ফরহাদ টিটো : তিনি জাতিকে স্বপ্ন দেখান, গর্বিত করেন, আনন্দে ভাসান। তিনিই আবার দুঃখ দেন অভাবিত। সুন্দর হাসির মানুষটা হাসি কেড়ে নেন সমর্থকদের। তারকা হলে বিতর্ক হবেই তাকে নিয়ে। বড় তারকা হলে তো কথাই নেই। সাকিব বড়দের কাতারে। বিশ্বসেরাদের ব্র্যাকেটে। তবু বিতর্কটা একটু বেশিই বুঝি তার ক্যারিয়ারে। হতে পারে বিসিবির অতি কড়াকড়ি, হতে পারে মিডিয়ার বাড়াবাড়ি তাকে বাড়তি দুর্নামের শিকার বানিয়েছে কিছুবার। এ-ও তো ঠিক, আরো কিছুবার পার পেয়ে গেছেন তিনি গুরু পাপে লঘু সাজা পেয়ে। সাকিবকে নিয়ে অনর্থক সমালোচনা-নিন্দা হয় অনেক সময়। তাকে নিয়ে যুক্তিসঙ্গত সমালোচনাও তো হয় প্রায় সময়। সাকিবের অনেক গুণের মধ্যে বড় ব্যর্থতা জাতির মন পড়তে না পারা। তাকে খেলার বাইরে, মাঠের বাইরে যেভাবে দেখতে চায় দেশ...তিনি সেভাবে দেখাতে পারেন না নিজেকে। জানি, তার ব্যক্তিজীবনের সিদ্ধান্তের মালিক তিনি নিজেই। কী করবো? কী করবো না?
কোথায় যাবো-যাবো না?-এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা তার নিজেরই সবার আগে। তবু আমজনতা নাক গলায় তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। ‘কাজটা ঠিক করলেন না সাকিব আল হাসান’ বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মানুষ। অভিযোগ রূপান্তরিত হয় ক্ষোভে। সবাই বুঝি নিজের চাওয়ার মতোই সাকিবকে দেখতে চায় লাল-সবুজের ছায়ায়। আমাদের দেশে, আমাদের সমাজে প্রকৃত হিরো খুব কম। অথবা নেই’র খুব কাছাকাছি। দুয়েকজন যারা আছেন তারা নোংরা রাজনৈতিক বিভক্তিতে পড়ে সারাজাতির নায়ক হয়ে ওঠতে পারেন না। সাকিব সেই খুব ব্যতিক্রমীদের একজন যিনি সারা দেশের নায়ক, বাইরের দুনিয়ায় জাতীয় পতাকার সবল প্রতিনিধি। সাকিব আল হাসান মাঝেমধ্যে তা ভুলে যান আমার বিশ্বাস। ভুলটা তখনই করে ফেলেন। সেই ভুলের মাশুল তিনি একা দেন না। বিষাদে অথবা অবিশ্বাসে ছেয়ে যায় কোটি মানুষের মন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখো তরুণের অন্ধ ভালোবাসা। সাকিব আল হাসানকে শুধু ক্রিকেটার হিসেবে দেখে না বাংলাদেশ। দৈনন্দিন জীবনে জড়িয়ে যাওয়া ভালো লাগার অংশ হয়ে গেছেন তিনি বাঙালির- সেই কবে থেকে!
সাকিবকে সহ্য করতে পারেন না এমন মানুষও খুব কম নেই এখন বাংলাদেশ। এর ঐতিহাসিক কারণও কিন্তু তার প্রতি, তার খেলার প্রতি ভালোবাসা। সেই ভালোবাসাই এক সময় ঘৃনার কাছে নিয়ে গেছে মানুষগুলিকে যৌক্তিক অথবা অযৌক্তিক কারণে। এই বিদ্বেষ চিরস্থায়ী না। গত বিশ্বকাপে এই মানুষগুলি সাকিবকে আবার ভালোবেসে ফেলেছিলেন নিশ্চিত! সাকিব হয়তো আর বেশি বছর দেশের জার্সি পরে খেলবেন না। জাগতিক নিয়মে তিনিও হারিয়ে যাবেন বাইশ গজ থেকে। তবু তিনি থেকে যাবেন যুগ যুগ.. আমাদের আনন্দস্মৃতি হয়ে, কখনো অভিযোগের উপলক্ষ্য হয়ে। তিনি থেকে যাবেন ‘আমাদের দেশে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার জন্ম নিয়েছিলেন’- এই গৌরবের পথিকৃৎ হয়ে।
ফেসবুক থেকে