি, মাছ বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে ছেলে পুলে নিয়ে খাই। এখন নদীতে মাছও পাইনা। করোনার কারণে তেমন কাজকর্ম নেই।এ অবস্থায় পেটের খাবার জোটাবো নাকি থাকার আশ্রয় খোঁজবো। তারা বলেন, আমাদের জেলে কার্ড ও নাই যে, কোন সহযোগিতা পাবো। এখন ভাঙন থেকে আমাদের ঘর-বাড়ি রক্ষা করার জন্য সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
[৭]ষাটোর্ধ্ব প্রিয় লাল,নিতাই ও হরে কৃষ্ণ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,বাবারে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।এখন শেষ সম্বল ভিটেটুকু রক্ষা করতে না পারলে কোথায় গিয়ে উঠবো।সরকার আমাদের কোনো খোঁজখবরই রাখে না।আমাদের মরণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।কানন বালা বলেন,চোখের পলোকে বাড়ি-ঘর নদী খাইছে।এমন ভাঙন আগে দেহি নাই।এখন আমাগো কিছু নাই।নায়-নাতকুর নিয়ে কোথায় যাব,ক্যামনে চলব ভগবানই জানে।
[৮]দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও)মো.কামরুল ইসলাম খান জানান,স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খবর পেয়ে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি।প্রাথমিক অবস্থায় ভাঙন রোধে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
[৯]উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর(অব.)মোহাম্মদ আলী বলেন,ভাঙনের বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান আমাকে বলেছে।এ বিষয়ে এমপি মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।
আপনার মতামত লিখুন :