মাসুদা ভাট্টি : বছর শেষ নিয়ে কোনোকালেই উত্তেজিত হতে পারিনি, সময় চলে যাওয়ার চেয়ে ক্ষতি আর কী হতে পারে? শিশুকাল থেকে বারবার এই ক্ষতির কথা শুনতে শুনতে বছরশেষে সবাই যখন পার্টির জন্য তৈরি হতো তখন আমার মনে হতো, আহারে কতো বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তা হয়তো বুঝতেই পারিনি সেভাবে! বিশ্বিবদ্যালয়ে বহুভাষী আর বহু সংস্কৃতির ছাত্রছাত্রীদের এই নতুন বছর উদযাপনের তোড়জোড়ে নিজেরে আমার একটু ‘খ্যাত’ই মনে হতো। লন্ডনের রাস্তায় থার্টিফার্স্ট উদযাপন এক দারুণ ব্যাপার, যারাই করেছেন তারাই নিজেদের স্মৃতিভারে সেটা জমিয়ে রেখেছেন, আড্ডায় সেটা টুক করে তুলে ধরে থাকেন প্রায়ই তারা। অথচ আমি যে ক’বার গেছি সে কবারই আমার বছর শুরুটা হয়েছে হয় ঠান্ডা শর্দি দিয়ে নয় ভাঙা বোতলের কাঁচে পা রক্তাক্ত করে! তবু মানুষের আনন্দ দেখে আমি উদ্বেলিত হই, বছরকার গ্লানি মানুষ ভুলে যেতে চায় শেষ দিনের উদযাপনে নতুনকে আবাহনে।
এবারও এই ঘোর অণুজীব-আক্রমণকালেও মানুষের নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর তোড়জোড় দেখে মনে হয়, জীবনতো আসলে এমনই, কোথাও বা কোনোকিছুই তাকে থামাতে পারবে না কোনোদিন। মৃত্যুর মতন অমোঘ নিয়তিও জীবনকে দমাতে পারে না, তো করোনাতো কোন্ ছার! আর মাত্র একদিন, পাঁচ বছরের শিশুও বলে, মামণি আমরা বছরের শেষ দিনে কিছুই করবো না, ঠিক আছে? অত ছোট বাচ্চাকেতো আর বলা যায় না, তাই এখানেই বলি, কী করি আমরা? কিছুই কি করি? করে কী হয়? কী করে কী হয়? উফ আবার বছরশেষের মনখারাপ করা দর্শন হচ্ছে! মানুষ জনমে বছর শেষ মানে আরেক বছরের অনিশ্চয়তায় প্রবেশ, সেখানে কী আছে কে জানে? এ যেন সেই সুখ যার কেউ দ্যাখা পায়নি... আমি যে সেই দিকে তাকিয়ে যাই দূরে হারিয়ে!
আপনার মতামত লিখুন :