দীপক চৌধুরী: করোনার জন্য কঠোর ‘লকডাউন’ ঘোষণার আগে গণমাধ্যমে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, কী করা যাবে আর কী করা যাবে না। করোনা পরিস্থিতিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে বিয়ে অনুষ্ঠান, জন্মদিন ইত্যাদির আয়োজন হচ্ছে। গোটা বিশ^ আজ অসহায়। অথচ বিয়ে, জন্মদিন পালন করা হচ্ছে ধুমধাম করে। প্রশাসন থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ও হচ্ছে। আসলে আমরা নিজে যদি না শোধরাই পৃুলিশ-র্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট –ইউএনও কী করবেন। রাস্তাঘাটে যা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয় না আমরা কতো কঠিন সময় পার করছি। কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রী ও যানবাহনের ভিড় দেখা দিয়েছে। টেলিভিশনে দেখছি, শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শতশত যাত্রী ও যানবাহন ঘাট এলাকায় আসতে দেখা যাচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই শুধু সরকারকে দোষ দেওয়া অন্যতম কাজ। একশ্রেণির মানুষের চরিত্রই হচ্ছে যেনো শুধু দোষ দেওয়া। পর্যাপ্ত আইসিইউ নেই কেন- এই প্রশ তুলেই দোষারুপ। আইসিইউ সংকট থাকবে না কেন? এটি কী এতো সহজ জিনিস! ভারতে চার লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে মূলত আইসিইউ সংকটে।
আইসিইউ সাপোর্ট পাওয়া কত কঠিন তা কী আমরা জানি? করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এদিকে আমাদের নজর কতটা! বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্রদের মধ্যে খাবার ও নগদ টাকা সহায়তা বিতরণ অনুষ্ঠানে ডিএমপির পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল এক পর্যায়ে অত্যন্ত বাস্তব একটি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আপনি পুলিশ দেখে মাস্ক পরবেন আর পুলিশ চলে গেলে মাস্ক খুলে ফেলবেন, আপনাকে কিন্তু ফেরশতাও এসে বাঁচানোর চেষ্টা করবে না। বাঁচার জন্য একটি মাস্কই যথেষ্ট।’ চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন সংক্রমণের ৮০ শতাংশই হচ্ছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে। গত কয়েক দিন ধরে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে ৩০/৪০ হাজারের ওপরে এবং গত ৭ দিনে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে গড়ে ১৫০ জনের ওপরে। আর ৭ জুলাই মৃত্যু ২০০শ ছাড়ালো। এরপরও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার প্রবণতা কেন?
আসলে, আমাদের মধ্যে যার যে কাজটি করা দরকার তা করছি না। বেতন-ভাতার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকরা। যানজট সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কেন? বকেয়া বেতন–ভাতার দাবিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরে শ্রমিকেরা বৃহস্পতিবার মহাসড়ক অবরোধ করলেন। দরিদ্র শ্রমিকেরা জীবন দিয়ে কাজ কওে বছরের পর বছর ধরে ‘বড়লোক’ বানাবে আর ওদের সঙ্গে এই দুঃসময়ে উনারা প্রহসন করবেন নাকি? মহাসড়ক অবরোধে অংশ নেওয়া ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা গ্রুপের শ্রমিক রফিকুল ইসলাম, নাজমা বেগম ও রিনা আক্তার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, চার মাস ধরে তাঁরা বেতন–ভাতা পাচ্ছেন না। কারখানাটি বর্তমানে বন্ধ আছে। মালিকপক্ষ বিভিন্ন সময় বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখছে না। বেতন–ভাতা পরিশোধ না করা হলে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে এটা কী সম্ভব! বাস্তবতা তো খুব কঠিন।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক