ডেস্ক রিপোর্ট: ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকের বাসায় শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈ (১১)কে বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় অবশেষে উজিরপুর মডেল থানায় তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নির্যাতিত শিশু নিপা বাড়ৈর কাকা তপন বাড়ৈ বাদী হয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. সি.এইস রবিন, তার স্ত্রী রাখী দাস ও কম্পাউন্ডার বাসুদেবকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন।
এদিকে হঠাৎ করে উজিরপুর হাসপাতালে ভর্তি শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈসহ তার স্বজনরা ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ভোর রাত থেকে নিখোঁজ হয়।
এ ব্যাপারে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শওকত আলী থানায় নিখোঁজ মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এর সূত্র ধরে মডেল থানার ওসি জিয়াউল আহসানের নির্দেশনায় পুলিশ পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়ায় নিপার কাকা তপন বাড়ৈর শ্বশুরবাড়ি থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসে মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামের ডা. সি.এইস রবিন রেজিস্টার হিসেবে কর্মরত ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে এবং তার বাসা শ্যামলীতে। নিপার বাবা প্রতিবন্ধী ও তার মা তাকে ছোট রেখে সংসার ছেড়ে পালিয়ে যায়। অর্ধাহারে-অনাহারের সংসার তাদের। অভাবের তাড়নায় গত ৬ মাস পূর্বে স্থানীয় বাসুদেবের মাধ্যমে উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামের ননী বাড়ৈর মেয়ে নিপা বাড়ৈ (১১) ডাক্তার সি.এইস রবিনের বাসায় গৃহকর্মীর কাজে যায়।
বর্বর নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈ জানায়, কাজের শুরু থেকেই সামান্য ভুলত্রুটি হলেই ডাক্তার সাহেবের স্ত্রী রাখী তার শরীরে কখনো খুনতি দিয়ে আঘাত, কখনো বা ধারাল চাকু দিয়ে কোপ মারত। এমনকি চিৎকার দিলে গলা চেপে ধরে দেওয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে আঘাত করত। এতে তার দুই হাত, হাতের আঙুল, মাথা, গলায়, মুখমন্ডল ও পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে অগণিত ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে বৃদ্ধ দাদু ও কাকারা ফোন দিলে ডাক্তারের স্ত্রী রাখী মারধরের কথা না বলার জন্য তাকে ভয়ভীতি দেখাত।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈর ওপর ডাক্তারের স্ত্রী নির্মম নির্যাতন চালায়। মাথায় চাকু দিয়ে কোপ মারে এতে নিপা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাউকে কিছু না বলার হুমকি দিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি ডাক্তার রবিনের কম্পাউন্ডার বাসুদেবের মাধ্যমে নিপাকে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলেই নিপার দাদু, কাকিমা, কাকারা তার শারীরিক অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে কেঁদে ফেলে তাদের কাছে সব কিছু খুলে বলে।
স্থানীয়রা উজিরপুর থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে ওসি ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টায় তাকে উদ্ধার করে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এ প্রসঙ্গে উজিরপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল আহসান বলেন, হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হওয়া নিপা বাড়ৈকে উদ্ধার করে চিকিৎসক দম্পতিসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা নেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। সূত্র: কালের কণ্ঠ
আপনার মতামত লিখুন :