প্রভাষ আমিন: ব্যবস্থাপনা যতো চমৎকারই হোক, তাতে কিছু খুঁত থাকেই। যেমন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মানুষেরাই টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন। সরকার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করেনি। কিন্তু টিকার চমৎকার ব্যবস্থাপনার সুবিধাটা এখনো নিন্মবিত্ত এবং প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই, তারা রেজিস্ট্রেশন করতে বিপাকে পড়ছেন। গ্রামে তবু তথ্যকেন্দ্রে গেলে রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে। কিন্তু শহরের বস্তিবাসী, নিন্মবিত্তের মানুষেরা এখনো টিকার আওতার বাইরেই রয়ে গেছে। শীঘ্রই সরকারকে টিকা সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে যাওয়ার উপায় বের করতে হবে।
টিকা ব্যবস্থাপনাটা চমৎকার হলেও বাংলাদেশে শুরুতে করোনা ব্যবস্থাপনা ছিল না বললেই চলে। ঠিক এক বছর আগে বাংলাদেশে যখন করোনা আতঙ্ক শুরু হয়, তখন তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিমানবন্দর থেকে হাসপাতাল- সর্বত্র ছিল অব্যবস্থাপনার ছড়াছড়ি। আসলে কোনো ব্যবস্থাপনাই ছিল না। যদিও বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল। ভাগ্য ভালো বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার অনেক কম ছিল। কীভাবে বাংলাদেশ করোনার ভয়াবহ আক্রমণ থেকে রেহাই পেল, তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে, তবে তাতে সরকারের কোনো কৃতিত্ব ছিল না, সেটা বলাই যায়। বরং করোনা নিয়ে নানান অনিয়ম আর দুর্নীতি আমাদের ব্যথিত করেছে।
ইতিহাসের শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে বা ভুল থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। কিন্তু এবার বোধ হয় তার কিছুটা ব্যতিক্রম হয়েছে। করোনা ব্যবস্থাপনার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকরা টিকায় শৃঙ্খলা এনেছেন। টিকা ব্যবস্থাপনায় প্রমাণিত হয়েছে, চাইলে আমরা পারি। স্বাস্থ্যকর্মীদের একটু সংবেদনশীলতা, একটু মিষ্টি কথা; মানুষের অনেক ব্যথা ভুলিয়ে দিতে পারে। এটুকু পেলেই মানুষ প্রশংসায় ভাসিয়ে দিতে পারে। করোনা ব্যবস্থাপনার ভুল থেকে আমরা যে শিক্ষা নিয়েছি, সেই শিক্ষাটা যেন আমরা ভুলে না যাই। টিকা ব্যবস্থাপনার শিক্ষাটা যেন আমরা আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগাই। এটা মানতেই হবে, ১৮ কোটি মানুষের দেশে যেকোনো ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা রক্ষা করাই কঠিন। তবু একটা উদাহরণ যেহেতু আমাদের সামনে আছে, সেটা সামনে রেখেই যেন আমরা এগিয়ে যাই। স্বাস্থ্যসেবায় যেন সংবেদনশীলতা, মমতা আর দরদের ছোঁয়া থাকে। অসুস্থ মানুষ যেন হাসপাতালে গিয়ে ভোগান্তির স্বীকার না হয়। চাইলে যে আমরা পারি, সেটা তো প্রমাণ করেছিই। লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ