ডেস্ক রিপোর্ট : শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে পরীক্ষার্থীদের জন্য আগামী ১৩ মার্চ থেকে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ৩১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদকে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মাস্টার্স ও অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থীদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে, যাতে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হলে ওঠানো যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরীক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়নের পাশাপাশি হলগুলোতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। হল খোলার ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত। তবে হলে তোলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এর আগে গত জুলাই থেকে অনলাইনে পাঠদান শুরু হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে করোনার কারণে পরীক্ষা বন্ধ থাকায় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান। গত ডিসেম্বরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থীরা যা বলছেন :করোনার কারণে এক বছর নষ্ট হওয়ায় আক্ষেপ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ২০১৯ সালে অনার্স শেষ হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী ২০২০ সালে মাস্টার্সও শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাস্টার্সের একটা সেমিস্টারও শেষ হয়নি। অবশেষে হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। তবে হলে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার ও ক্যাম্পাসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত শেষ করতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও সংক্ষিপ্ত সময়ে পরীক্ষা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করার দাবিও জানান তিনি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চর্চা এক রকম বন্ধ। সবাই ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। তাই সবকিছু বিবেচনা করে আগামী ১৩ মার্চ হল খোলা যৌক্তিক মনে করছি। ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা এখনও হয়নি। তাদের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত।
চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী জিহাদুল ইসলাম জানান, অনেক এক্সাইটেড তিনি। কারণ, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে এবং নতুন উদ্যমে পড়াশোনা করতে পারবেন।
হল প্রাধ্যক্ষদের বক্তব্য :মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে হলে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারকাজ চলছে। কয়েক দিন আগে হল স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রস্তুত করতে একটি কমিটি করে হাউস টিউটরদের বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন বলেন, হল খোলার বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির বেশ কয়েকটি সভা হয়েছে। বিভাগ থেকে তালিকা দেওয়া হলে সে অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের হলে তোলা হবে।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, হলে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সব সময় স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা থাকবে। শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, হলের কক্ষ বাদে অন্য সব স্থানই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। আশা করছি, ১৩ মার্চের আগেই ডাইনিং-ক্যান্টিন প্রস্তুত হয়ে যাবে। শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীরাই যেন হলে ঢুকতে পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মজিবুর রহমান বলেন, হল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ছোটখাটো সংস্কারসহ হল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। বাকি যে কাজ চলছে, তা এ মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করছি। হলের পানির সংযোগ বারবার পরীক্ষা করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা না হয়।
স্যার এএফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, প্রভোস্ট কমিটির পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী হলে কাজ চলছে এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হচ্ছে। পরীক্ষার্থী ছাড়া কেউ যাতে হলে উঠতে না পারে, সে জন্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেখিয়ে ঢুকতে হবে।
কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীম বানু বলেন, হলের দুটি ক্যান্টিনের মধ্যে অন্তত একটি সীমিত পর্যায়ে খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। হলে নতুন পানির ফিল্টার বসানো হচ্ছে। করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি পোস্টার আকারে হলের সব জায়গায় লাগানো হবে।
প্রশাসনের বক্তব্য :বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, সীমিত আকারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাস্টার্স ও অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী হলে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কার থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলছে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে হলে শিক্ষার্থীদের জীবনাচার কেমন হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রস্তুতের কাজ চলছে। - সমকাল