শিরোনাম
◈ পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমাইরার ময়নাতদন্তে ভয়ঙ্কর সব তথ্য ◈ অর্থের বিনিময়ে ৬ বছরের শিশুকে বিয়ে: তালেবান প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আপাতত রক্ষা! ◈ আবারও মে‌সির জোড়া গোলে ইন্টার মায়ামির জয় ◈ এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ ‘তুমি কেন ফুয়েল কেটে দিলে?’ ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের আগে পাইলটদের শেষ ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং ◈ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের জন্য সুখবর: মৃত্যু হলে লাশ দেশে পাঠাবে সরকার, ক্ষতিপূরণ মিলবে বীমার আওতায় (ভিডিও) ◈ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত: পিউ রিসার্চ ◈ বেপরোয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩ ◈ স্প‌্যা‌নিশ ক্যাবরেরাই থাক‌ছেন বাংলা‌দেশ ফুটবল দ‌লের কোচ ◈ সন্ধ‌্যায় নেপালের বিরু‌দ্ধে লড়াই‌য়ে নাম‌ছে বাংলা‌দে‌শের মে‌য়েরা

প্রকাশিত : ০৩ জুলাই, ২০২১, ০১:০২ রাত
আপডেট : ০৩ জুলাই, ২০২১, ০১:০২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আহসান হাবিব: বুদ্ধিজীবীতা প্রশ্নে

আহসান হাবিব: আমার প্রথম একটি পর্যবেক্ষণ হলো বাংলাদেশে তারাই সবচাইতে বড় বুদ্ধিজীবী যারা প্রধানত আওয়ামীলীগ বিরোধী। এই বিরোধীতার মূল নিহিত যতোটা দার্শনিক তার চেয়ে অধিক মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে। বরং শেষোক্ত কারণটিই প্রধান। মুক্তিযুদ্ধে যে সব বামপন্থি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মেনে না নিয়ে কিংবা মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে একমত না হওয়ার কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো, পরবর্তীতে তারা সেই ভূমিকা অব্যাহত রাখে। স্বাধীনতার পর সমাজতন্ত্রের নামে যে পেটিবুর্জোয়া রোমান্টিক দল আওয়ামীলীগ তথা শেখ মুজিবের বিরোধীতায় নামে এবং শেখ মুজিবের হত্যাকে ত্বরান্বিত করে, তারা তার মৃত্যুর পর ধীওে ধীরে কার্যত বিলুপ্তির দিকে যাত্রা করে। এখন তাদের কেবল ধ্বংসাবশেষ দেখি। এরা ঠিক কোন পন্থী ছিলো না- না রাশিয়া, না চীন- এদের স্লোগান ছিলো বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র অর্থাৎ সমাজতন্ত্র কায়েম করাই ছিলো তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। জাসদ নামের এই দলটি যে সমাজতন্ত্র কায়েমের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়নি, ইতিহাস তা প্রমাণ করে দিয়েছে। এই দলে কোন শ্রমিক ছিলো না, শ্রমিকের নেতৃত্ব কিংবা অংশগ্রহণ ছিলো না, ছিলো পেটিবুর্জোয়াদের একটা দঙ্গল যা প্রধানত আওয়ামীলীগ থেকেই আগত। একটা বুর্জোয়া দলেও বাম ঘরানার অনেকে থাকে, তারা প্রধানত সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী হয় এবং এরা উপযুক্ত সময়ে কম্যুনিস্টদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সমাজতান্ত্রিক লড়াইয়ে অংশগ্রহণও করে। ইতিহাসে এমন নজির আছে। জাসদ নামের দলটি এরকম কোন বামগোষ্ঠী দ্বারাও গঠিত হয়নি, হয়েছিলো নেতৃত্ব হারানোকে কেন্দ্র করে। শেখ মুজিব ছাত্রলীগের এই অংশটিকে স্বীকৃতি না দেয়ার অভিমান থেকে জাসদ নামের দলটি তৈরি হয় এবং স্বাধীনতার পর অতি অল্প সময়ের মধ্য যখন আশাভঙ্গের চিহ্ন দেখা দিচ্ছিলো- এটার পেছনে জাতীয় আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র ক্রিয়াশীল ছিলো- তখন এমন একটি দল যার স্লোগান সমাজতন্ত্র, তার পেছনে এসে জমায়েত হয় সেই সময়ের অগ্রসর চিন্তার ছাত্ররা। সারাদেশে এক অভূতপূর্ব সাড়া জাগে।

আর বামদের যে গোষ্ঠীটি চীনপন্থি ছিলো, তারা প্রকাশ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো এবং সেই বিরোধীতা স্বাধীনতার পর নানা কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে চালিয়ে আসছিলো। এই দুই শক্তির মিলিত নানা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ সেই সময় দেশকে অস্থির করে তুলেছিলো। এর সঙ্গে পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তো ছিলোই। একদিকে ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার এবং অপপ্রচার, অন্যদিকে আওয়ামীলীগের বুর্জেয়া অংশ ক্ষমতার অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তোলে। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এইসব সুযোগে পরাজিত ধর্মান্ধ এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির যোগসাজশে শেখ মুজিবকে হত্যা করে। এই হত্যার মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব বিরোধী রাজনীতির সাময়িক অবসান ঘটে এবং সমাজতন্ত্র নির্মাণের দাবিদার দলটিসহ অধিকাংশ বাম গোষ্ঠী সামরিকজান্তার পদতলে লুটিয়ে পড়ে। জাসদের কোন অংশ সামরিকজান্তার রোষানলে পড়ে এবং অনেক ষড়যন্ত্র ও হত্যার শিকার হয়। ক্রমে দলটি তার শক্তি খুইয়ে আগেই বলেছি বিলুপ্তির দিকে যাত্রা করে। এখন তারা বহুধা বিভক্ত এক একটি নাম সর্বস্ব দল হিসেবে টিকে আছে যা না থাকার নামান্তর। অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় আসে। এই দলটির মূলমন্ত্র হিসেবে সমাজতন্ত্র থাকলেও এই দলের কেউ সমাজতন্ত্রী নয়। স্বাধীনতার প্রশ্নে এই দলে সময়ের প্রগতিশীলতা ছিলো তাদের বৈশিষ্ট্য যা স্বাধীনতার পর সমাজতন্ত্র সাপেক্ষে আর প্রগতিশীলতা থাকে না। তারা ধনবাদী অর্থনীতির সমর্থক হয়ে পড়ে এবং কার্যত সমাজতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এই দলের দর্শনকে ধারণ করে যারা তাদের বুদ্ধিজীবীতা চর্চা করে, তাদেরকে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী হিসেবে ডাকা হয়। দল হিসেবে যেহেতু আওয়ামীলীগ ধনবাদী অর্থনীতির সহায়ক এবং এই দলে এখন তাদেরই আধিপত্য, ফলে উৎপাদন ব্যবস্থার চরিত্রের জন্যই দেশে বৈষম্য সৃষ্টি হতে বাধ্য। শুধু বৈষম্য নয়, নানা দুর্নীতি এবং অপরাজনীতির ফলে সুশাসন এবং আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ছে। এই সুযোগে চৈনিক বামগোষ্ঠীর বুদ্ধিজীবীরা তাদের সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা প্রসূত বক্তব্য নিয়ে সোচ্চার হয়। এই বক্তব্য শুনতে ভাল লাগে। এরা প্রকৃতি রক্ষার কথা বলে, তারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা শ্রমিকের পক্ষে কথা বলে। ফলে এইসব বুদ্ধিজীবীরা আওয়ামী বিরোধীদের কাছে নমস্য হয়ে ওঠে। অথচ তারাই মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতা করেছে, তারাই শেখ মুজিবের হত্যার পর সামরিকজান্তার বুটের নিচে নিজেদের সঁপে দিয়েছে। এবং সত্য হচ্ছে এই যে যদি আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতা হারায় এবং ক্ষমতায় আসে সেই অপশক্তি, তাহলে এইসব বুদ্ধিজীবীরা টুঁ শব্দটিও করবে না বরং তাদের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করবে। এর প্রমাণ শুধু অতীত ইতিহাস নয়, তাদের দলের খতিয়ান নিলেই বোঝা যাবে। এইসব বুদ্ধিজীবী যে সব বামদলের সমর্থক, সেইসব দল এখন পর্যন্ত শ্রমিক শ্রেণির দল হিসেবে সামান্যতমও প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই। তারা এক একটা নামসর্বস্ব পার্টি হিসেবে টিমটিম করে জ্বলছে।

তাহলে এইসব বুদ্ধিজীবীরা এতো জনপ্রিয় কেন? একটি কারণ এদের স্বাধীনতাবিরোধীরা পছন্দ করে স্বাভাবিক কারণেই আর অন্য অংশগুলি আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি এবং অপরাজনীতির জন্য। আর একটি কারণ হলো আওয়ামীলীগের এইসব অপরাজনীতি এবং নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই দলীয় বুদ্ধিজীবীরা কোন প্রতিবাদ করে না, বরং সমর্থন যোগায়। সরকার কর্তৃক নানা সুযোগ সুবিধা এরা ভোগ করে। এইসব সুবিধাবাদ মানুষকে ক্ষিপ্ত করে। এখন আমার দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণটি হলো বুদ্ধিজীবীদের প্রতি এই যে পক্ষপাত, তার পেছনে যে রাজনীতি তা না বোঝা এক করুণ কাণ্ডজ্ঞান। অর্থাৎ এরা না বোঝে সমাজতান্ত্রিক দল কিংবা বুর্জোয়া দলের দার্শনিক পার্থক্য। যদি সমাজতান্ত্রিক দর্শন বুদ্ধিজীবীতা প্রিয় হবার মানদণ্ড হতো, তাহলে সমানভাবে এই দুই পক্ষই বর্জনীয় হতো। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়