অপূর্ব চৌধুরী: [২] করোনার প্রকোপে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ। দীর্ঘ এই অবসরের মাঝে অনলাইন ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। মহামারির মাঝে নিজস্ব প্রতিভা কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হবার শুরুটা মসৃণ না হলেও ব্যাপক চেষ্টা ও পরিশ্রমে এখন অনেকটাই সফল এসব শিক্ষার্থীরা। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজনে জমজমাট হয়ে উঠেছে তাদের অনলাইন ব্যবসা।
[৩] এসব অনলাইন ব্যবসার মধ্যে রয়েছে দেশীয় শাড়ি, পাঞ্জাবি, সিল্ক সুতার চুড়ি ও গহনা বিক্রি।এছাড়াও অনেকে হ্যান্ডমেইড গহনার পাশাপাশি ছোট ছেলেমেয়েদের পোশাকও বিক্রি করছে।ঈদ উপলক্ষে এসব উদ্যোক্তারা তাদের নিজ নিজ ব্যবসায় ডিসকাউন্ট, ফ্রী ডেলিভারি চার্জ,নতুন ডিজাইনের হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ি,ডিজাইনে নতুনত্ব আনা সহ বিশেষ আয়োজন করেছে।
[৪] তাদের এই বিশেষ আয়োজনে আগ্রহী হয়ে ক্রেতারা আশানুরূপ সাড়া দেওয়ায় সার্বিকভাবে বেড়েছে বিক্রির পরিমাণ।তবে চলমান লকডাউনের ফলে এসব শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যবসার কাচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও অনেকটা বিড়ম্বনায়ও পড়েছে।
[৫] জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাহারা জাহান স্নিগ্ধা অনলাইন ব্যবসা করেন ক্রাফটস, দেশীয় শাড়ি ও খাদি পাঞ্জাবি নিয়ে। ঈদের আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, গতবছরের ২আগষ্ট থেকে আমার অনলাইন বিজনেসের যাত্রা শুরু হয়। বিজনেস শুরু করার পর এবারই প্রথম ঈদ আসছে। আর ঈদ উপলক্ষে আমার পেজ Dream House-এ ছিল বেশ কিছু অফার যেমন: ঢাকার ভেতর ফ্রী ডেলিভারি চার্জ, ডিসকাউন্ট ইত্যাদি। অফার দেয়ার পর লকডাউনে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া সবচেয়ে বড় সমস্যা থাকলেও কিছু এজেন্সির মাধ্যমে সেটি করিয়েছি।তবে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি এবং ঈদ উপলক্ষে সেলও অনেক হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
[৬] অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেশীয় শাড়ি,পাঞ্জাবি ও হ্যান্ডমেইড গহণা নিয়ে ব্যবসা করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাবিউল হাসান। তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে এবার ঈদে চেয়েছি সবাই যেন অনলাইনে প্রোডাক্ট কিনতে আগ্রহী হন। প্রতিটি পণ্যের ডিটেইলস ছবি ও বর্ণণা করার চেষ্টা করেছি যাতে কাস্টমারদের মধ্যে কোনো কনফিউশন না থাকে। সেই সাথে দামটাও হাতের নাগালে রাখার যথাযথ চেষ্টা করেছি।লকডাউনের কারণে আমার ব্যবসায় প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। সময়টা অনিশ্চিত ছিল বিধায় ঈদ উপলক্ষে আমি অনেক বড় উদ্যোগ নেওয়ার সাহস পাইনি। কিন্তু ঈদ আয়োজনে যতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভাল সাড়া পেয়েছি। সবাই আমার পণ্য অনেক পছন্দ করেছে।
[৭] গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম অর্নি সিল্ক সুতার চুড়ি ও গহনা নিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা শুরু করেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ঈদের বিশেষ আয়োজন সম্পর্কে জারিন তাসনিম বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমার ব্যাবসায় নতুন মোড় এসেছে।বিভিন্ন নতুন ডিজাইনের হ্যান্ড পেইন্টেড কাঠ ব্লকের শাড়ি এনেছি যেগুলো আমার নিজস্ব ডিজাইন। আর এই নতুনত্ব আনার ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে এক লাখ টাকার সেল করেছি। তবে লকডাউনের জন্য টাঙ্গাইল থেকে শাড়ি আসা আটকে যাওয়া, কুরিয়ারের গাড়ি অনেক দেরি করে নির্দিষ্ট স্থানে প্রোডাক্ট পৌঁছানো সহ বেশ কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
[৮] ছোট বাচ্চা ও ছেলে মেয়েদের পোশাক নিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অপর এক শিক্ষার্থী উম্মে রাহনুমা রাদিয়া। রাদিয়া জানায়, ঈদ উপলক্ষে বর্তমানে বহুল প্রচলিত যেসব পোশাক সেগুলো স্টক করেছিলাম।কিন্তু লকডাউনের জন্য যাতায়াত ও পরিবহন খরচ সামান্য বেড়ে গিয়েছে। তারপরও লকডাউনে দোকান পাট বন্ধ থাকায় ক্রেতারা অনলাইন কেনাকাটায় ঝুঁকে পড়ে। যার জন্য অনলাইন বিজনেসে অনেক বেশি সাড়া পাওয়া গিয়েছে।সাড়া ভালো পেয়েছি বলে খরচ বৃদ্ধিটা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। আশানুরূপ বিক্রি এবং লাভ হয়েছে।
[৯] এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক উদ্যোক্তা শিক্ষার্থী ঈদ উপলক্ষে তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যবসায় বিশেষ অফার ও আয়োজন রেখেছেন ক্রেতাদের জন্য।
আপনার মতামত লিখুন :