শিরোনাম
◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ঈদের পর কমপক্ষে ২৩ ডিসি’র রদবদল হতে পারে ◈ ৫ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কর্মদিবস একদিন ◈ চাঁদপুরে পিকআপ ভ্যান ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ◈ ভারত থেকে আসবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ 

প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল, ২০২১, ০৭:৫৯ সকাল
আপডেট : ০৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রিয় নবীজি (সা.) যেভাবে ব্যবসা করতেন

ইসলামি ডেস্ক: এই পৃথিবীর প্রতিপালনকারী একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি মানুষের জন্য ব্যবস্থা করেন রুটি-কাপড় এবং বাসস্থান। এসব হলো মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। প্রয়োজন পূরণ করার জন্য মানুষ বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করে। তন্মধ্যে ব্যবসা হলো সবচেয়ে উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ উপায়।

রিজিক উপার্জনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি ইসলাম। তবে যে পেশাই অবলম্বন করা হোক তা যেন হালাল হয় সেটার ওপরই জোড় দিয়েছে ইসলাম। হালাল রিজিক উপার্জন করাকে ইসলাম ইবাদত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘ফরজ ইবাদতগুলোর (নামাজ, রোজা, জাকাত ইত্যাদি) পরে হালাল উপার্জন করাও একটি ফরজ এবং ইবাদতের গুরুত্ব রাখে।’

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মানুষ এর চেয়ে উত্তম উপার্জন খায়নি যা সে নিজ হাতে উপার্জন করে খায়। নবী দাউদ (আ.) ও নিজ হাতের উপার্জন খেতেন।’ (বোখারি)।

রিজিক অনুসন্ধানের উত্তম মাধ্যম ব্যবসা

রিজিক অনুসন্ধানের জন্য হুকুম করেছেন মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.)। উপার্জনের গুরুত্ব এবং ফজিলত এর দ্বারাই অনুমিত হয় যে, প্রত্যেক নবী কোনো না কোনো ব্যবসা করতেন। হজরত আদম (আ.) কৃষি কাজ করতেন। হজরত ইদরিস (আ.) সেলাই কাজ করতেন। হজরত দাউদ (আ.) লোহার বর্ম বানাতেন। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) ও নিজে ব্যবসা করেছেন।

ব্যবসাকে উপার্জনের সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম আখ্যা দেয়ার বড় কারণ এটাই যে, নবীজি (সা.) স্বয়ং নিজে ব্যবসা করেছেন। তিনি অন্য আরেকজনের সঙ্গে মিলে শেয়ারে ব্যাপক পরিসরে ব্যবসা করেছেন। মোদারাবা তথা ব্যবসার মাল আদান-প্রদান করে লাভ নির্দিষ্ট হারে বণ্টন করে নেয়া। এ ধরনের ব্যবসাও করেছেন।

নবুওয়াত লাভ করার আগে নবীজি (সা.) মোদারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব (রা.) এর সঙ্গে শেয়ারে ব্যবসা করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব (রা.) বলেন, আমি জাহেলিয়াতের যুগে নবীজির ব্যবসার শেয়ার ছিলাম। আমি যখন মদিনায় গেলাম তখন নবীজি (সা.) বললেন, আমাকে চিন? বললাম, কেন চিনব না? আপনি তো আমার অনেক ভালো ব্যবসার পাটনার ছিলেন। না কোনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করতেন, না কোনো কিছুতে ঝগড়া করতেন!’ (খাসায়েসে কুবরা, উসদুল গাবাহ)।

উপার্জনের অনেক রকম পদ্ধতি আছে। বৈধ পন্থায় রিজিক অনুসন্ধান করাকে উত্তম বলেছেন মহান আল্লাহ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যেন তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমু’আ, আয়াত : ১০)।

ব্যবসা-বাণিজ্যের ফজিলত
সৎ ব্যবসায়ীর শান-মর্যাদা বর্ণনা করে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘সত্যবাদী আমানতদার ও বিশ্বাসী ব্যক্তি কেয়ামতের দিনে নবীগণ সিদ্দিকরা এবং শহীদদের দলে থাকবেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)।

রিজিকের ১০টি অংশ। তন্মধ্যে ৯টি অংশ ব্যবসা-বাণিজ্যে নিহিত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পেশাদার মুসলমানকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন। রুটি-রুযির ব্যবস্থা করা মানুষের ওপর ফরজ। মুত্তাকি বান্দাদের কাছে হালাল রিজিক উপার্জন ঈমানের অংশ। জীবন-যাপনে সঙ্কীর্ণতা ইজ্জত-সম্মানের জন্য কলঙ্ক। ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলমানদের অবহেলা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।

হালাল ধনসম্পদ উত্তম জিনিস
নবীয়ে কারিম (সা.) হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) কে বলেছেন, আমি চাই তোমার উপযুক্ত ধনসম্পদ অর্জন হোক। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ধন-সম্পদের জন্য মুসলমান হইনি। আমি আমার দিলের টানে মুসলমান হয়েছি। নবীজি (সা.) বললেন, হালাল ধন-সম্পদ অনেক উত্তম জিনিস।’ (মুসনাদে আহমদ)।

ব্যবসার উদ্দেশ্য অনেক ব্যাপক
ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য শুধু মুনাফা অর্জন নয় বরং এর দ্বারা মানুষের সঙ্গে পরিচিতি বাড়বে। তখন তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। আন্তরিকতা দেখানো এবং হাস্যজ্জ্বোলভাবে কথা বলা উচিত। যাতে অন্যদের অন্তরে আপনার ইজ্জত-সম্মান এবং ভালোবাসাও ঠিক থাকে। তারা আপনার কোনো কথা সহজে মান্য করে। তাহলে ইসলামের সৌন্দর্য অন্যদের কাছে তুলে ধরা সহজ হবে। ঈমানদারীর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করার মধ্যে আল্লাহপাক অগণিত রিজিক দানের ওয়াদা করেছেন।

সৎ ব্যবসায়ীর মর্যাদা
সৎ ব্যবসায়ীর শান-মর্যাদা বর্ণনা করে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘সত্যবাদী আমানতদার ও বিশ্বাসী ব্যক্তি কেয়ামতের দিনে নবীরা সিদ্দিকরা এবং শহীদদের দলে থাকবেন।’ (জামে তিরমিজি, দারাকুতনি ও দারেমি)।

ব্যবসা পছন্দ আল্লাহপাকের
হালাল রিজিক উপার্জনের জন্য যে পন্থাই অবলম্বন করা হোক এটা পছন্দ করেন মহান রাব্বুল আলামিন। যে ব্যক্তি নিজের পরিবার-পরিজনের পেট চালানোর জন্য কষ্ট করে সে যেন আল্লাহর রাস্তায় আছে। আর যে ব্যক্তি নিজের বৃদ্ধ পিতা-মাতার পেট চালানোর জন্য কষ্ট করে এবং মানুষের কাছে যাতে হাত পাততে না হয়, সেজন্য হালাল উপার্জন করে সেও আল্লাহর রাস্তায় আছে।’ (তাবরানি; আততারগিব ওয়াত তারহিব)।

আখেরাতের জন্যও সম্পদ থাকা জরুরি
আখেরাতে উত্তম জীবন-যাপনের জন্যও ধনসম্পদ থাকা জরুরি। যেন আল্লাহর সৃষ্টিজীব এবং নিজের অধীনদের ওপর মন খুলে খরচ করা যায়। বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে সবচে বেশি মানুষ অকর্মণ্য। মুসলমানদের জন্য উচিত ব্যবসা-বাণিজ্যে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসা। কেননা ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। এতে এগিয়ে আসলে ইনশাআল্লাহ অকর্মণতাও দূর হবে। জীবনেও ফিরে আসবে সুখ-স্বাচ্ছন্দ।

ব্যবসা-বাণিজ্যে ধোঁকা-প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকা
ব্যবসা, কারিগরি এবং পেশা অবলম্বনের অনেক ফজিলত রয়েছে। কিন্তু এ সমস্ত ফজিলতগুলো ওই ব্যবসায়ীর জন্য যিনি ইসলামি নীতিমালা এবং নবীজি (সা.) এর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবসা করবে। ধোঁকাবাজ মুসলমান হতে পারে না। ধোঁকা দেওয়া, মিথ্যা বলা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। প্রকৃতপক্ষে ধোঁকাদাতা খোদ নিজেকেই ধোঁকা দেয়। নবীয়ে কারিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘ধোঁকা দেয় ও প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

তাই একজন মুসলমান ব্যবসায়ীকে ধোঁকা, প্রতারণা থেকে সব সময় বেঁচে থাকতে হবে। এ ব্যাপারটা মানতে পারলে ব্যবসায়ীর সততা এবং ঈমানদারীর চর্চা অব্যাহত থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এতে আল্লাহর রহমত এবং বরকত হয়। নবীজি সা. বলেছেন, ‘হালাল যদিও কম হয়; কিন্তু এতে বরকত আছে।’

পণ্য বিক্রি করার জন্য মিথ্যা না বলা
সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, মিথ্যার ওপর অভিশাপ দিয়েছেন মহান আল্লাহ। নবীজি সা. বলেছেন, ব্যবসায়ী গোনাহগার এবং অসভ্য। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ব্যবসা-বাণিজ্যকে কি আল্লাহ হালাল করেননি? নবীজি (সা.) উত্তরে বললেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পূর্ণ বৈধ। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী মিথ্যা কসম করে। নিজের পণ্যের ব্যাপারে মিথ্যা মিথ্যা বিবরণ দেয়। এভাবে অধিকাংশ মানুষ গোনাহগার হয়ে যায়। আল্লাহর পানাহ! আল্লাহর পানাহ! (মুসনাদে আহমদ)।

আজকাল মুসলমান ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক পিছিয়ে। যারাও বা ব্যবসা করছেন তারাও ইসলামের নির্দেশনা এবং নবীজি সা. এর আদর্শের মূলনীতি জানেন পর্যন্ত না। জানলেও আমলে নেন না। মুসলমানদের উচিত নবীজি (সা.) এর ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত নির্দেশনা অধ্যয়ন করা। ইসলামের নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা। তাহলে ইনশাআল্লাহ সফলতা আমাদের পদচুম্বন করবে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে নবীর সুন্নত ব্যবসাকে আপন করে নেয়ার এবং ঈমানদারী, চেষ্টা-প্রচেষ্টা, মন দিয়ে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ডেইলি বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়