অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: গত কয়েকদিনে দেশে যা ঘটে গেলো তা থেকে মনে কেবল একটি কথাই ফিরে ফিরে আসছে সেটা হলো: ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে’। যা দেখছি তাতে কেবল মনে হচ্ছে দেশে ৪৭ এর চেতনা ফিরে আসছে আর ৭১-এর চেতনা ফিকে হয়ে আসছে। আজকের বাংলাদেশ দেখে মনে হচ্ছে ৫২-তে যদি এই বাংলাদেশ থাকতো হয়তো বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেতাম না। সবকিছু দেখে মনে হয় পাকিস্তান আফগানিস্তান হবার আর কতো দেরি পাঞ্জেরী? বিএনপি জামায়াতকে ঠেকাতে গিয়ে হেফাজতকে তেলিয়ে আওয়ামী লীগের সেন্টার অব গ্র্যাভিটি ডান দিকে শিফট হয়েছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা যুবলীগ করা অনেকের সাথে কথা বললেও শিফট যে হয়েছে তা বোঝা যায়।
বর্তমান আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগে এক সমুদ্র পার্থক্য।
মনে আছে আফগানিস্তানে যখন মোল্লারা ক্ষমতা দখল করল তখন প্রথমেই গুড়িয়ে দিল হাজার বছরের ঐতিহ্য বৌদ্ধ মূর্তি। তারপর আক্রমন আসলো নারীদের উপর। তাদেরকে স্কুল, কলেজ, অফিস থেকে ঘরে বন্দি করলো। মাত্র কয়েকদিন আগেও বেশ কয়েকজন কর্মজীবী নারীকে হত্যা করল। হেফাজতও একই চিন্তার ধারক। তারাও মনে করে নারীদের পড়াশুনার দরকার নেই। অথচ এইটা প্রমাণিত সত্য যে নারীদের ঘরে বন্দি রেখে কোন দেশ আগাতে পারেনা।
নারীরা কি পারেনা? এরা ডাক্তার নার্স হয়ে মানুষের সেবা করছে, এরা বিজ্ঞানী হচ্ছে, শিক্ষক হচ্ছে, মা হয়ে সন্তান মানুষ করছে আবার একই সাথে ঘরও দেখছে। এই ভাবনার একটি গোষ্ঠীকে আস্কারা দিলে কি হয় তা এইবার ভালো করেই বুঝিয়ে দিল। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ হলেন আমাদের গর্ব। কেবল বাংলাদেশের না গোটা উপমহাদেশের জন্য গর্ব। সেই গর্বের জায়গাটা পর্যন্ত তারা গুড়িয়ে দিল। এরা গান বাজনা পছন্দ করে না। এরা শিল্প সাহিত্য পছন্দ করে না। এরা বিজ্ঞান পছন্দ করে না। এরা নারীশিক্ষা পছন্দ করে না। এই ধারার মানুষ যখন একটি দেশে বেড়ে যায় তখন বলা যায় দেশ পশ্চাদমুখী হচ্ছে। লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :