দীপক চৌধুরী: আমাদের অগ্রগতির ট্রেন মহাসড়কে। কিন্তু কিছু ব্যক্তি, কিছু কীট, কিছু দুর্নীতিবাজ আমাদের পা টেনে নীচে নামাতে চাইছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ধারাবাহিকভাবে গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতির সকল সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ^ সভায় উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, সাহসিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আজ বিশ^নন্দিত। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে আসাধারণ জনপ্রিয়তায় সরকার গঠন করেন। একইভাবে বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় গণরায় দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চলমান অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখে। আজ সারা বিশে^ বিস্ময়কর বিষয় বঙ্গবন্ধুকন্যাকে নিয়ে।
কূটনৈতিক অঙ্গনে আজ নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিভাবে একই সঙ্গে ভারত ও চীন এই দুই বৃহৎ দেশের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক রাখছেন, তা নিয়ে বিস্মিত পশ্চিমা অনেক কূটনীতিকও। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার সিদ্ধান্তগুলো নেয় নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে। চীন ও ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাংলাদেশ কখনো যুক্ত হয় না। অন্যের ভৌগোলিক সীমারেখাকে বাংলাদেশ সম্মান করে। জাতিসংঘ সনদে যে নীতিগুলোর কথা বলা আছে তা বাংলাদেশ অনুসরণ করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “শেখ হাসিনার সরকারের পররাষ্ট্রনীতিই বাংলাদেশকে এমন অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কারো শত্রু নয়। সবার বন্ধু। আবার একই সঙ্গে বাংলাদেশ কারো লজুড়বৃত্তিও করে না।”
সারা দুনিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। কিন্তু দেশের ভেতর কিছু কীট রয়েছে, কিছু দুর্নীতিবাজ, মানব পাচারকারী রয়েছে, ষড়যন্ত্রকারী কিছু রাজনৈতিক দলও রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের অর্জনকে নানাভাবে দমানো হচ্ছে। দলের বাইরের লোক ছাড়াও এরসঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কিছু লোক। তাঁরা দলের বিভিন্ন পদ দখল করে আছে। এসব বিতর্কিত লোকের বিষয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গণমাধ্যমে দেখলাম, আয়কর দিতে জব্দ ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলার অনুমতি চেয়েছেন এনামুল-রূপন। কে তারা, কী তাদের পরিচয়, তাদের চরিত্রটা কী?
একজন সাংবাদিক জানালেন, ট্যাক্স দেওয়ার অজুহাত তুলে জব্দ করা ব্যাংক হিসাব থেকে ৯ কোটি টাকা তোলার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন এনামুল হক ভূঁইয়া ওরফে এনু রূপন ভূঁইয়া। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা ক্যাসিনো কারবারি পুরান ঢাকার এই দুই ভাই ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে গতকাল বৃহস্পতিবার নাকি এ আবেদন করেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করে দুদক। এনামুলের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁর বৈধ কোনো আয়ের উৎস নেই। তিনি ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধ উপায়ে আয় করা অর্থ দিয়ে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব তার আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। শুধু তাই নয়, এদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শাহেদুলসহ একটি সন্ত্রাসী চক্র। জুয়া আর প্রতারণা যাদের একমাত্র কর্ম।
আর রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়, রূপন ভূঁইয়া অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নামে-বেনামে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
কী রকম ভয়ঙ্কর তথ্য? অবাক হতে হয়! আমরা এগিয়ে যেতে চাই, যাচ্ছিও। কিন্তু কিছু কিছু বাধা এদেশের সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে। অথচ বাস্তবতা কী বলছে? শত চেষ্টা করেও কোনো কোনো সেক্টরে দুর্নীতিবাজদের উল্লাস বন্ধ করা যাচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যাচ্ছেন। পদ্মা সেতু, চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ী বিদ্য সংকল্প সৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ ট্যানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, পদ্মা সেতু নির্মাণ, সমুদ্র সীমানা বিজয়, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, ফ্লাইওভার নির্মাণ, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি, বয়স্ক ভাতা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান, ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যকর, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনমিক জোন নির্মাণ, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও কালভার্ট নির্মাণ, মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধি, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, কৃষিতে সফলতা, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সফলতা, এশিয়া হাইওয়ে রোড প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, হাতিরঝিল প্রকল্প, এলিভেটেড একপ্রেস প্রকল্প, মাদক নিধন, জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদান, দারিদ্র্যের হার নিম্ন পর্যায়ে রাখা, যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার, বিনামূল্যে প্রত্যেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিতরণ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান, গরিব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদান, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন, বিভিন্ন জেলায় বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, বিভিন্ন জেলায় শিল্প পার্ক নির্মাণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির চেষ্টা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ব্যবস্থা, বিধবা ভাতা প্রদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বড় অবদান।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক