শিরোনাম
◈ টেকনাফের পাহাড় থেকে নারী শিশুসহ ৬৬ জন উদ্ধার! ◈ খেলাফত মজ‌লি‌সের মামুনুল হক হঠাৎ আফগানিস্তান সফরে কেন? ◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পে নেপালকে ৪-০ গো‌লে হারা‌লো বাংলাদেশ ◈ শ্রীলঙ্কার প্রতি বাংলা‌দে‌শের সমর্থন, চোখ এড়ায়নি লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের ◈ আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের ফল যেমন হলে লাভ বাংলাদেশের ◈ নির্বাচনী দায়িত্বে অপরাধের সাজা বাড়ছে: অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৫:২৯ সকাল
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৫:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শায়খ আহমাদুল্লাহ: কাছে আসার সাহসী গল্প, যুবসমাজকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র

শায়খ আহমাদুল্লাহ: প্রতিবছর আমাদের দেশে “ক্লোজ আপ কাছে আসার সাহসী গল্প” নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই এটি আরম্ভ হয়। যুবক-যুবতীদেরকে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎসাহ দেয়া হয় যে, তোমরা তোমাদের অবৈধ ও হারাম সম্পর্ক এবং এই সম্পর্কের মাধ্যমে কৃত অসামাজিক কর্মকাণ্ডের গল্পগুলো বলো। তারা এসব গল্প থেকে বাছাইকৃত আকর্ষণীয় গল্পগুলো নিয়ে নাটক নির্মাণ করে টেলিভিশনে প্রচার করে। যুবকদেরকে তাদের কৃত অবৈধ ও হারাম কাজ প্রকাশ করার জন্য উৎসাহিত করা হয় এবং এর মাধ্যমে এই জাতীয় কাজগুলো করার জন্য অন্যদেরকে উস্কানি দেয়া হয়। এটি আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির জন্য মোটেই লাভজনক নয়, বরং ক্ষতিকর। ক্ষেত্রবিশেষ এটি ধর্ষণ, হত্যা, ভ্রুণহত্যা, আত্মহত্যা ও নানা রকম অনাচার বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তথাকথিত “কাছে আসার সাহসী গল্প” থেকেই অনেক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি নিহত অনুশকার ঘটনা এর বড় প্রমাণ; হারাম সম্পর্ক যাকে অনন্তের যাত্রী বানিয়ে ছেড়েছে। এটি স্রেফ উদাহরণ মাত্র। এরকম উদাহরণ দিতে চাইলে অসংখ্য দেয়া যাবে।

কাছে আসার সাহসী গল্পে কখনো দেখা যাবে না, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান মা-বাবার নিকট ফিরে এসে বাধ্যগত হয়েছে, বড়ভাইয়ের সঙ্গে বৈরিতা পোষণকারী ছোটভাই নিজের ভুল বুঝতে পেরে একাত্ম হয়েছে; তদ্রুপ অন্যান্য আত্মীয়ের সঙ্গে ছিন্ন হওয়া সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে।

এরা কাছে আসার কোন্ গল্পগুলো শোনায়? তারা কাছে আসার যে গল্পগুলো শোনায়, তা মূলত জাহান্নামের কাছে আসার গল্প। সেই কাছে আসা মানে মা-বাবা থেকে দূরে সরা, ভাই-বোন থেকে দূরে সরা, সমাজ থেকে দূরে সরা, জান্নাত থেকে দূরে সরা; কিন্তু জাহান্নামের নিকটবর্তী হওয়া।

মাত্র কয়েকদিন আগে আপনারা অনুশকা ও দিহানের ঘটনা শুনেছেন। একই ধরনের ঘটনা গাজীপুরের একটি রিসোর্টেও ঘটেছে। ঢাকার কোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে। মোদ্দাকথা, তথাকথিত কাছে আসার সাহসী গল্পের পরের গল্পটা কখনো সুখকর হয় না। এজন্য তারা পরের গল্পটা কখনো শোনায় না। যারা আমাদের যুবকদেরকে অধঃপতিত করতে চায়, বিপথগামী করতে চায়— তাদের বিরোদ্ধে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে।

প্রিয় যুবক, হারাম তোমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে; শয়তান তোমার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে আছে। মনে রাখবে, বিয়ের আগে যারা তথাকথিত প্রেম-ভালোবাসায় লিপ্ত হয় বিবাহ-পরবর্তী পবিত্র জীবনের আসল আনন্দের স্বাদ থেকে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বঞ্চিত করেন। এজন্য সবাইকে বিবাহ-বহির্ভূত অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। স্রোতের বিপরীতে চলা শিখতে হবে। আমরা যে কাছে আসার গল্প শোনাব, তা আল্লাহর কাছে আসার। আমি আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য মাদক ছেড়ে দিয়েছি, সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে দিয়েছি, হারাম সম্পর্ক ছিন্ন করেছি— আমরা এই জাতীয় গল্পগুলো শুনব ও শোনাব। আমরাও যুবকদেরকে বলব, তোমরাও কাছে আসার গল্প শোনাও— আল্লাহর কাছে আসার। শয়তানের দোসরদেরকে জানিয়ে দাও, আমরা শয়তানের কাছে আসার নয়; রহমানের কাছে আসার গল্প শোনাব। যে যুবক ধূমপান করতেন, তিনি ধূমপান ছেড়ে দেয়ার গল্প শোনাবেন; যিনি হারাম সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি তা ছিন্ন করার গল্প শোনাবেন।

মুসলিম যুবকদের যে চেতনা থাকার কথা, যা ছিল আবদুল্লাহ বিন উমর রা.-এর মধ্যে, আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রা.-এর মধ্যে, বিলাল রা.-এর মধ্যে, সুহায়ল রা.-এর মধ্যে, আম্মারের মধ্যে এবং অন্যান্য যুবক সাহাবীদের মধ্যে— সেই চেতনা যেন মুসলিম যুবকদের মধ্যে না থাকতে পারে, তাদের চেতনা যেন ভোঁতা হয়ে যায়, লুপ্ত হয়ে যায়— সেজন্য নাস্তিক্যবাদী অপশক্তি তাদেরকে প্রেম-ভালোবাসায় আচ্ছন্ন রাখার জন্য নাটক-সিনেমা ও গল্প-উপন্যাসের মাধ্যমে প্ররোচিত করে। এসব মুসলিম যুবকদের জন্য কল্যাণকর তো নয়ই, বরং ক্ষতিকর— এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

“কাছে আসার সাহসী গল্প” আমাদের যুবসমাজকে নির্লজ্জ হতে প্ররোচিত করছে। একসময় মানুষ অসামাজিক কাজ করতে চাইলে একটু হলেও ভাবত, হারাম সম্পর্ক করার আগে একটু হলেও চিন্তা করত। কাছে আসার সাহসী গল্প যুবসমাজকে নির্লজ্জ ও দুঃসাহসী করে তুলেছে। এখন যুবকদের একটা অংশ বুক ফুলিয়ে নিজের নির্লজ্জতার গল্প প্রচার করে বেড়ায়। কীভাবে মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, অসামাজিক কাজ করে কীভাবে সমাজচ্যুত হয়েছে—এক শ্রেণীর যুবক তা অবলীলায় বলে বেড়ায়। এজন্য কাছে আসার সাহসী গল্পের উদ্যোক্তারা অনেকাংশে দায়ী। অপরাধ করার পর যদি মানুষের মধ্যে অপরাধবোধ না থাকে, তাহলে মানুষ অপরাধ থেকে সরে আসতে পারে না। অপরাধ করার পর অপরাধবোধে তাড়িত হওয়া মুমিনের আলামত। অপরাধবোধ লুপ্ত হয়ে যাওয়া ঈমানহারা হয়ে যাওয়ার লক্ষণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি তোমাকে তোমার কৃত পুণ্যকর্ম আনন্দ দেয় এবং পাপকর্ম পীড়া দেয়, তাহলে তুমি মুমিন।’ [১] দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজ থেকে ধীরে ধীরে অপরাধবোধ লুপ্ত হওয়ার পথে। কৌশলে অপরাধীর মন থেকে অপরাধবোধ সমূলে উৎপাটন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। অতএব এসবের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে।

প্রিয় যুবক ভাইদের প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান, যৌবনকালে আল্লাহর জন্য কাজ করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যৌবনের ইবাদত সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। রাসূল আকরাম সা. বলেছেন, কিয়ামতের দিন কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া নিজের পা নাড়াতে পারবে না। তন্মধ্যে একটি হলো, যৌবনকাল কীভাবে কাটিয়েছ, তার হিসাব। [২] যদি বলতে পারেন, আমি আমার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছি, নামায পড়েছি, কুরআন তিলাওয়াত করেছি, হাদীস পড়েছি, মানুষের উপকার করেছি, মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করেছি, ভাই-বোনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছি—তাহলে কিয়ামতের ভয়াবহ মুহূর্তে বিপদমুক্ত হতে পারবেন।

আজকের যুবসমাজ উচ্ছন্নে যাচ্ছে। যুবসমাজের একাংশ যেমন কল্যাণকর কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, সামাজিক কাজ করছেন; তেমনি যুবসমাজের আরেক অংশ উচ্ছন্নে যাচ্ছে, বিপথগামী হচ্ছে, বিভ্রান্ত হচ্ছে। এমনকি যুবকদের অনেকে মুরব্বিদের সম্মান করে না। রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুরব্বিদের সম্মান করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’

[৩] যারা এদেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করতে চায়, পরিবার-ব্যবস্থা বিনষ্ট করতে চায়, পরকীয়ার প্রসার চায়, সন্তানদেরকে মা-বাবার অবাধ্য বানাতে চায়, যুবকদের সমাজ-বিরোধী হওয়ার উস্কানি দেয়, অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে চায়, ধর্ষণ ও হত্যা সহজ করতে চায়— তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে; তাদের অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে। যারা এদেশে ব্যবসা করার পাশাপাশি এদেশে অশ্লীলতার বিস্তার করে, যুবসমাজকে সমাজত্যাগের উস্কানি দেয়, পরকীয়ায় উদ্বুদ্ধ করে—তাদের পণ্য বর্জন করা আমাদের ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব।

ইউনিলিভার ও ক্লোজ আপ কর্তৃপক্ষকে বার্তা দিতে হবে যে, তোমরা যদি আমাদের সমাজ ধ্বংসের অপচেষ্টা করো, তাহলে আমরা তোমাদের পণ্য বর্জন করব। এটা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। তোমরা এদেশে ব্যবসা করছ, ভালো কথা। কিন্তু এদেশ থেকে পয়সা-কড়ি নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের ঈমানও নিয়ে যাবে, আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংস করবে, আমাদের পরিবার-ব্যবস্থা ভেঙে দেবে, তোমাদের সমাজের মতো অশ্লীলতা আমাদের সমাজেও ছড়িয়ে দেবে— তা আমরা হতে দিতে পারি না।

ইউনিভার কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি যে, তোমরা যদি অশ্লীলতা বিস্তারের কার্যক্রম বন্ধ না করো—তাহলে এদেশের উলামায়ে কিরাম তোমাদের পণ্য বর্জন করার ডাক দিতে বাধ্য হবেন। এদেশের প্রত্যেকটি মসজিদের মিম্বার থেকে ইউনিলিভার বর্জনের আওয়াজ ঘোষিত হবে ইন শা আল্লাহ।
———————————————————————————————————————————
[১] মুসনাদে আহমাদ-২১১৬৬; শুয়াবুল ঈমান-৫৩৬২।)
[২] সুনান তিরমিযী-২৪১৬; মুসনাদে আবি ইয়া’লা-৫২৭১; শুয়াবুল ঈমান-১৬৪৭।
[৩] মুসনাদে আহমাদ-৬৯৩৮।
অনুলিখন: আবুল কাসেম আদিল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়