শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ২৪ মে, ২০২১, ০৪:৩৩ সকাল
আপডেট : ২৪ মে, ২০২১, ০৪:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল): আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতায় জুলিও-কুরি শেখ মুজিব

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল): নিজের জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী অর্জনটি ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। বঙ্গবন্ধুর যে বিশালত্ব তা কোনো পদকের মাপকাঠিতে মাপার চেষ্টা বাতুলতা মাত্র। তারপরও একটি পদকের কথা ঘুরে-ফিরেই চলে আসে। আশির দশকের শেষের দিকে আর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের করিডোরে ‘জুলিও কুরি শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’ শ্লোগানে যে কতো সহস্রবার গলা ফাটিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু সেদিন বুঝিনি এই শ্লোগানটির গভীরতা।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ঢাকায় একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর হাতে এই পদকটি তুলে দিয়েছিলেন। একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ এবং তারও আগে জেল-জুলুম আর দমন-পীড়নের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আর বিশ্বব্যাপী শোষিতের পক্ষে তার উচ্চকিত অবস্থানের স্বীকৃতি ছিল বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি পদক’ প্রদান। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই নেতা যিনি ঘোষণা করেছিলেন শোষক আর শোষিতের মাঝে দ্বিখণ্ডিত এই পৃথিবীতে তার এই অবস্থান শোষিতের পক্ষে। তিনি জীবন দিয়েছেন সপরিবারে, কিন্তু তার ঘোষিত অবস্থান থেকে সরে আসেননি একচুলও।

আজকের এই দিনে মধ্যবয়সী আমার পক্ষে আবারও রাজপথে নেমে ‘জুলিও কুরি শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’ শ্লোগানে উচ্চকিত হওয়াটা বেমানান। আজকের বাংলাদেশ, তার বর্তমান প্রেক্ষাপট কিংবা আমার পেশাগত অবস্থান- এর কোনো কিছুর সঙ্গেই সেটা খুব ভালোভাবে যায় না। কিন্তু আজকে বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্তির এই দিনে খুব বেশি করে মনে হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু, আবার আসিতে যদি!’

এবারও বাংলাদেশে টানা দুবছর ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। অকাল কোনো বন্যায় ক্ষতি হয়নি ফসলের একটি দানারও। এবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে বিশাল সব হার্ভেস্টার মেশিন ফসলের মাঠ থেকে কেটে সাবাড় করেছে সব ধান। ধান কেটেছে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কে না? এবারও এসেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রণোদনা। তাকে যে শুধু শুধুই ‘মমতাময়ী মা’ বলা হয় না তার প্রমাণ দিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরও একবার। মসজিদের ইমাম থেকে মাদ্রাসার শিক্ষক, গার্মেন্টস থেকে পরিবহন শ্রমিক কিংবা নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত- কেউ বাদ যায়নি তার এই প্রণোদনা থেকে। কিন্তু তারপরও কেন যেন একদল লোকের ক্ষিধা কিছুতেই মিটছে না। আজকের বাংলাদেশ জিন্দাবাদের আর সিন্দাবাদের বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে অনেক এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সামনে বাকি আছে আরো অনেকটা পথ। আমি জানিনা শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আমার জীবদ্দশায় আমি দেখে যেতে পারবো কিনা, কিন্তু আমি সত্যি সত্যিই করোনা-উত্তর বাংলাদেশটাকে শতভাগ ‘এইসব ক্ষুধার্ত’ মানুষ মুক্ত দেখতে চাই।

২০১৩ সালে একবার আর তারপর ২০১৫ সালে আবারও এদেশটা পরপর দু-দু’বার লকডাউনে গিয়েছিল। তখন সরকার শত চেষ্টায়ও চালু রাখতে পারেননি কল-কারখানা, খোলাতে পারেননি শপিং মলও। রাস্তায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নামানোর দাবি তোলেননি সেদিন কেউই। পুলিশ প্রহরায় মহাসড়কে পণ্যবাহী কনভয় সচল রাখতে সরকারের নাভিশ্বাস উঠেছিল তখন। অথচ তখন বাংলাদেশের বাইরে পৃথিবীতে আর কোথাও কোনো লক-ডাউন ছিলো না। এদেশের বাইরে সেদিন কোথাও আগুনে পুড়ে মরেনি একজন মানুষও, কোথাও পেট্রোল বোমায় ভস্ম হয়নি একটি রেলগাড়িও। সেদিন কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষাধিক কোটি টাকার প্রণোদনা দিতে হয়নি। সেদিন যদি ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ ছাড়িয়ে যেয়ে থাকতে পারে, তবে আজ কেন ‘অর্থনীতি ওই মুখ থুবড়ে পড়লো বলে’ আমাদের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ থেকে বের করে আনা রেডিমেড রূপকথার গল্প শোনানো?

বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশে ধর্মান্ধতা আর সাম্প্রদায়িকতা থাকার কথা ছিল না। একাত্তরের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে যেয়েই পঁচাত্তরে প্রাণ দিতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। মেনে নিচ্ছি তার পর থেকে বাংলাদেশ ক্রমাগত ছুটেছে পেছনে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বছরের পর বছর দেদারসে চলেছে ‘অন্ধত্ববাদের’ চর্চা। কিন্তু এখনতো রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে মানুষের আস্থায় আমরা। তাহলে কেন এখনও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ছুড়ে ফেলার হুমকি আর হেফাজতের থাবায় ছিন্নভিন্ন অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যক্রম?

বাঁশের চেয়ে বড় কঞ্চি আর সীমাহিন যুক্তিহীনতার এই করোনাকালে ‘জুলিও কুরি শেখ মুজিব’-এর শূন্যতা তাই বড় বেশি অনুভূত হয়। বড়বেশি ‘চাই চাই আর খাই খাই’-এর এই সময়টায় হতাশায় ডুবতে বসে আবারো আশায় বুক বাঁধার শক্তি পাই। বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু মাথার উপর ছায়া হয়েতো আছেন তারই কন্যা। আমাদের শক্তিটা সেখানেই। সে কারণেই বিশ^াস করতে চাই আগামী বছর এই দিনে আবার যখন শোষিতের মুক্তির দিশারী ‘জুলিও কুরি শেখ মুজিবের’ স্মরণে আরো কোন পত্রিকায় কোভিডমুক্ত বাংলাদেশে আরেকটি কলাম লিখতে বসবো, সেদিনের সেই বাংলাদেশে ‘চাই চাই আর খাই খাই’ এই লোকগুলোর সংখ্যা আজকের চেয়ে কিছুটা হলেও কম হবে।

লেখক : চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়