অপূর্ব চৌধুরী: [২] বন্যপ্রাণীর চলাচলের জন্য কৃত্রিম সেতু তৈরি করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দম্পতি। তারা হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের (২০১০-১১) সেশনের শিক্ষার্থী হাসান আল রাজি চয়ন ও একই বিভাগের (২০১৬-১৭) সেশনের শিক্ষার্থী মার্জান মারিয়া।`Artificial Canopy Bridges For Conservation’ নামক একটি প্রকল্পের আওতায় এই গবেষণা করা হয়।
[৩] প্রকল্পটির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবির বিন মুজাফফর এবং অক্সফোর্ড ব্রুক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনা নেকারিস। এই কাজে সহযোগিতা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১৫তম আবর্তনেরর শিক্ষার্থী আলী আকবর রাফি।
[৪] সড়ক দুর্ঘটনা,বিদ্যুৎ তড়িতায়িত হওয়া বন্যপ্রাণীদের জন্য প্রধান দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই দুর্ঘটনা থেকে প্রাণীদের রক্ষা করতেই কৃত্রিম সেতু তৈরি করলেন দুই গবেষক।
[৫] এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আল-রাজী বলেন, আমরা ২০১৫-২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর সড়ক দুর্ঘটনা এবং তড়িতাহত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করি। নিজেদের সংগৃহীত তথ্য, সামাজিক মাধ্যম,নিউজ ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে আর্ন্তজাতিক জার্নাল জুলজিয়াতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করি। সেই তথ্যানুসারে, গত ২০১৫-২০১৭ সালে পর্যন্ত সাতছড়ি বনে বিভিন্ন প্রজাতির ১৪টি এবং লাউয়াছড়াতে ১৩টি বন্যপ্রাণী সড়ক দুর্ঘটনা এবং তড়িতাহত হয়ে মারা গেছে। এই মৃত্যুর তালিকায় লম্বালেজী হনুমানদের সংখ্যা সব থেকে এগিয়ে।
[৬] হাসান আল-রাজী বলেন, আমাদের ধারণা ছিল এই লম্বালেজবিশিষ্ট হনুমানগুলো যখন তাদের চলাচলের জন্য বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে তখন তাদের লেজ দুই তারের মাঝে পড়ে বৈদ্যুতিক সার্কিট পূরন করে। যার ফলে তারা তড়িতাহত হয়ে মারা যায়।এই সমস্যা কিছুটা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা `Artificial Canopy Bridges For Conservation’ নামক একটি প্রকল্প হাতে নেই। এই প্রকল্প মূল গবেষক মার্জান মারিয়া ২০১৯ সালে এক্সপ্লোরার ক্লাব নামের আমেরিকান একটি সংস্থায় এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করেন এবং কিছু আর্থিক সহযোগিতা পান। এছাড়াও যারা গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজের জন্য `Plumplorise.V’ নামের একটি জার্মানভিত্তিক দাতা সংস্থা ও সহযোগীতা প্রদান করে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল সাতছড়ি বনে রাস্তার পাশের গাছগুলোতে কৃত্তিম সেতু তৈরী করে কৃত্তিম সংযোগ করে দেয়া। যাতে তারা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে। আমরা বন বিভাগের সহায়তায় সবথেকে ঝুকিপূরণ দূর্ঘটনা প্রবণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করি ব্রিজ নির্মাণের জন্য।
[৭] তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের ১লা নভেম্বরে আমাদের ব্রিজগুলো স্থাপনের কাজ শেষ হয় এবং তিন মাস অপেক্ষা করি যাতে বন্যপ্রাণীরা ব্রিজটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। প্রকল্পটির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবির বিন মুজাফফর এবং অক্সফোর্ড ব্রুক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনা নেকারিস।
[৮] অপর গবেষক মার্জান মারিয়া বলেন, আমরা তিনমাসের পরে আমাদের ব্রীজের একপাশে একটি করে ক্যামেরা ট্রাপ স্থাপন করি বন্যপ্রাণীর চলাচল পর্যবেক্ষনের জন্য। ২০২১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ক্যামেরা ট্রাপ স্থাপন করি এবং দুই সপ্তাহ পর পর ক্যামেরা ট্রাপ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও ব্রিজ রক্ষনাবেক্ষন জন্য সাতছড়ি বনে যাই। ইতোমধ্যেই আমরা আমাদের ক্যামেরা ট্রাপে বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর চলাচলের ছবি পেয়েছি। যাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বানর, হনুমান এবং বিভিন্ন ইঁদুরগোত্রীয় প্রাণী।আমাদের দেশের বনগুলোতেও যদি বনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন জায়গাগুলোতে এমন কৃত্তিম সেতু নির্মান করতে পারা যায় তবে হয়তোবা বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর মিছিল কিছুটা হলেও কমাতে পারা যাবে।