শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২১, ০৪:২২ সকাল
আপডেট : ২৩ মে, ২০২১, ০৪:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ওয়ালি-উর রেহমান: জুলিও-কুরি পদকপ্রাপ্তি, বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধুর স্বীকৃতি

ওয়ালি-উর রেহমান: বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, গণতন্ত্র, শান্তি আন্দোলনের পুরোধা, ও স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত করে। মেরি কুরি ও পিয়েরে কুরি ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী। বিশ্বশান্তির সংগ্রামে এই বিজ্ঞানী দম্পতির অবদান চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৫০ সাল থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে ও মানবতার কল্যাণে শান্তির স্বপক্ষে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তি ও সংগঠনকে ‘জুলিও কুরি’ পদক প্রদান করে থাকে। বিশ্বশান্তি পরিষদ মনে করে বিশ্বের শান্তি আন্দোলনের জন্য, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদান অনস্বীকার্য। যখন বঙ্গবন্ধুকে এ পুরস্কার দেওয়া হয় তাদের প্রত্যাশা ছিল বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের বন্ধু নন, তিনি আজ থেকে শুধু বাংলাদেশের বন্ধু নন, সারা বিশ্বের মানুষের বন্ধু।

পাকিস্তান রাষ্ট্রটি গঠন হওয়ার পর থেকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের ওপর অন্যায়, নির্যাতন-নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু প্রথম থেকেই মেনে নিতে পারেনি। প্রথম আঘাত যখন আসে ভাষার ওপর তখনই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে তিনি ১৯৪৮ সালেই পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রথম রুখে দাঁড়ান। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয়-দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে বিজয়।

মূলত বাঙালি জাতি নিষ্পেষিত ছিল বহু আগে থেকেই। ব্রিটিশ শাসন, পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব কোনো কালেই বাঙালি জাতি তাঁর স্বাধীন চিন্তা ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেনি। সমস্যা ছিল নেতৃত্বের সংকট। কেউ সামনে থেকে নেতৃত্বে দিয়ে জাতীয় সংকটের সমাধান করতে পারে নি। নিষ্পেষণের ইতিহাসের ক্রান্তিকাল রচনা হয় বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে। এভাবেই ধারাবাহিক আন্দোলনের পরই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চের ভাষণই মূলত স্বাধীনতার ঘোষণা। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তিনি বলেছিলেন, ‘এটাই আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’

বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: শেখ মুজিবুর রহমান- ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির মাধ্যমে যিনি হয়ে উঠেছিলেন জনগণের অবিসংবাদিত নেতা। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’এর অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি শুধু বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকেই সম্মান এনে দেয়নি, সমগ্র দেশ ও জাতিকেও সম্মান এনে দিয়েছে। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। এই ভাষণ ছিল পৃথিবীর শেষ্ঠ ভাষণের মধ্যে একটি।

দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭২ সালের ৮ জানয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়- এই মতবাদে পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি যে অর্থ ব্যয় করে মানুষ মারার অস্ত্র তৈরি করছে, সেই অর্থ গরিব দেশগুলোকে সাহায্য দিলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে।’

১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র-জনতা কৃতজ্ঞচিত্তে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর পৃথিবীর ১৪০টি দেশের শান্তি পরিষদের ২০০ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদক দেওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯৭৩ সালের ২৩ মে ঢাকায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রতিনিধিরা যোগদান করেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের উন্মুক্ত প্লাজায় বিশ্ব শান্তি পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশ্ব শান্তি পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পদক প্রদান করেন এবং বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।’ সেদিন থেকেই বাঙালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত বিশ্ববন্ধু শেখ মুজিব।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববন্ধু সম্মান পেয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এ সম্মান কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়। এ সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরসেনানীদের। জুলিও কুরি শান্তি পদক সমগ্র বাঙালি জাতির।’

বিশ্বের শান্তির জন্য সর্বোচ্চ পদক হলো ‘জুলিও কুরি’ পদক। বিশ্বের বরেণ্য ব্যক্তিগণই এ পুরস্কার পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও এ বিরল সম্মান অর্জন করেছেন কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিডেল ক্যাস্ট্রো, ভিয়েতনামের জাতীয় নেতা হো চি মিন, প্যালেস্টাইন নেতা ইয়াসির আরাফাত, চিলির প্রেসিডেন্ট সালভেদর আলেন্দে, সাউথ আফ্রিকার নেতা ও প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মাদার তেরেসা, কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও  মার্কিন বর্ণবাদবিরোধি নেতা মার্টিন লুথার কিং ।

বঙ্গবন্ধু জীবনের ব্রত ছিল একটাই আর তা হল নিজের জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি আজীবন বিশ্বস্ত থেকে হাজার বছরের পরাধীনতার গ্লানি থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করা।হাজার বছরের পরাধিনতায়, স্বাধীনতা যে কী- বাঙালিদের সেই বোধ হারিয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুই সেই মহাপুরুষ যিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করিয়ে দিলেন। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই তার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে তারই সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।   লেখক ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়