মঈন উদ্দীন: [২] বৈশাখে সাধারণত থাকে ঝড়বাদল। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলে এবার বৃষ্টির দেখা নেই। আকাশে মেঘেরও দেখা নেই। বৈশাখী খরতাপে পুড়ছে রাজশাহী। বৃষ্টি না হওয়ায় বাড়ছে কৃষকের বেরো ধান চাষের সেচ খরচ। খরতাপে শুকিয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর গাছের আম আর লিচুর গুটি।
[৩] লিচুর গুটি বাঁচাতে পবা উপজেলার হরিপুর এলাকায় গাছের গোড়ায় বালতি বালতি পানি ঢালছিলেন মকসেদ আলী। তিনি বললেন, ‘এইবার লম্বা সময় বৃষ্টি নাই। এ রকম হলে চলে কী করে! সূর্যের তাপে মনে হচ্ছে গাছের পাতা কুকড়ে যাচ্ছে, লিচু টিকবে কী করে? তাই গাছের গোড়ায় পানি ঢালছি। যদি উপকার হয়!’
[৪] জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার চাপাল গ্রামের আমচাষি সাইফুল ইসলাম জানান, খরায় তাঁর আমের কড়ালি ঝরে পড়ছে। বৃষ্টি হলে আমগুলো রক্ষা পেত। সাইফুল বলেন, সকাল-বিকাল সাধ্যমতো গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছি। কিন্তু আবহাওয়া এত গরম যে ওপরের কড়ালির লাভ তেমন একটা হচ্ছে না। আমের জন্য এই মূহুর্তে একটা ভাল বৃষ্টি দরকার বলেও জানান এই চাষি।
[৫] রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী মহানগরীর পূর্ব দিকে পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার কিছু অংশে গত ১১ এপ্রিল ৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ৯ এপ্রিল সেদিকে দুই মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী শহরেরই পশ্চিম প্রান্ত থেকে গোদাগাড়ী, তানোর এবং মোহনপুর, পবা, দুর্গাপুর এবং বাগমারায় বৃষ্টির খবর পাওয়া যায়নি। ফলে রাজশাহীতে তাপদাহ কমছে না।
[৬] রাজশাহীজুড়ে এখন কখনও চলছে মৃদু এবং কখনও মাঝারি তাপদাহ। দিনের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু তাপদাহ। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়।
[৭] রুক্ষ আবহাওয়ায় হঠাৎ এক বাতাসে গত ৪ এপ্রিল জেলার ২৮ হেক্টর জমির ধান হিটশকে নষ্ট হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় এবং বাতাসে আর্দ্রতা না থাকায় বোরো ধানের শীষ মরে যাচ্ছে। একদিন শুধু লু হাওয়ায় পুড়েছে ২৮ হেক্টর জমির ধানের শীষ। তিনি বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকলে আমরা যে তাপমাত্রা রেকর্ড করি না কেন, এর চেয়ে অনেক বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হবে। তখন মনে হয় লু-হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এখন বাতাসে আদ্রতা কম, তাপমাত্রা বেশি।
[৮] রাজশাহীর এই তাপমাত্রা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবি মানুষ। সর্বাত্মক লকডাউনের ভেতরেও যারা নানা কাজের সন্ধানে রাস্তায় বের হচ্ছেন তাঁরা হাসফাস করছেন গরমে। শনিবার দুপুরে রাজশাহী নগর ভবনের সামনে রিকশা নিয়ে বসেছিলেন জুলমত আলী। তিনি বলেন, এত বেশি সূর্যের তাপ যে মনে হচ্ছে রাস্তার পিচ থেকে উত্তাপ উঠছে। রাস্তায় চলাচল করা কঠিন।
[৯] জুলমত বলেন, লকডাউনের জন্য মোড়ে মোড়ে পুলিশ রিকশা আটকাচ্ছে। তখন রোদের মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছেন, ততক্ষণ গায়ে বাতাস লাগছে না। রোদে দাঁড়িয়ে থাকতেই লকডাউনে বের হওয়ার ‘শিক্ষা’ হয়ে যাচ্ছে।