চিররঞ্জন সরকার: জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো। মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্য দিয়ে। আধুনিক সমাজে মনুষ্যত্বকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা, সমাজ-সভ্যতা, জীব-বৈচিত্র্য ও প্রাণ-প্রকৃতির জন্য অবদান রাখতে পারাই আসল কথা। এটা তথাকথিত কোনো নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের অংশ হিসেবে যেমন করা যায়, অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকেও করা যায়। আবার কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত না থেকে ব্যক্তিগতভাবেও করা যায়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পালন করা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে আমি কোনো উত্তেজনা, গর্ব-অহঙ্কার কিংবা অনুশোচনা-কিছুই বোধ করছি না। আমি যদি কাউখালি কিংবা ভুরুঙ্গামারী কলেজে লেখাপড়া করতাম, তাতেও আমার মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হতো না। আবার কেমব্রিজ, হারভার্ড কিংবা অক্সফোর্ডের শিক্ষার্থী হলেও বিরাট কিছু হয়ে যেতাম-এমনটা মনে করি না। প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠত্ব আরোপ- এটা একটা অসুস্থ ধারণা বলে আমার কাছে মনে হয়।
‘গৌরবের একশ বছর’ বলে নিজের প্রতিষ্ঠানের গুণকীর্তন করা মানেই হলো অন্য প্রতিষ্ঠানকে খাটো করে দেখা। অনেকেই এই ‘গৌরবের’ পক্ষে হাজারটা কারণ দর্শাতে পারেন। আবার ‘গৌরব’ করার বিপক্ষে আমিও অন্তত ৯৯৯টা শক্ত কারণ উল্লেখ করতে পারি। আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যা করা উচিত তা হলো, কোথায় যাওয়ার কথা ছিলো, আর কোথায় এসে ঠেকেছি, এ বিষয়ে আলোচনা করা। ‘গৌরবের একশ বছর’, ‘আমাদের অহঙ্কার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’- এ জাতীয় ফালতু আবেগে গা না ভাসিয়ে, মনুষ্যত্ব, সমাজ, প্রাণ-প্রকৃতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি কী করতে পেরেছে, আর কী করতে পারে- এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হওয়া উচিত। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :