মারুফ কামাল খান: জগতের এক সেরা ধনী আমেরিকার বিল গেটস। পুঁজি, পুঁজিপতি, কর্পোরেট কালচার, প্রযুক্তি বাণিজ্য, তাদের শোষণ-বঞ্চনা এবং মানবিক অনুভূতি ও প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে ছাঁচেঢালা যান্ত্রিক এক রোবোটিক বিশ্বব্যবস্থা প্রবর্তনে তাদের ভূমিকা নিয়ে এন্তার বিতর্ক আছে। তা সত্বেও তাদের মতন লোকেদের নিয়ে মানুষের কৌতূহল ও আগ্রহের শেষ নেই। সাতাশ বছরের দাম্পত্য জীবনযাপনের পর স্ত্রী মেলিন্ডার সঙ্গে তার বিয়ে ভাঙার ঘটনার পর বিল-বিষয়ক আলোচনা এখন তুঙ্গে। প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন তারা। বিল গেটসের সঙ্গে এক অফিসিয়াল ডিনারে পরিচয় হয়েছিল মেলিন্ডার। তিনি তখন মাইক্রোসফট-এ চাকরি করতেন। অনেক ধনী হলেও তারা জীবনে একাধিক প্রেম করেননি। বিয়ের বাইরে আর কারো সঙ্গে সম্পর্কেও জড়াননি কখনো। কোনো স্ক্যান্ডালও নেই তাদের জীবনে। ডিভোর্স হলেও তারা দু'জনে তাদের জনহিতকর সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনে একত্রে কাজ করে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিল গেটসকে নিয়ে আরো কিছু মজাদার তথ্য দিই। তিনি কালার-ব্লাইন্ড। বিল গেটস-এর চোখ খারাপ। তিনি সবকিছুই সাদা-কালো দেখেন। এ ছাড়া আর কোনো রঙ চিনতে পারেন না। অর্থাৎ জগতের সকল রঙ থেকে তিনি বঞ্চিত। তার চোখে সব রঙই কালো। প্রচুর বই পড়ার নেশা তার। বছরে অন্তত ৫০টি নতুন বই তার পড়া চাই-ই। অর্থাৎ প্রায় প্রতি সপ্তাহেই একখানা করে নতুন বই পড়ে শেষ করেন এই ধনকুবের। দুনিয়াজোড়া তার ব্যবসা ও কর্মক্ষেত্র। কাজের স্বার্থে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত তাকে ছুটতে হয়। কতো বর্ণ, গোত্র, জাতির বিচিত্র ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে তার কায়কারবার, লেনদেন।
মানব-উদ্ভাবিত যন্ত্র কম্পিউটারের প্রায় সব ভাষাই তার নখদর্পণে। কিন্তু মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ ও ভাবের আদান প্রদানের যতো ভাষা আছে তার মাত্র একটাই জানেন বিল গেটস। সেটা ইংরেজি। দ্বিতীয় আর কোনো ভাষা তার জানা নেই। ইতালির রেনেসাঁ চিত্রশিল্পী ও উদ্ভাবক লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিকে তার নিজের জন্য অনুপ্রেরণার অন্যতম প্রধান উৎস বলে মনে করেন বিল গেটস। দ্য ভিঞ্চির বিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখাজোকার সংগ্রহ কিনতে ১৯৯৪ সালে বিল প্রায় ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খর্চা করেন। বিল গেটসের মালিকানাধীন সম্পদের পরিমাণ ১৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। কিন্তু তার তিন সন্তানের কেউই উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার সম্পত্তি থেকে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পাবে না। বিল বলেন, সন্তানদেরকে মাত্রাতিরিক্ত সম্পদের মালিক করলেই সেটা তাদের প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শন করা হয় না। বিল গেটসের মৃত্যু পর্যন্ত তার স্ত্রী হিসেবে থাকলে মেলিন্ডাও ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেতেন স্বামীর সম্পদ থেকে। ডিভোর্স হবার কারণে তিনি এখন বিলের পুরো সম্পদের অর্ধেকের অর্থাৎ প্রায় ৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিকারী হবেন। খুব সুশৃংখল জীবনযাপন করেন বিল গেটস। ঘড়ির কাঁটা মেপে চলে তার জীবন। প্রতিটি মিনিটের শেডিউল বা কার্যসূচি থাকে পূর্বনির্ধারিত।
অনেকটাই মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতন। এমন ব্যস্ততম জীবনেও তিনি অল্প একটু সময় বের করে নেন খেলাধুলা করা ও গান শোনার জন্য। নিজেকে সেক্যুলার হিউম্যানিস্ট বা ইহজাগতিক মানবতাবাদী বলে পরিচিত করলেও বিল গেটস বলেছেন, তিনি একজন ধার্মিক। তার সন্তানেরা গড়ে উঠেছে ক্যাথলিক খ্রিস্টান হিসেবে। বিল বলেছেন, খোদায় বিশ্বাস রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মানবতার সেবায় দুনিয়াব্যাপী বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পরেও বিল গেটস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি মৃত্যুর আগে তার সমুদয় সম্পদের অন্ততঃ অর্ধেকটা দান করে যাবেন মানব-কল্যাণে। দু’বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে হার্ভার্ড থেকে ড্রপ আউট হয়েছিলেন বিল গেটস। এ ঘটনা তার জীবনে সাফল্যের চূড়ায় ওঠা আটকাতে পারেনি। সেই হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিই ২০০৭ সালে তাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেয়। একইভাবে এই কম্পিউটার উইজার্ডকে সম্মানিত করে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ, চীনের সিংহুয়া ও জাপানের ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি। বিল গেটস বৃটেনের রাণীর অনারারী নাইটহুড পেয়ে স্যর খেতাবে ভূষিত হওয়া ছাড়াও দেশ-বিদেশের অগণিত পদক, ভূষণ ও খেতাব লাভ করেছেন।
মানবকল্যাণ সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে সময় দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিল গেটস তার কোম্পানি মাইক্রোসফট-এর প্রধান নির্বাহী বা সিইও-র পদ থেকে সরে দাঁড়ান ২০০৬ সালে। তবে তিনি এখনো কোম্পানির সিইও-র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রযুক্তি বাণিজ্যের আরেক জায়ান্ট অ্যাপল-এর স্টিভ জবস-এর সঙ্গে একসময় খুব অন্তরঙ্গতা থাকলেও ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার পর তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফেসবুক থেকে