ফিরোজ আহমেদ: কোভিড মহামারিতেও স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি দেখে একটা জীববিজ্ঞানের তুলনা মনে পড়লো। মশা রক্ত খায়। কিন্তু খেতে খেতে পেট ভরে গেলে সে ঠিক বুঝতে পারে। সে জানে এর চাইতে বেশি খাওয়া বিপজ্জনক হবে। মশার একটা স্নায়ু এই ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণ করে, তার রক্ত খাওয়া পূর্ণ হলেই মশা রক্তচোষা আপাতত বন্ধ করে দেয়। বিবর্তনের প্রক্রিয়াতেই এই প্রক্রিয়াটা তৈরি হয়েছে মশার জীবন রক্ষার প্রয়োজনেই। কোন কারণে এই স্নায়ুটি অকার্যকর হয়ে গেলে কী ঘটে, সেটা নিয়ে একটা বিখ্যাত পরীক্ষা আছে। আলোচ্য এই পরীক্ষাটা হলো এমন, মাইক্রোস্কোপের নিচে নিয়ে জ্যান্ত রেখেই মশার সেই সুক্ষ স্নুায়ুতন্ত্রীটা যদি কেটে দেয়া হয়। এই মশাটি তখন এই ক্ষমতাটি হারিয়ে ফেলে, রক্ত খেতে গেলে আর টের পায় না কখন বেশি খাওয়া হয়ে গেছে। ফলাফল হলো মশা তখন রক্ত খেতেই থাকে, খেতেই থাকে, খেতেই থাকে। এবং এভাবে রক্ত খেতে খেতে একসময় আক্ষরিক অর্থেই মশাটা পেট ফেটে মরে যায়।
রাষ্ট্রের সঙ্গে মশার এই পরিস্থিতির একটা সাদৃশ্য যেমন আছে, তেমনি একটা বিপজ্জনক দিকও আছে। একটা দেশেও সরকার যদি সকল বিরোধিতা দমন করতে সক্ষম হয়, সকল প্রতিবাদ বন্ধ হয়ে যায়, সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলা যায়, তাহলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুণ্ঠন ও অপচয় রোধ করার কোনো বন্দোবস্ত আর থাকবে না। দুর্নীতি, অপচয় ও শোষণ তখন অবারিত হবে। কোনো সন্দেহ নেই এবং সব খারাপেরই যেহেতু শেষ আছে, কোনো না কোনোভাবে এরও সমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু সাধারণত দেখা যায়, রাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অভাব আছে, এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বা প্রাকৃতিক বা যেকোনো ধরনের বিপর্যয় নেমে এলে জনগণকেই তার ক্লেশটা সবচাইতে বেশি বহন করতে হয়। যাদের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের কারণে ঘটনাটা ঘটলো, তাদের হয়তো কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়, কিন্তু জনগণকে যার মধ্যদিয়ে যেতে হয়, তা অবর্ণনীয়। লেখক : রাজনীতিবিদ
আপনার মতামত লিখুন :