আজহারুল হক : [২] বীরাঙ্গনা রেজিয়া বেগম কমলার স্বামী মারা যাবার ৮ দিনের মাথায় তাকে 'কলঙ্কিনী' নাম দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে ময়মনসিংহ নগরীর নানা জায়গায় ভাড়া থেকে জীবনের ক্রান্তিলগ্নে ক্যান্সার আক্রান্ত বীরঙ্গনা রেজিয়া বেগম ঠাঁই নিয়েছেন ময়মনসিংহ নগরীর চরকালীবাড়ি (মিলগেট) এলাকায় রেলওয়ের পরিত্যক্ত জমিতে।
[৩] ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে দালালের মাধ্যমে আশ্রয় পেতে হয়েছে রেলের পরিত্যক্ত জমিতে। সেই জমিতে স্বজনরা ছোট্ট একটি ঘর করে দিয়েছেন। সেখানেই দুই ছেলেকে নিয়ে গত দশ বছর ধরে বসবাস করছেন কমলা। সেখান থেকেও উঠিয়ে দিতে চলছে নানা হুমকি-ধমকি। ওই অবস্থায় অসুস্থ বীরাঙ্গনা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
[৪] ছেলের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বিক্রি করে একটি কেমোথেরাপি দিলেও বাকি রয়েছে আরও পাঁচটি। এখন ক্যান্সার আক্রান্ত বীরাঙ্গনা রেজিয়া বেগম কমলার চিকিৎসা আটকে আছে অর্থাভাবে। প্রশাসনের কাছে আবাস ও চিকিৎসার অর্থ সহায়তার আবেদন করেও সাড়া মেলেনি। এতে অসহনীয় দুরবস্থায় দিন কাটছে ময়মনসিংহ নগরীতে অবস্থান করা বীরাঙ্গনার।
[৫]বীরাঙ্গনা রেজিয়া বেগম কমলার বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের নওবাইত গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত আবদুল আজিজের মেয়ে তিনি। ২০১৭ সালের ১৩ জুন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান তিনি। তিনি চা দোকানে কাজ করে দুই ছেলেকে বড় করেছেন। কমলার দুই ছেলে আবু হানিফ (৩৮) ও আবুল কায়সার মানিক (৩৪) পরিবহন শ্রমিক। অভাবের কারণে ছেলেরা বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারেননি।
[৬] গত ৫ বছর আগে বুকের বাম পাশে টিউমারের মতো দেখা দিলে যন্ত্রনা শুরু হয় । চিকিৎসার জন্য যান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। বিষয়টি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা বিমল পালকে জানানো হলে, তিনি ময়মনসিংহ সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
[৭] পরে সেখান থেকে ঢাকা সিএমএইচে অপারেশন হয় তার।এরপর ধরা পড়ে ক্যান্সার। ছেলের একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে মার্চের দিকে একটি কেমোথেরাপি দেন। আরও ৫টি কেমোথেরাপি দিতে হবে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। ভাতার ১২ হাজার টাকা দিয়ে সংসার ও নিজের চিকিৎসা চালানো দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে করোনার কারণে সব আটকে গেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরে চিকিৎসা সহায়তার জন্য আবেদন করেও সাড়া মেলেনি।
[৮] অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্প থেকে ভূমিহীন কমলার আবাসের ব্যবস্থা করার জন্য চলতি বছরের ১১ মার্চ প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেটির কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আক্ষেপ করেন তিনি।
[৯] বীরাঙ্গনার দুই ছেলের বয়স বাড়লেও তাদের ভাগ্যে বিয়ে জুটছে না। বিয়ের আলাপ শুরু হলেই মানুষ ভেঙে দেয়। মা বীরাঙ্গনা ছিলেন, এ কথা শুনে কেউ বিয়েতে রাজি হন না। বীরাঙ্গনা রেজিয়া বেগম কমলা বলেন, কলঙ্ক নিয়ে বেঁচে রয়েছি। মানুষ শুনলে ঘৃণার চোখে দেখে। সব মুক্তিযোদ্ধা যদি ভালো থাকে তবে আমার কেন এ অবস্থা? তিনি আরও বলেন, আমার কষ্টের কথা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই। চিকিৎসা ও স্থায়ী আশ্রয় চাই।
[১০] ময়মনসিংহ মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সাবেক সহকারী কমান্ডার (প্রচার ও পুনর্বাসন) বিমল পাল বলেন, কমলার চিকিৎসার জন্য তিনি নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। অর্থাভাবে কেমোথেরাপি দেওয়া যাচ্ছে না। সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করলেও অগ্রগতি নেই। ভূমিহীন বীরাঙ্গনা আবাসনের জন্য আবেদন করলেও সেটিরও কোনো অগ্রগতি নেই। দ্রুত বীরাঙ্গনার চিকিৎসা ও স্থায়ী আবাসের ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
[১১] ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, বীরাঙ্গনা রেজিয়া বেগমের তথ্য চাওয়া হয়েছে। আমরা তার থাকার একটা ব্যবস্থা করে দেব। পাশাপাশি চিকিৎসার বিষয়টিও দেখা হবে। সম্পাদনা :জাহাঙ্গীর