ইসমাঈল ইমু: [২] জুম্মার নামাজ পড়ে স্ত্রী সন্তানসহ নিজ ঘরে গল্প করছিলেন নুর মোহাম্মদ। এই সময় স্ত্রী তার ছোট সন্তানসহ ঘুমিয়ে পড়ে। তার বড় সন্তান নুপুরসহ তিনি ঘুমাচ্ছিলেন পাশের ঘরে। এক সময় তিনিও ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর ঘুম থেকে জেগে তিনি দেখতে পান তার কন্যা নুপুর মেঝেতে নিথর হয়ে পড়ে আছে। তিনি চিৎকার করে স্ত্রীসহ তার কন্যাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এটি ঘাতক বাবার বানানো একটি গল্প।
[৩] জানা যায়, গতবছর ৩ এপ্রিল নীলফামারী থানা পুলিশ এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা পরে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করে। দীর্ঘ ১০ মাস তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি পিবিআইকে হস্তান্তরের জন্য আদালতে আবেদন করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই রংপুর জেলাকে দায়িত্ব দেন।
[৪] পিবিআই রংপুর জেলা মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট আলামত ১ টি নীল রংয়ের লেহেঙ্গার ওড়না জব্দ করে। পুলিশ সুপার এবি এম জাকির হোসেনসহ পিবিআই এর একটি অভিজ্ঞ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ঘটনার পারিপাশ্বিকতায় ও আলামত ওড়নায় দেয়া গিট দেখে পিবিআই পুলিশের সন্দেহ হয়।
[৫] শিশুটির বাবা নুর মোহাম্মদ জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তার মেয়ে খেলতে গিয়ে মারা গেছে, কখনো বলে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পিবিআই’র সন্দেহ হয় ঘটনাস্থলের অবকাঠামো, ওড়নার গিট ও কাপড় শুকানোর হালকা রশিতে কখনোই শিশু নুপুর আত্মহত্যা করতে পারে না।
[৬] পিবিঅঅই’র জিজ্ঞাসাবাদে নুর মোহাম্মদ জানান, ঘটনার দিন জুম্মার নামাজ শেষে মেয়ে নুরানি আক্তার নুপুর ও তার ছোট ছেলে আবু সোহানসহ খাওয়া শেষে বাড়ির মেইন গেইট ও ঘরের মেইন দরজা বন্ধ করে তাদের কোয়ার্টারের উত্তর দিকের ঘরে গল্প করছিল। এমন সময় তার ছোট ছেলে আবু সোহান ও মেয়ে নুরানি আক্তার নুপুরের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। নুর মোহাম্মদ তার ছেলে-মেয়েকে বকাঝকা করেন।
[৭] নুপুর টিভি দেখছিল এবং নুর মোহাম্ম্দ তার মোবাইল ফোনে নাটক দেখছিল। কিছুক্ষণ পর নুপুর তার বাবার কাছে মোবাইল ফোনটি চায়। ফোন না দিয়ে ধমক দেন তিনি। এরপরও নুপুর মোবাইল ফোনের জন্য তার বাবার কাছে জেদ করলে এবং গালি দিলে নুর মোহাম্মদ ক্ষিপ্ত হয়ে নুপুরের গলা চেপে ধরে। কিছুক্ষণ পর নুপুর নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।
[৮] নুর মোহাম্মদ কাপড় শুকানোর রশিতে নুপুরের লেহেঙ্গার ওড়না বেধে আত্মহত্যার ঘটনা সাজায় এবং আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। ঘটনার ১১ দিনের মাথায় পিবিআই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে। নুর মোহাম্মদ দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়।