শিরোনাম
◈ ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে ডিসি-ইউএনওদের বাদ দিয়ে করা থাকবে? ◈ ‘ভারতীয় সফটওয়্যার’ ইরানে হামলার নেপথ্যে, আতঙ্কে মুসলিম বিশ্ব ◈ সারজিস-হাসনাতকে শতবার কল করলেও রিসিভ করেন না: শহীদ জাহিদের মায়ের অভিযোগ ◈ ৭ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা, নদীবন্দরে সতর্কতা জারি, ঝড়ের শঙ্কা ◈ ফ্রা‌ন্সের লিও শহ‌রের কসাই থেকে গাজার কসাই: ইতিহাসে বারবার অপরাধীদের বাঁচিয়েছে আমেরিকা ◈ রিজার্ভে বড় সাফল্য: আইএমএফের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ, প্রবাসী আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি! ◈ আদানির বকেয়ার সব টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ◈ মাঠে ছড়িয়ে থাকা লেবু ও  ডিম দে‌খে ম্যাচ খেলতে আসা ‌ক্রিকেটাররা ভয়ে পালালেন ◈ ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আপত্তি মোদি সরকারের! ◈ উনি ক্লাসে বাজে ঈঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার পাশাপাশি বডি শেমিং করেন

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ০২:৩৯ দুপুর
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ০৪:৫৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মো. আসাদুল্লাহ: বোরো ধানের ‘হিটশক’ পরবর্তী পর্যালোচনা

মো. আসাদুল্লাহ: ‘হিট শক’ জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত অভিঘাত। দেশে এবার তার কিছুটা প্রভাব পড়েছে। গত ৪ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিহীন ঝড়ো বাতাসের সাথে তীব্র তাপদাহ (heat wave) বয়ে যায়। হটাৎ করে বয়ে যাওয়া অনাকাঙ্খিত এই তাপ প্রবাহ ‘হিট শক’ নামে পরিচিত। এর ফলে যে সব এলাকার উপর দিয়ে এই তাপদাহ বয়ে গেছে এবং জমির ধান ফুল ফোটা পর্যায়ে ছিল সে সব এলাকায় ধানের শীষ শুকিয়ে যায়। দীর্ঘদিনের বৃষ্টিহীন উচ্চ তাপপ্রবাহ এই হিটশকের কারণ। এর পরপরই ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কোথাও কোথাও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায় এবং শিলাবৃষ্টি হয়। প্রথমে মনে হয়েছিল এই হিটশক, ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায় ও শিলাবৃষ্টিতে হয়তো ক্ষতির পরিমান অনেক হবে। যার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ক্ষতি ও এর কারণ নিরুপনে করোনা দুর্যোগের মধ্যেও মাঠে নেমে পড়ে। দিনরাত কৃষি বিজ্ঞানী এবং সম্প্রসারণবিদগন মাঠে থেকে ক্ষতির পরিমান নিরুপনের চেষ্টা করেছে। এ দূর্যোগে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা, গোপালগঞ্জ এবং ময়মনসিংহসহ দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু তার পরিমান মোট লক্ষমাত্রার তুলনায় খুব বেশি নয়।

গত আমনে উপর্যুপুরি বন্যায় ধানের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে নিতে বোরোর উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সে মোতাবেক বোরোর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার আহবান জানান মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। চলতি বোরো মওসুমে ধানের আবাদ আগের বছরের চেয়ে ৫০ হাজার হেক্টর বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি।

এ বছর (২০২০-২১) বোরো ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪৮.০৫২ লক্ষ হেক্টর (গত বছর থেকে ৫০ হাজার হেক্টর বেশি)। কিন্তু সরকারের দেয়া প্রণোদনা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের প্রেরণামূলক কর্মকান্ডের জন্য লক্ষমাত্রার বিপরীতে অর্জন দাড়ায় ৪৮.৮৩৮ লক্ষ হেক্টর (৭৮৬০০ হেক্টর বা ১.৬৪ শতাংশ বেশি)। এখানে আরও উল্লেখ যে, গত বছর হাইব্রিড ধান চাষের অর্জিত জমির পরিমান ছিল ৯.০৪৬ লক্ষ হেক্টর; বিপরীতে এ বছর অর্জিত হয় ১২.১৩৪ লক্ষ হেক্টর (৩.২৭৪ লক্ষ হেক্টর বা ৩৬.৯৫ শতাংশ বেশি)।

৪-১১ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মূলত ৩৬টি জেলায় ‘হিট শক’ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ (ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি) এ আক্রান্ত হয়। উক্ত জেলাগুলোতে ৬৮ হাজার ১২৩ হেক্টর বোরো ধানের জমি আক্রান্ত হয়েছে যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমান ২১ হাজার ২৯২ হেক্টর। এতে উৎপাদন ৯৫ হাজার ৯৩৪ মেট্রিক টন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

‘হিট শক’ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ (ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি) এ মোট ক্ষয়ক্ষতির (৪-১১ এপ্রিল পর্যন্ত) হিসাবঃ বোরো ধান চাষের অর্জন ৪৮.৮৩৮ লক্ষ হেক্টর, ক্ষতিগ্রস্থ জমি ০.২১২৯২ লক্ষ হেক্টর, অর্জিত জমির বিপরীতে ক্ষতির শতকরা হার ০.৪৪ শতাংশ।

আচমকা এ ধরণের প্রাকৃতিক বৈরি আক্রমনে এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কৃষি মন্ত্রণালয় এর আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার কর্মকর্তাগন কোন রকম কালক্ষেপন করেননি। কোভিড-১৯ জনিত লকডাউন থাকলেও সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দিনরাত কৃষি মন্ত্রী মহোদয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয়সহ সকল কর্মকর্তাবৃন্দ, কৃষি বিজ্ঞানী এবং সম্প্রসারণবিদগন মাঠে থেকে ক্ষতিগ্রস্থ বা আতংকিত চাষীদেরকে এ সময়ে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ জমি থেকে ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের তালিকা করা হয়েছে। মোট ক্ষতিগ্রস্থ চাষীর সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৩ হাজার ৬২০ জন। তাদেরকে প্রয়োজনীয় পূনর্বাসন/প্রণোদনা প্রদানের জন্য আলোচনা করা হয়েছে।

গত বছর বোরো ধান আবাদ করা হয় ৪৭.৬২১ লক্ষ হেক্টর জমিতে। এ বছর আবাদ হয়েছে ৪৮.৮৩৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে অর্থাৎ ১.২১৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে বা ২.৫৬ শতাংশ জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে।

গত বছর হাইব্রিড ধান চাষের জমির পরিমান ছিল ৯.০৪৬ লক্ষ হেক্টর; বিপরীতে এ বছর অর্জিত হয় ১২.১৩৪ লক্ষ হেক্টর অর্থাৎ ৩.২৭৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে বা ৩৬.৯৫ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড ধান বেশি আবাদ হয়েছে।

প্রাকৃতিক কিছু বৈরিতা থাকলেও কৃষকগণ সময়মত সম্প্রসারণবিদগনের পরামর্শমত ব্যবস্থা নিয়েছেন বিধায় ফলন সন্তোষজনক। ফসল কাটা শুরু হয়েছে পূর্ণদমে। গত বছরের তুলনায় ফলনের পরিমানও বেশী। এখন আর কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত না আসলে বোরো ধান উৎপাদনে কোন প্রভাব পড়বে না বলে আশা করা যায়।

সূতরাং কোন কোন মহল থেকে কোনরুপ বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষন না করে, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষন না করে যদি বলেন বা কোন কোন পত্রিকায় ফলন বিপর্যয় হবে মর্মে রিপোর্ট-নিবন্ধ প্রকাশ করেন তা গ্রহনযোগ্য হওয়ার কোন কারন নেই।

লেখক: মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়