শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৮:০২ সকাল
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৮:০২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চেয়ারম্যানের বিলাসিতা: ৩৭ ব্রিজ এক ইউনিয়নে

ডেস্ক রিপোর্ট: হাটে ব্রিজ, মাঠে ব্রিজ, খালে ব্রিজ এমনকি সড়কেও ব্রিজ। কারণে অকারণে নিজ এলাকায় ৩৭টি ব্রিজ নির্মাণ করেছেন তিনি। কোটি কোটি টাকার এসব অপ্রয়োজনীয় ব্রিজের অর্থায়ন হয়েছে সরকারি টাকায়। বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম এসব ব্রিজ নির্মাণ করে পরিচিতি পেয়েছেন ‘ব্রিজ চেয়ারম্যান’ হিসেবে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজ এলাকায় ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করাই ছিল আনোয়ারুল ইসলামের নেশা। এই নেশা থেকেই তিনি তার নিজ ইউনিয়নে নির্মাণ করেছেন ৩৭টি ব্রিজ ও কালভার্ট।

সরকারের এলজিইডি অধিদফতরের অর্থায়নে একের পর এক এসব অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ হলেও এ দফতরের পক্ষ থেকে কখনো এগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা হয়নি।

এলাকাবাসী বলছেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং নিজের প্রভাব জাহির করতে তার এলাকায় এখন ব্রিজের ছড়াছড়ি। বদ্ধ পুকুর থেকে শুরু করে খেলার মাঠ ও জমি কোনো স্থানই এড়িয়ে যায়নি চেয়ারম্যানের দৃষ্টি।

অপ্রয়োজনীয় এসব ব্রিজ ও কালভার্ট নিয়ে বিড়ম্বনাও কম নয়। অনেক স্থানে দেখা গেছে সদ্য নির্মিত কালভার্ট বন্ধ করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। কোনো স্থানের ব্রিজ ব্যবহারই হয় না।

এলাকাবাসী ইউপি চেয়ারম্যানের এই ব্রিজ বিলাসের পেছনে তার বড় ভাই আতাউর রহমানের অবদানের কথা বলেছেন। সরকারের প্রভাবশালী আমলা হওয়ার কারণে মূলত তার সুপারিশেই একের পর এক এসব ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণে কখনো কার্পণ্য করেনি এলজিইডি অধিদফতর।

ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নটি মাত্র ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এবং ২৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। এই ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে ব্রিজ। চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামের নিজের গ্রাম সাতটিকুরিতে ব্রিজের পরিমাণ একটু বেশি। এই গ্রামেই একটি মসজিদের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে ৪০ মিটার দীর্ঘ একটি লম্বা ব্রিজ। এটি নির্মাণে এলজিইডির ব্যয় হয় কোটি টাকা।

এলাকায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে অনেক তথ্য।

গ্রামের মুজাহিদ নামের এক যুবক বলেন, ‘এটি আর কী দেকপেন। হামাকেরে গোটাল গাওত’ইতো বিরিজ আছে। অল্পিএনা ঘুরলেই দেকপেন। এমন অনেক জাগা আছে যেটি মানুষজন যায়ই না, কিন্তু সেটিও বিরিজ করিছে চেয়ারম্যান।’

মসজিদের সামনে ব্রিজ নিয়ে কথা হয় আবুল প্রামাণিক নামের আরও একজনের সাথে। তিনি জানান, তাদের ব্রিজের নিচ দিয়ে পানিপ্রবাহের কোনো ব্যবস্থা নেই। দুই পাশে ঘরবাড়ি ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে জায়গাটি এখন একটি নিচু গর্ত মাত্র। মাটি কেটে উঁচু করলেই এই স্থানটি চলাচলের উপযোগী করা যেত। কিন্তু সেখানে করা হয়েছে লম্বা ব্রিজ।

অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে আরও একটি বড় উদাহরণ হলো বিশাড়দিয়াড়। এই ব্রিজটি যে স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে সেটি আজগর আলী নামের এক ব্যক্তির জমি। এই স্থানে ছোট একটি গর্ত তৈরি হওয়ায় তিনি সেখানে মাছের চাষ করেন।

জমির মালিক আজগর আলীর ভাতিজা মোহাম্মদ আলী জানান, তার চাচা জমিটি রাস্তার জন্য দান করেছেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওই স্থানে রাস্তা না করে সেতু করা হয়েছে। এই সেতু দিয়ে সারাদিন একশ জন লোকও চলাচল করে না।

স্থানীয় এলজিইডি বিভাগ জানায়, এই সেতু নির্মাণ প্রকল্প ঢাকা থেকে পাস করা হয়। এরপর টেন্ডার আহ্বান করে কাজ শুরু করা হলেও দুর্গম এলাকা হওয়ায় ঠিকাদার সেখানে কাজ করেনি। পরে সেখানে দ্বিতীয় দফায় আবার টেন্ডার আহ্বান করে কাজ করা হয়। এরই মাঝে ৬৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩.৫ মিটার প্রস্তের ব্রিজটির ব্যয় ১১ লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫০ লাখ টাকায়।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বিশাড়দিয়াড় ব্রিজের চারপাশে উঁচু জমি। ব্রিজটিতে যাওয়ার জন্য কোনো সংযোগ সড়ক নেই। কোনো রকম যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়, এরকম একটি তীরের মতো বাঁকানো সড়ক দিয়ে হাঁটলে ব্রিজে পৌঁছানো যাবে। চারপাশে জঙ্গল আর ঝোঁপঝাড়ে ঢাকা জায়গাটিতে এমনিতেই মানুষ চলাচল অনেক কম।

সেতুর সামনেই রয়েছে আবু বক্কর নামের একটি ব্যক্তির বাড়ি। তিনি জানান, ওই স্থানে মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের কথা ছিল। এখন ব্রিজ হওয়ার কারণে তার বাড়িটিই সামনে পড়েছে। তবে তিনি চলাচলের সুবিধার্থে বাড়ির জায়গা ছাড়বেন না। প্রয়োজনে ওখানে বাঁকা সড়ক হলেও তাতে তার করার কিছুই নেই।

গোপালনগর ইউনিয়নে বেশ কয়েক দিন ঘুরে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বললে তারা এটাকে চেয়ারম্যানের ব্রিজ বিলাস বলে আখ্যায়িত করেন। তাদের মতে, গ্রামের অনেক সমস্যা বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব ব্রিজ করার দিকে মনোযোগী হয়েছেন।

এ ব্যাপারে এলজিইডি অধিদফতরে খোঁজ নিলেও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান ভেতরের কথা।

তিনি বলেন, ‘ভাই আমরা নিজেরাও জানি না কোন স্থানে কত বড় ব্রিজ হবে। একযুগ আগে যিনি এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন তিনি এখন অবসরে। মূলত প্রধান প্রকৌশলীর অফিস থেকেই সরাসরি বেশির ভাগ কাজের নির্দেশনা এসেছে। আমরা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছি মাত্র। এ কারণে অনেক স্থানেই অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ হয়েছে। এখন এই ব্রিজগুলো এলজিইডি বিভাগের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে একটি মসজিদের সামনে ব্রিজ করার জন্য নির্দেশনা আসে। সেখানে ৫০ মিটার ব্রিজ করতে গিয়ে দেখা যায় জায়গাটিতে ৪০ মিটার গ্যাপ রয়েছে। পরে অনুমোদিত অংশ থেকে ১০ মিটার বাদ দিয়ে কেটে ব্রিজ কমিয়ে ফেলা হয়। এভাবেই কাজ হয়েছে প্রায় প্রতিটির।

এলজিইডি অধিদফতর ধুনট উপজেলার সাবেক প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ জানান, আমরা মূলত যে স্থানে পানিপ্রবাহ আছে, রাস্তা থাকায় জনচলাচল বিঘ্নিত হতে পারে এমন স্থান চিহ্নিত করে সেখানেই ব্রিজ করি। এক্ষেত্রে এখানে যা হয়েছে সেটা আমি এখন এসে দেখছি।

গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামের বড় ভাই আতাউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি উন্নয়নকাজে সহায়তা কিছু করেছি এটা ঠিক। তবে কোনটা অপ্রয়োজনীয় এবং কোনটা প্রয়োজনীয় সেটা নির্ধারণ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের।’

আলোচিত আনোয়ারুল ইসলাম পরপর তিনবার চেয়ারম্যান থাকার পর গত নির্বাচনে ভোটে হেরেছেন। এখন তিনি জমিজমা দেখাশোনা করেন।

গোপালনগর ইউনিয়নের সেই সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল দাবি করেন, তার এলাকায় নির্মাণ করা কোনো ব্রিজই অপ্রয়োজনীয় নয়। তিনি প্রয়োজনের তাগিদেই এসব স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

প্রয়োজনীয় হলে এখন এগুলো অপ্রয়োজনীয় ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এলজিইডি অনেক ব্রিজ ও কালভার্টের সংযোগ সড়ক করে দেয়নি। এ কারণে মানুষ এখন ভোগান্তিতে পড়ছে। আর এখন মনে হচ্ছে সেগুলো অপ্রয়োজনীয়। সূত্র: জাগো নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়