শিরোনাম
◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের

প্রকাশিত : ০৪ জুন, ২০২১, ০৩:২৮ রাত
আপডেট : ০৪ জুন, ২০২১, ০৩:২৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হৃদয়ের ‘টিকটক’ ফাঁদ, নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন তরুণী

নিউজ ডেস্ক: কুষ্টিয়ায় মোবাইল অ্যাপ টিকটক ব্যবহারকারীদের একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলে তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সাতক্ষীরায়। সীমান্ত এলাকায় টিকটকের ভিডিও করার কথা বলে কৌশলে ভারতে নিয়ে প্রথমে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু শহরে। সেখানে বিভিন্ন হোটেল ও ম্যাসেজ পার্লারে নারী পাচার সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাকে অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করে। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রেমের অভিনয় ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীকে নিয়ে গিয়েছিল টিকটক হৃদয়। প্রায় আড়াই মাস পর ভারত থেকে পালিয়ে এসে পাচার হওয়ার বিস্তারিত উল্লেখ করে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন ওই তরুণী। বাংলাট্রিবিউন

পুলিশ জানিয়েছে, পাচার হওয়া ওই তরুণী ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। আসামিরা হলো রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, আনিস, আব্দুল কাদের, মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন, হারুন, বকুল ওরফে ছোট খোকন, সবুজ, রুবেল ওরফে রাহুল, সোনিয়া, আকিল ও ডালিম। এছাড়া অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন।

পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় আমরা সাতক্ষীরা থেকে মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। একইসঙ্গে তাদের অপর সহযোগীদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নারী পাচারকারী ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভারত-বাংলাদেশে যৌথভাবে কাজ করে। আসামিদের মধ্যে পাঁচ জন বাংলাদেশি, বাকিরা ভারতীয়। আমরা ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতীয় নাগরিকদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

এদিকে, ভারত থেকে পালিয়ে আসা ওই তরুণী মামলার এজাহারে তার পাচার হওয়ার লোমহর্ষক ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তরুণী জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের প্রথম দিকে হাতিরঝিলে এক বান্ধবীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মেয়েটি প্রথমে বসুন্ধরা ও পরে মৌচাক মার্কেটে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতো। করোনা মহামারির সময়ে চাকরি চলে গেলে সে হৃদয়কে একটি চাকরি জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করে। একই সঙ্গে মেয়েটি নিজেও ‘টিকটক ভিডিও’র মাধ্যমে অর্থ আয়ের পথ খুঁজতে থাকে।

ওই তরুণী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে সে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের দুটি পার্কে টিকটক ব্যবহারকারীদের মিলনমেলায় অংশ নেয়। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি টিকটক হৃদয় ওই তরুণীকে কুষ্টিয়ায় আরেকটি মিলনমেলায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে এক রাত অবস্থান করার পর আরেক তরুণীসহ নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় ভিডিও করার কথা বলে ওপারে নিয়ে যায় তাকে। সীমান্তের ওপারে কয়েক দিন আটকে রেখে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে হৃদয় ও তার সহযোগীরা। পরে তাদের বিমানে বেঙ্গালুরু নিয়ে যাওয়া হয়।

ওই তরুণী জানান, বেঙ্গালুরুতে গিয়ে তিনি আরও কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণীকে দেখতে পান। সেখানে তাদের আবারও ধর্ষণ করা হয়। বেঙ্গালুরুর আনন্দপুরার একটি বাসায় আটকে রেখে তাদের আবাসিক হোটেল ও বিভিন্ন ম্যাসেজ পার্লারে পাঠিয়ে অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করে তারা।

তরুণী জানান, তার সঙ্গে থাকা এক বাংলাদেশি তরুণীকে প্রথমে একটি হোটেলে পাঠানো হলে খুব কান্নাকাটি ও আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। কয়েক দিন পর তাকেও একটি হোটেলে পাঠানোর কথা বললে তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে হৃদয়সহ অন্য আসামিরা তাকে মারধর, ধর্ষণ ও নগ্ন ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠানোর কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করে। একপর্যায়ে তাকে চেন্নাইয়ের ওহিও হোটেলে পাঠায় তারা। সেখানে অনেকে তাকে ধর্ষণ করে।

ওই তরুণী বলেন, ‘এভাবে পাঁচদিন যাওয়ার পর আমি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে হৃদয় ও সবুজ আমাকে হোটেল থেকে আনন্দপুরার আগের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে আরও কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণীকে দেখি।’

এজাহারে ওই তরুণী আরও উল্লেখ করেন, কয়েক দিন পর তাকে একটি ম্যাসেজ পার্লারে পাঠানো হয়। কিন্তু দুদিন পর প্রচণ্ড রক্তপাত শুরু হলে আবারও আরেকটি বাসায় নিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়। পরে তাকে পাঠানো হয় আরেকটি হোটেলে। সেখানে একদিন থাকার পর পালিয়ে কলকাতা হয়ে অন্য একজনের সহায়তায় ৭ মে দেশে ফেরেন বলে জানান ওই তরুণী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়