ড. সেলিম জাহান : খবরটা শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলাম। মানুষটি আমার খুব প্রিয়, বড় শ্রদ্ধার পাত্র। ভীষণ রকম ভক্ত ছিলাম তার লেখার-যুক্তির ঋজুতা, মতামত প্রকাশের দৃঢ়তা ও সাবলীল ভাষার কারণে। তার বিষয়বস্তুর বৈচিত্র এ আমাকে মুগ্ধ করতো। আর শ্রদ্ধার উদ্রেক করতো তার শ্বেতশুভ্র বসন-ঋষির মতো মনে হতো তাকে। সদ্য প্রয়াত সৈয়দ আবুল মকসুদের কথা ভাবলে ওই চেহারাটাই আমার মনে ভেসে ওঠে।
পরিচয় তো কম দিনের নয়। তা বছর পঁয়ত্রিশেক তো হবেই। প্রথম দেখা আশির দশকে কোনো একটি আলোচনা সভায়। দুজনেই আমরা বক্তা ছিলাম সেখানে। প্রথম দর্শনেই ভালো লেগেছিলো- তিনি হয়ে গেলেন আমার ‘মকসুদ ভাই’। তারপর সে পরিচয় আরও ঘনিষ্ঠ হলো ‘সংবাদে’ লেখালেখির কারণে। প্রায়ই বসতাম হয় হাসনাত ভাই, অথবা সন্তোষদা’ কিংবা বজলু ভাইয়ের টেবিলে। নমিত হয়ে বলি, আমার লেখার ভক্ত ছিলেন তিনি, ভূয়সী প্রশংসা করতেন সবার কাছে, নিজের লেখায়ও ব্যবহার করতেন আমার বক্তব্য। শেষ দেখা হয়েছিলো হছর তিনেক আগে - ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।সে বছর ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে আমার লোক বক্তৃতা ছিলো মানব উন্নয়ন বিষয়ে। মকসুদ ভাই ছিলেন সভাপতি। সভাপতির ভাষণে চমৎকার বলেছিলেন। মানুষের উন্নয়নই যে প্রগতির চূড়ান্ত, তা বলেছিলেন সবাইকে। প্রশংসা করেছিলেন আমার বক্তব্যের - একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন তার সঙ্গে। বড় মমতার সঙ্গে শ্রোতৃবর্গকে জানিয়েছিলেন আমার বাংলা লেখা বিষয়ে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আমি আপ্লুত হয়েছিলাম।
সপ্তাহ দু’য়েক পরে কাকতালীয় ভাবেই আবার তার সঙ্গে গুলশানে দেখা হয়ে যায় একটি কফির দোকানে। সেদিন ছিলো মার্চের ৩ তারিখ। সন্ধ্যেবেলায় শামীম আর আমি কফি খেতে গেছলাম। হঠাৎ সেখানে উপস্হিত মকসুদ ভাই, রুবাইয়াৎ ও তৌহীদ। টেলিভিশন অনুষ্ঠান শেষে কফির তেষ্টা মেটাতে এসেছেন সেখানে তিনজন। তারপর আর কী? বড় টেবিল ঘিরে পাঁচজনের দীর্ঘ আড্ডা। ওইসব ছোট ছোট কথাই আজ বড় বেশি মনে পড়ছে। আলোচনা সভা, পত্রিকা অফিস, টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অনেকের সঙ্গেই দেখা হবে, কিন্তু শে^তশুভ্র বসনের মকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে না। সে সত্যটিই বড় বেদনার। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :