দীপক চৌধুরী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদেরা নন, বিদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বেশি। কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা পেয়েছি ।’ বেশি অর্থ বিদেশে কারা পাচার করেন- এমন প্রশ্ন ছিল। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তবে টাকা পাচারকারী এসব রাজনীতিবিদ, সরকারি চাকুরে বা ব্যবসায়ী কারও নাম উল্লেখ করেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আমরা, সাংবাদিকেরা কেউ কেউ একে অপরের দিকে তাকালাম। যেখানে আমাদের প্র্যাকটিস হয়ে গেছে, সরকারি চাকুরে বা আমলাদের বিষয়ে কথা না বলা। আর বললেও অতি হিসেব করে। অথচ স্পষ্ট ও সত্যটাই প্রকাশ করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, মানবিকতা, জনগণ ও সমাজ সম্পর্কে এম এ মোমেনের চিন্তা-ভাবনা ও তীক্ষè দৃষ্টি রয়েছে। সেরা ডিপ্লোমেট হিসেবে চাকরির সুবাদে বিদেশ-বিভূঁইয়ে দীর্ঘদিন কাটালেও অরাজনীতিবিদ মানুষ ড. মোমেন একজন সুদক্ষ রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠায় অনেকের বিস্ময় প্রকাশ করাটাও অন্যায় নয়।
দারুণ মেধাবী ডিপ্লোমেট, সাবেক সচিব, স্পষ্টবাদী ও সুযোগ্য রাজনীতিবিদ ড. এম এ মোমেন বর্তমান সমাজে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বাস্তবতার চিত্র অকপটে স্বীকার করে থাকেন। এক আদর্শবাদী ও দূরদর্শীসম্পন্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি সুপরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত। রোহিঙ্গা ইস্যু সবচেয়ে বড় ইস্যু এখন। খেয়াল করেছি, তিনি বিশ্বদরবারে বাস্তবতার নিরীখে বিষয়টি সবসময় তুলে ধরে থাকেন। তাঁর স্পষ্টবাদী উচ্চারণ ও বক্তব্যের গুরুত্ব দিয়ে থাকে বিভিন্ন দেশও। বাংলাদেশের সেরা ডিপ্লোমেট হসেবে তাঁর চমকপ্রদ নেতৃত্ব জনগণকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। বিভিন্ন সময় তিনি যে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে থাকেন এবং গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়ে থাকে এতে বোঝা যায়, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’, ‘সংগঠন করার স্বাধীনতা’, ‘মানুষের সাংবিধানিক অধিকার’ সংক্রান্ত বিষয়ে ড. মোমেনের মতো স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারে না। জামায়াত-বিএনপির মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও তিনি প্রতিবাদী।
ড. মোমেন আমাদের বিস্ময়কর তথ্য দিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এসে বক্তৃতায়। গোপনে কানাডার টরন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে, কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাঁদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন। এ ছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে পাচারে শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা। তবে তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যে তথ্য বের হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, আসলে সংখ্যাটি তত নয়।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন, মিয়ানমার, ট্রান্সপারেন্সি, বঙ্গবন্ধুর খুনি ফিরিয়ে আনার চেষ্টাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন, আগ্রহী সাংবাদিকদের বিভিন্ন ইস্যুতে জানার বিষয়ে হাসিখুশিভাবে জবাব দিয়েছেন যা তাঁর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
আপনার মতামত লিখুন :