মনজুরুল আহসান খান: আমি তখন রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশেই থাকি। আমি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মটর সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় বেরিকেড ছিলো। সেটা পার হয়ে বাসায় এলাম। আসার পরই রাজারবাগ পুলিশলাইনে গোলাগুলি শুরু হলো। রাজারবাগে একটা জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড শুরু হলো। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের অনেক পুলিশ পালিয়ে গেলো, অস্ত্র নিয়ে বা অস্ত্র ছাড়া। তারা বিভিন্ন বাসায় আশ্রয় নিলো। আমাদের বাসায়ও কয়েকজন আশ্রয় নিলো। সেখান থেকে আমরা প্রথমে পুলিশের রাইফেল নিয়ে গুলি চালালাম। পরের দিন তাদের অনেকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো। তারপর নিজেদের গ্রামের দিকে তাদের পাঠিয়ে দিলাম। আমরা অস্ত্র লুকিয়ে তাদের পাঠালাম। এভাবে ২৫ মার্চ শুরু হলো।
তারপর কারফিউ জারি করা হলো। কারফিউয়ের সময় রাস্তায় যে গণহত্যা সেটা আমরা দেখলাম। কারফিউ ওঠানোর পর যখন আমি পোস্তগোলা ও শ্যামপুরের দিকে গেলাম তখন রাস্তায় রাস্তায় মানুষ মরে পড়ে আছে। রিকশাওয়ালা, রিকশার ওপরের যাত্রী। তাদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের লাশগুলো পঁচে যাচ্ছে। এই অবস্থা নিজ চোখে দেখলাম। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খবর পেলাম সেখানেও অনেকে আহত হয়েছে। অনেককে খুন করা হয়েছে। তাদের গণকবর খুরে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কাজী রঞ্জনশীল নামে একজন গুলি করার সময় পড়ে গেছিলো, তার গুলি লাগেনি, সে পরে বেঁচে ওঠেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর টেলিভিশনে সেই ঘটনার বিবরণ দেয়। আমাদের তরুণ প্রজন্ম একেবারে জানে না, এমন নয়।
তরুণদের মধ্যে অনেকেই অনেক কিছু জানে। তাদের এখন ২৫ মার্চের কালরাতের ঘটনাগুলো আরও শোনানো উচিত। সেই সময়ের যে ছবিগুলো আছে সেগুলো দেখানো উচিত, তাহলেই তারা ২৫ মার্চের গণহত্যা সম্পর্কে জানতে পারবে। পরিচিতি : রাজনীতিবিদ, সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন আমিরুল ইসলাম