ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ: ‘বিউটিফুল মাইন্ড’ ছবির গল্পের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ John Nash-এর ‘গেইম থিওরি’ মানুষের বিভিন্ন আচরণগত বিষয়গুলোর মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নের সমস্যার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব। গেইম থিওরি হলো একধরণের কৌশলের খেলা, যেখানে একাধিক মানুষের নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নিজের ছাড়াও অন্যের লাভ-ক্ষতিকেও প্রভাবিত করে।
ধরা যাক স্বামী স্ত্রী উইকঅ্যান্ডে ঘরে না থেকে বিনোদনের জন্য কিছু একটা করবে ঠিক করেছে। সমস্যা হলো স্বামী চায় একটা নাটক দেখতে যেতে। কিন্তু স্ত্রীর ইচ্ছা শখের শপিং করতে বেরুবে। তবে একলা শপিং করার থেকে স্ত্রী বরং স্বামীর সঙ্গে অগত্যা নাটক দেখতেই যাবে। কারণ বাসায় একলা বা দুজনে বসে থাকা তাদের বিবেচনার মধ্যেই নেই। আবার স্বামীও একলা নাটক দেখতে যাবার চাইতে দুজনে মিলে শপিং করতেই পছন্দ করবে। তাহলে? (এটি পারিবারিক সিদ্ধান্তের বিষয়ের একটি যুক্তির ছক, এখানে অন্যান্য বিবেচনার অবতারণা প্রাসঙ্গিক হবে না, যেমন অংক বা লজিকের প্রশ্নে যা আছে, শুধু তারই উত্তর খুঁজতে হয়।)
গেইম থিওরির এই উদাহরণটিতেJohn Nash-এর সূত্র অনুযায়ী আপাতদৃষ্টে দুজনের নিজ নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো গাণিতিক সমাধান নেই, অন্য অনেক ক্ষেত্রে যেমন থাকে। তবে অনুমান করা যায় যে এখানে ফলাফল নির্ভর করবে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ধরন ও দুজনের মেজাজ-মর্জি সম্পর্কে পরস্পরের মুল্যায়নের উপর। স্বামীটির যদি একরোখা ও মুরুব্বি ধরনের স্বভাব হয় এবং স্ত্রী যদি আগে থেকেই তা মেনে নিতে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে স্বামীর সাথে নাটক দেখতেই যাবে। অবশ্য স্বামী বলতে পারেন যে নারী অধিকারের বিষয়ে সে সচেতন বলেই কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে না, কারণ স্ত্রীকে তো সে শপিং করতে যেতে মানা করছে না। (তারা আধুনিক দম্পতি এবং স্ত্রীর একা বেরুতে কোনো অসুবিধা নেই।)
এখানেই পারিবারিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে নারীর ক্ষমতায়নের সূক্ষ্ম বিষয়টি চলে আসে। পারিবারিক ক্ষমতার বৈষম্য একটি ঘটনাকে আলাদা করে দেখলে বোঝা যাবে না। এটা অনেকদিন ধরে গড়ে ওঠা আচরণের বিষয়। অবশ্য এর উল্টোটাও হতে পারে, স্বামী যদি স্ত্রীর ইচ্ছাকে ক্ষেত্রবিশেষে প্রাধান্য দিতে শেখে অথবা স্ত্রীর যদি কিছু কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব নিয়ে আগে থেকেই স্বামীর সঙ্গে বোঝাপড়া থাকে (নারীর ক্ষমতায়নের একটা লক্ষণ) তবে তারা হয়তো এ ক্ষেত্রে দুজনে শপিং করতেই যাবে। (বাংলায় অর্থনীতির যে বইটি লিখছি: ‘অর্থনীতি কেন পড়ি; উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষিত’; সেখান থেকে উদ্ধৃত। ) ফেসবুক থেকে