নিঝুম মজুমদার : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি হলে সেটি বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হবে, এই কথাটি বলবার ঠিক তিন দিন পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কিংবা এর অঙ্গসংগঠন থেকে একটি প্রতিবাদ কিংবা একটি শব্দও বের হয়নি। জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ঐতিহাসিক বিশেষ অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক কিছু নিয়ে কথা বলেছেন শুধু একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি চরমোনাই এর মূর্খ গন্ডারদের এই অসীম ধৃষ্টতা নিয়ে। সংসদে বাস পোড়ানো নিয়ে কথা হয়েছে, বাকশাল নিয়ে কথা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-চিন্তা-আকাক্সক্ষা নিয়ে কথা হয়েছে কিন্তু শুধু হয়নি তার ভাস্কর্যের প্রতি খয়রাতি শ্রেণির এই হুমকি নিয়ে।
এই ভয়াবহ ঘটনাটিতে এখন পর্যন্ত শুধু একজন মুখ খুলেছেন এবং তিনি বেশ শক্ত করে বলেছেন এই বাড়াবাড়ি বেশি হলে গন্ডারদের ঘাড় মটকে দেবার কথা। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী মোহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্রগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। নওফেলের কথার অন্য তর্জমা করতে গেলে বলতে হয়, যা হয়েছে সেটি বাড়াবাড়ি নয় কিন্তু আরেকটু বাড়লেই ঘাড় মটাকানো হবে। কিন্তু আমি কথার এই কূট বিতর্কে যাবো না। এতো নিরবতার ভীড়ে নওফেল এই কথা বলেছেন, এতোটুকু বলেছেন, এটি আমার কাছে অনেক।
নওফেল ছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বীচ্ছাসেবকলীগ, ওলামালীগ, মহিলা লীগ, তাঁতীলীগ, মৎসজীবি লীগ কিংবা আওয়ামী লীগ কিংবা সরকারের একজন সংসদ সদস্য, একজন মন্ত্রী, উপমন্ত্রী কিংবা দায়িত্বশীল কেউ এই ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি। অন্য সংগঠনগুলোর কথা যদি বাদও দিই, এক ছাত্রলীগ যদি ঠিক-ঠাক ভাবে এই গন্ডারদের বক্তব্যগুলোর বিরুদ্ধে একটা সমাবেশের ডাক দিতো, তাহলে শুধু ঢাকা শহরেই অন্তত ১০ লাখেরও বেশি ছাত্রলীগ কর্মীদের সমাগম হতে পারতো এবং এদের দেখিয়ে দেওয়া যেতো যে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে একটা নোংরা শব্দ উচ্চারণ করলে এর ফলাফল কি হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কোনো ব্যক্তি কটুক্তি করলে কিংবা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করলে নিকট অতীতেই আমরা দেখেছি যে কি করে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। এমনকি একটি কমা দিতে ভুল করায় এক ব্যাক্তির আওয়ামী প্রশংসামূলক স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধেও কয়েক সপ্তাহ আগে মামলা হয়েছে। অথচ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২১ ধারায় বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করে কিছু বললে সেটির বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে, এমন আইনী প্রোভিশন থাকলেও এতো কোটি কোটি আওয়ামীলীগারদের মধ্য থেকে কেউ একটি অঞ্চলে, একটি জেলা, একটি থানাতেও মামলা করবার সাহস দেখালেন না।
এটা বিশ্বাস করবার কোনো কারণ নেই যে চরমোনাই এর এসব ভন্ড-অশিক্ষিত-মূর্খ-গন্ডারদের আওয়ামীলীগ ভয় পেয়েছে। এখনো এলাকাভিত্তিক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের ডাকে লক্ষাধিক লোক জড়ো হতে পারে বলেই আমি নিশ্চিত। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রশ্ন এসেই যায় যে, আওয়ামীলীগের এই নিরবতার কারণ আসলে কি? গত সাড়ে ১১ টি বছর টানা ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ। রাস্তা-ঘাটে আপনি চোখ বন্ধ করে একটা ইট ছুঁড়লেও ইটে আঘাত প্রাপ্ত ব্যাক্তিটি নিশ্চিত করে একজন আওয়ামীলীগার-ই হবে। দুগ্ধপোষ্য থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত এখন জয়বাংলা ছাড়া কথা বলে না। মাঠ, ঘাট, প্রশাসন, অফিস, আদালত, স্টেডিয়াম, গোলপোস্ট,দোকান, মার্কেট, সড়ক-মহাসড়ক, যানবাহন সব কিছুই এখন আওয়ামীলীগ, সব কিছু এখন জয় বাংলা। তবুও কেন এই নিরবতা? কেন এই জয়বাংলার ‘মহাসাগরে’ শব্দ নেই? কেন একটি প্রতিবাদ নেই?