শিরোনাম
◈ আবারও মে‌সির জোড়া গোলে ইন্টার মায়ামির জয় ◈ এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ ‘তুমি কেন ফুয়েল কেটে দিলে?’ ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের আগে পাইলটদের শেষ ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং ◈ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের জন্য সুখবর: মৃত্যু হলে লাশ দেশে পাঠাবে সরকার, ক্ষতিপূরণ মিলবে বীমার আওতায় (ভিডিও) ◈ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত: পিউ রিসার্চ ◈ বেপরোয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩ ◈ স্প‌্যা‌নিশ ক্যাবরেরাই থাক‌ছেন বাংলা‌দেশ ফুটবল দ‌লের কোচ ◈ সন্ধ‌্যায় নেপালের বিরু‌দ্ধে লড়াই‌য়ে নাম‌ছে বাংলা‌দে‌শের মে‌য়েরা ◈ ঢাকায় হবে এশিয়া কাপের সভা, ভারত অংশ নে‌বে না ◈ এবার যে কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন ড. ফয়জুল হক

প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল, ২০২১, ০৪:৪৫ সকাল
আপডেট : ০৪ এপ্রিল, ২০২১, ০৪:৪৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তুষার আবদুল্লাহ: লকডাউন : আমাদের কেবলই দেরি হয়ে যায়

তুষার আবদুল্লাহ: আমরা কত বোকা। ‘বোকার স্বর্গে’ বাস করি চোখ বুঁজে। চোখ বুঁজে থাকি বলেই মনে মনে ভেবে নিয়েছিলাম, কোভিড-১৯ শীতকালে যেহেতু আমাদের ধামাকা ছাড় দিয়েছে, সুতরাং এই বসন্তে বকেয়া ও বর্তমান সকল উৎসব সেরে নিতে পারি। তাই ‘দোল দোল দোলনী’র মতো আমরা উৎসবের দোলনায় দোল খেতে থাকলাম। কোভিড-১৯ অদৃশ্য জীবাণু যে তার রূপ পাল্টেছে দেশে-বিদেশে। বসন্তকে সেও বেছে নিয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ তোলার, সেটা উৎসব বাদ্যে আমরা আঁচ করতে পারিনি। বাদ্য বাজীর আড়ালে কিংবা উৎসবের ঘোরে থাকার সময় আমদানি হয়ে এসেছে নতুন রূপের করোনা। খবরটি যে একেবারেই অচেনা ছিল এমন নয়। ৫ জানুয়ারিতেই আমরা জানি দেশে ‘ইউকে ভ্যারিয়েন্ট’ শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু আমরা বিলেত প্রেম ছাড়তে পারিনি। বিলেত থেকে আসা যাত্রীদের বিষয়ে কঠোর হতে পারিনি। যুক্তরাজ্য ছাড়া সব দেশের যাত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনা হলো। ব্রিটেন কিন্তু আমাদের প্রেমকে পাত্তা দিলো না। তারা ঠিকই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের বিষয়ে কঠোর হলো। একমাস আগে থেকেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল, গণমাধ্যম ও কয়েকজন চিকিৎসক সে বিষয়ে কথা বলছিলেন, কিন্তু ওই পূর্বাভাসকে পাত্তা দেওয়া হয়নি। ২০২০ এর মার্চের মতোই। গত ১ মার্চ যেখানে শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৩১, সেখানে এপ্রিলে এসে এই হার ২৩ দশমিক ২৮ ভাগে পৌঁছেছে। ২০২০ কে আমরা ‘দুই হাজার বিষ’ বলে আখ্যা দিয়েছিলাম লোকক্ষয়ের কারণে। ওই ‘বিষময়’ বছরের এসময়ে মৃতের সংখ্যা ৬ থেকে ১০ পৌঁছেছিল। আর ২০২১ সালে একই সময়ে মৃতের সংখ্যা ৫০ থেকে ৫৯।

পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। কিন্তু এই পরিস্থিতি মোকাবিলার আয়োজন একেবারেই সাদামাটা। সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল ১৪ দিনের জন্য। কিন্তু বাস্তবতা প্রমাণ দিচ্ছে– দাফতরিক অনেক প্রস্তুতি শেষ না করে, সমন্বয় না গড়েই এই নির্দেশনা এসেছে। অফিস আদালতে ৫০ ভাগ কর্মী দিয়ে কাজ করানো, গণপরিবহনের ভাড়া, চলমান, বিভিন্ন মেলা, উৎসব, রাজনৈতিক জমায়েত এবং সর্বশেষ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে।

এবারের ঢেউতো নতুন নয়। আমরাতো ২০২০ এর ৮ মার্চ থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি। এই লড়াইকালে স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরের অনেক অন্ধকার সাধারণ মানুষের নজরে আসে। মাস্ক থেকে শুরু করে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার দুর্নীতি, কেনা বেচার অনিয়ম, গাড়ি চালক থেকে বড় কর্তার দুর্নীতি দেখে করোনার চোখ কপালে উঠেছিল আমাদের। এক বছরে সুযোগ হয়েছিল হাসপাতালগুলোর আইসিইউ শয্যা সংখ্যা বাড়ানো, অক্সিজেন সেবা বাড়ানোর, কোভিড -১৯ বিষয়ে চিকিৎসক, নার্সদের প্রশিক্ষিত করার। আমরা করোনা চিকিৎসার জন্য স্বতন্ত্র হাসপাতালও তৈরি করতে পারলাম না। আগে যে সঙ্গ নিরোধ কেন্দ্রগুলো তৈরি হয়েছিল, গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে বেশিরভাগ। মাঝখান থেকে সরকারের কোষাগার থেকে টাকা চলে গেছে। হাসপাতালগুলোর অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানোর সুযোগও পেয়েছিলাম। কিন্তু এই সময়টা কার টিকা নেবো, কার টিকার নিরীক্ষা চলবে দেশে, টিকা নেব নাকি নেব না? এমন তর্কেই ব্যস্ত ছিলাম আমরা। শুধু সচেতন ছিলাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক জমায়েতে আমরা অতি স্বাভাবিকতায় ফিরে গিয়েছিলাম। সন্তানকে স্কুলে না পাঠিয়ে তাকে নিয়ে চলে গেছি বিনোদন কেন্দ্রে। এক বছর বিনোদন না পাওয়াটা আমরা সুদে আসলে পুষিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। করোনা ও কৃপণতা দেখায়নি, ফিরে এসে মরণ কামড় নিয়ে।

করোনা যেহেতু তার চরিত্র পাল্টেছে। একেক ব্যক্তির সঙ্গে একেক আচরণ, তাই সংকটও দিশাহীন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা কোনও কোনও স্বজনকে হারাচ্ছি। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিশেহারা হয়েও অনেককে চিকিৎসা না পেয়েই  বিদায় নিতে হচ্ছে।

আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ বা রাষ্ট্রের বিলম্বে জেগে ওঠার কথা বলছি এজন্য যে, সব দায় শেষে গিয়ে রাষ্ট্রের ওপরই চড়ে বসে। কিন্তু ব্যক্তির অবস্থান থেকে আমরা এক বিন্দুও সচেতন ছিলাম না। অতি স্বাভাবিকতায় ফিরে গিয়েছিলাম। করোনা জয় করেছি, এই আনন্দে নিজেদের ঢোল নিজেরাই ফাটিয়ে বসে আছি। কাজটি বোকারাই করে। অবশেষে লকডাউন এলো। কিন্তু বড় দেরিতে এলো। আরো সপ্তাহ খানেক আগে এলে, ঢেউ এতো প্রকাণ্ড রূপ নেওয়ার সুযোগ পেতো না। যখন আর কূল রাখা সম্ভব হচ্ছে না, একের পর এক পাড় ভেঙে পড়ছে, তখন বাধ্য হলাম আমরা বাঁধ দিতে। জানি না, এই বাঁধ কতটা আফাল ঠেকাতে পারবে। জানি না কেন যে আমাদের দেরি হয়ে যায়। তারপরও মনে আছে বিশ্বাস- প্রথম ঢেউয়ের মতো দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবো, সেই প্রতিরোধের বড় অস্ত্র হবে ব্যক্তিগত সচেতনতা। লেখক: গণমাধ্যম কর্মী। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়