মাসুদ আলম: [২] ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও বন্ধু অমিসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়িকা পরীমনি। সোমবার সাভার থানায় পরীমনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদকে। দুই নম্বর আসামি পরীমনির বন্ধু অমি। এছাড়া চার জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
[৩] সাভার থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, মামলায় উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির মাহমুদসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। আবাসন ব্যবসায়ী নাসির ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বিনোদন ও সংস্কৃতি)।
[৪] পরীমনির মামা আশরাফুল ইসলাম বলেন, পরীমনি অসুস্থ। তার জ্বর ও বুকে ব্যথা। গলার স্বরও ভেঙে গেছে।
[৫] মামলার এজাহারে পরীমনি বলেন, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টায় তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িযোগে তারা উত্তরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথে অমি বলে বেড়িবাঁধস্থ ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করান। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনও এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর তোমরা নামলে নামতে পারো।
[৬] এজাহারে পরীমনি আরও বলেন, তখন আমার ছোটবোন বনি প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট হতে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদেরকে ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদ্যপানের জন্য জোর করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।
[৭] এজাহারে বলা হয়েছে, এক নম্বর আসামি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সে উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুঁড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে নীলাফোলা জখম করে। আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে গেলে আমার ফোনটি টান মেরে ফেলে দেওয়া হয়। এসময় দুই নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চার জন এক নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহযোগিতা করে। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারবো।
[৮] এজাহারে তিনি আরও বলেন, দুই নম্বর আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে আমাকে বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায়। সে অজ্ঞাতনামা চার জন আসামি ও নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত আনুমানিক তিনটার সময় আমি আমার গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় অপর সঙ্গীদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসি।
[৯] বনানী থানার ওসি নুরে আজম বলেন, পরীমনির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তার বাসা ও আশেপাশে এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরীমনির বাসার সামনের রাস্তার অংশে যান চলাচল ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া পরীমনির বাসার এলাকায় যারাই প্রবেশ করছেন, তাদের সন্দেহজনক মনে হলে তল্লাশি করছে পুলিশ।