শিরোনাম
◈ র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে সুপারিশ করা হবে: ডোনাল্ড লু ◈ সালমান এফ রহমানের বাসায় নৈশভোজে ডোনাল্ড লু ◈ সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ◈ ঢাকার ২৬টি হোটেল-রেস্তোরাঁয় পুলিশ সদস্যদের জন্য মূল্য ছাড়  ◈ ‘জেনোসাইড জো’: যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভ বাইডেনের পুনর্নির্বাচনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে ◈ গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড দেশের ওপর ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে: টিআইবি ◈ তাসকিনকে সহ অধিনায়ক করে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ঘোষণা ◈ আজ ঘরে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক ◈ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের কনডেম সেল নিয়ে  রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ ◈ হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন বিএনপি নেতা আলাল

প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০২০, ০৯:১০ সকাল
আপডেট : ২১ নভেম্বর, ২০২০, ০৯:১০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]থানা যেন ডাম্পিং স্টেশন, নষ্ট হচ্ছে শত শত কোটি টাকার গাড়ি

ডেস্ক রিপোর্ট : [২]শত শত যানবাহন। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কি নেই? সব ধরনের যানবাহন পড়ে রয়েছে। ধুলায় ধূসরিত যানবাহনের কোনোটির চাকা বসে গেছে, কোনোটির আসন নেই, কোনোটির দরজা নেই, কোনোটির গ্যাস উধাও, আবার কোনোটির শুধু কাঠামো পড়ে আছে। বছরের পর বছর ধরে ডিএমপির থানাগুলোতে এভাবে পড়ে রয়েছে কোটি টাকার গাড়ি। দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে, ঝড়বৃষ্টিতে ভিজে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে হাজারো গাড়ি। গত কয়েকদিন ঢাকা মহানগরীর শাহবাগ, মতিঝিল, সুজবাগ, শেরেবাংলা নগর, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী, পল্টন, মিরপুর, পল্লবী, শাহআলী, কাফরুল, তুরাগ, দক্ষিণখান থানা ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

[৩]জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, থানায় যেসব গাড়ি রাখা হয়েছে সেসব গাড়িগুলো মামলার আলামত। এগুলো আদালতের সম্পত্তি, থানার নয়। আদালতের কথামতো গাড়িগুলো থানায় রাখা হয়। আইনি জটিলতার কারণে গাড়িগুলো দীর্ঘদিন থানায় রাখতে হয়। এতে সেগুলো নষ্ট হয়। তিনি আরো বলেন, অনেক থানার নিজস্ব জায়গা নেই। তাই বেশিরভাগ থানার কার্যক্রম ভবন ভাড়া করে পরিচালনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে ওইসব থানার ভেতরে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় মামলার আলমতগুলো রাস্তার পাশে রাখা হয়।

[৪]সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অসংখ্য গাড়ি পড়ে রয়েছে। কোনো কোনো গাড়ি ধুলায় ধুসরিত। জং ধরে কোনো গাড়ির নষ্ট হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক বহন, সড়ক দুর্ঘটনা বা আইন ভাঙার কারণে আটক করা হয় এসব যানবাহন। এর মধ্যে রয়েছে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। আইনি জটিলতার কারণে এসব যানবাহন বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকছে। রোদে পুড়ছে, বৃষ্টিতে ভিজছে। চুরি হচ্ছে যন্ত্রাংশ। হারাচ্ছে ব্যবহারের উপযোগিতা। নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ চাইলেই রক্ষা করা যায় এসব মূল্যবান যানবাহন। কিন্তু এ ব্যাপারে কারও কোনো উদ্যোগ নেই। উল্টো থানাগুলো অলিখিতভাবে ডাম্পিং স্টেশনে রূপ নিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, রাজধানীর আগারগাঁও, মিরপুর ও কাঁচপুরে গাড়ির ডাম্পিং স্টেশন থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। তাই বাধ্য হয়ে থানা প্রাঙ্গণে রাখতে হচ্ছে এসব যানবাহন। এতে থানার কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। অনেক সময় থানার সামনে বা আশপাশের সড়কে এসব যানবাহন রাখা হয়। ফলে সড়ক সংকুচিত হচ্ছে।

মতিঝিল থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানার সামনের রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে মোটরসাইকেল। রাস্তায় দু’পাশে প্রায় শ’খানেক মোটরসাইকেল অবহেলা ও অযত্নে সবগুলোই নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক মোটরসাইকেল থেকে দামি পার্টস, লাইট খুলে নেয়া হয়েছে।

শুধু মোটরসাইকেল নয়, ওই থানায় দুটি সিএনজি অটোরিকশা, একটি লেগুনা এবং তিনটি প্রাইভেটকার ফেলে রাখা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা মোড়ে যাওয়ার পথে থানার সামনে দুটি প্রাইভেটকার ফেলে রাখা হয়েছে। দু’টির মধ্যে একটি গাড়ির ইঞ্জিন নেই। গাড়ির গ্যাসও নেই। গাড়ির ভেতরে ময়লা রাখা আছে। গাড়ির ইঞ্জিন ও গ্যাস চুরি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন থানা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

শাহবাগ থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানার উল্টো দিকে রাস্তার উপর সম্প্রতি আগুনে পুড়ে যাওয়া দুটি বাস রাখা আছে। এছাড়াও একটি ট্রাক রাখা আছে। ট্রাকটি দীর্ঘদিন যাবত সড়কে ডাম্পিং অবস্থায় রেখেছে শাহবাগ থানা। এতে পথচারী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় অনেক সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
শুধু শাহবাগ থানার বাইরের রাস্তাই নয়, থানার ভেতরে এবং থানার দক্ষিণ দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে অলিখিত ড্রাম্পিং স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে কয়েকশ’ গাড়ি রয়েছে। গাড়িগুলোর মধ্যে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস রয়েছে। গাড়িগুলো খোলা আকাশের নিচে থাকায় নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া থানার দক্ষিণ দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ডাম্পিংয়ে বসে মাদকসেবীরা নিরাপদে মাদক সেবন করার অভিযোগ রয়েছে।

সবুজবাগ থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানার সামনের রাস্তায় একটি প্রাইভেটকার, লেগুনা, কয়েকটি মোটরসাইকেল রাখা আছে। এগুলোর মধ্যে প্রাইভেট কারটি ভালো থাকলেও বাকিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

শেরেবাংলা নগর থানা ঘুরে দেখা গেছে, থানার সামনে ৬ থেকে ৭টি প্রাইভেটকার রাখা আছে। এছাড়াও একটি বাস, বেশ ক’টি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মাইক্রোবাস রাখা আছে। গাড়িগুলোর মধ্যে কোনোটির সিট নেই, কোনোটির দরজা নেই, কোনোটির চাকা চুরি হয়ে গেছে, কোনোটির আবার গ্যাস উধাও, আবার কোনোটির শুধু বডি পড়ে আছে। কয়েকটি গাড়ির অবস্থা এতোটাই বেহাল ও ভাঙাচুরা যে ভাঙারির দোকানে বিক্রির যোগ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গাড়ির মালিক দৈনিক জানান, তিনি একটি মিনি ট্রাক কিস্তিতে ক্রয় করে ওই ট্রাক দিয়ে পানি বিক্রি করতেন। কিন্তু দুই বছর আগে এক দিন সকাল আটটার দিকে পুলিশ তার গাড়ি আটক করে। এক পর্যায়ে গাড়ি চালক, হেলপার ও মালিকের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা দেয়। পরে ওই মামলায় মালিক, চালক ও হেলপার এক মাস কারাভোগ করেন। এখনো ওই মামলায় হাজিরা দিচ্ছেন তারা।

ওই গাড়ির মালিক আরো জানান, মিটি ট্রাকটি একটি কোম্পানি থেকে কিস্তির মাধ্যমে ক্রয় করেছিলেন। কিন্তু কিস্তি পরিশোধ না করায় গাড়ির কাগজ হাতে পাননি। তবে গাড়িটি আনার জন্য অনেক বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তাই গত দুই বছর থেকে গাড়িটি থানার সামনে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে।

মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানা চত্ত¡রে অনেক গাড়ি পড়ে আছে। ওই গাড়িগুলোর অবস্থাও অনেক বেহাল। থানা সূত্র জানায়, অনেক গাড়ি প্রায় ১০ বছরের পুরোনা। গাড়িগুলোর মধ্যে অধিকাংশই প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল।

শুধু শাহবাগ, মতিঝিল, সুজবাগ, শেরেবাংলা নগর, মোহাম্মদপুর থানা নয়, বর্তমানে ডিএমপির সবগুলো থানা এখন ডাম্পিং জোনে পরিণত হয়েছে। তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী, পল্টন, মিরপুর, পল্লবী, শাহআলী, কাফরুল, তুরাগ, দক্ষিণখান, উত্তরা-পূর্বসহ ঢাকা মহানগরীর বেশ কয়েকটি থানা ঘুরে বহু জরাজীর্ণ গাড়ি দেখা গেছে।

থানা সংশ্লিষ্টরা বলেন, দুর্ঘটনা ছাড়াও মামলার আলামত হিসেবে এসব গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া এসব যানবাহন পড়ে আছে। দুর্ঘটনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি ফেরত নিতে মালিকদের অনীহা। এছাড়া মাদক পরিবহন ও অবৈধ মাল বহনে অভিযুক্ত মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগছে।

ঢাকা মহানগর আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, মামলার আলামত হিসেবে এসব গাড়ি সংরক্ষণের বিধান থাকলেও জায়গার অভাবে রাখা যাচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হওয়ায় বেশিরভাগ আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে। ইনকিলাব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়