মহসীন উল হাকিম: উজানে শ্রোতহারা পদ্মা/ভাটির জমি ফেটে চৌচির/পানিতে লবণ, মাটিতে লবণ...। উজানের নদীগুলোতে পানি নেই। ধুঁকছে সাতক্ষীরার পশ্চিম সীমান্তের ইছামতি নদী, চুনকুড়ি, মাহমুদা, মালঞ্চ, খুলনার আড়পাঙ্গাসিয়া, শিবসা, পশুর, বাগেরহাটের শ্যালা, বলেশ্বর কিংবা গাবুরার দুই পাশ দিয়ে বয়ে চলা দুই নদী খোলপেটুয়া আর কপোতাক্ষ। জোয়ারের পানি সামান্য চাপে লবণ পানি উঠে আসছে উজানে। আর উজানের মিঠা পানির চাপ না থাকায় সেই লবণ পানি আর নামতে পারছে না। ফলে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোরসহ ভাটির জেলাগুলোর মাটির লবণাক্ততার পরিমান বাড়ছে প্রতিদিন।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনে নোনা পানির উচ্চতা বাড়ছে। ঝুঁকি বাড়ছে উপকূলীয় জনপদের। চারপাশে নোনাপানি। বর্ষায় বৃষ্টির পানি দিয়ে চলে যায়। কিন্তু শুকনো মৌসুমে জীবন যাপন হয়ে ওঠে অসহনীয়। খাওয়ার পানি, গোসলের পানি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেতে হয় দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলের মানুষদের।
সুন্দরবন লাগোয়া জনপদে ফসলের ক্ষেতগুলো চিংড়ি-কাঁকড়ার ঘেরে পরিণত হয়েছে। সাধারণ ফসলের চাষাবাদ প্রায় শুণ্যে নেমে এসেছে। কয়েকদিন বৃষ্টি না হলে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। চোখের সামনে শুকিয়ে মরে ফসল। কিছুই করার থাকে না। মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেড়েছে লবণাক্ততার কারণে। মাটিতে লবণ বেড়ে যাওয়ায় গৃহস্তবাড়িতে এখন আর আগের মতো লাউ-কুমড়া ফলে না। খাবার না থাকায় সাধারণ হাঁস-মুরগি কিংবা ছাগল-গরু লালন পালনও সম্ভব হয় না।
পদ্মার পানির ওপর নির্ভরশীল ভাটির নদীগুলো। গড়াইসহ বেশ কয়েকটি নদীর মাধ্যমে পদ্মার পানি নেমে যায় ভাটিতে। উপকূলীয় নদীগুলোর মাধ্যমে এই মিঠা পানি সাগরের নোনা পানিকে চাপে রাখতো। কিন্তু পদ্মায় পানি না থাকায় সাগরের নোনাপানির কাছে ভাটির নদীগুলোর পরাজয় ঘটেছে অনেক আগে। তাই উজানে পানির প্রবাহ না থাকলে ভাটির নদীগুলোকে খনন করে প্রবাহমান করা অবাস্তব। উজানের নদীতে পানির প্রবাহ না থাকলে ভাটির জনপদ বাসযোগ্য থাকবে কি? ফেসবুক থেকে