ডেস্ক রিপোর্ট : মুসলিম দেশ-সমাজের এই ক্রিকেটারের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দেশের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব তথা আলেম সমাজসহ আপামর জনতা, ধর্মীয় বিষয়ে এই খামখেয়ালিপনায় চটেছেন স্বয়ং সাকিব আল হাসানের ভক্তরাও। সাকিবের ছবিতে ক্রস চিহ্ন ব্যবহার করে তাকে বয়কটেরও ডাক দিয়েছেন ধর্মপ্রাণ মানুষেরা।
এরপর সোমবার এক ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চান সাকিব। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমেই বলতে চাই যে আমি নিজেকে একজন গর্বিত মুসলমন হিসেবে মনে করি। আমি সেটাই চেষ্টা করি পালন করার।’
ক্ষমা চাওয়ার ভিডিও ক্লিপটি দেখতে নিচে ক্লিক করুন :
সাকিব আল হাসান ক্ষমা চাওয়ায়, আলেম সমাজ ও ইসলামি ব্যক্তিত্বরা সাকিবকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন এবং এই অনাকাঙ্খিত ভুলের জন্য আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করে দেন, এই দোয়া করেন অনেকেই। দেশবরণ্য কয়েকজন আলেম ও ইসলামি লেখকদের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিচে দেওয়া হলো:
মুফতী রিজওয়ান রফিকী লিখেন, সাকিব আল হাসান কলকাতায় কালীপূজা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করার ব্যাপারে বিনয়ের সাথে অনুতপ্ত হওয়া ও ক্ষমা চাওয়া আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আল্লাহ তা'য়ালা তাকে ক্ষমা করে দিন।
যারা সাকিবের নাম বিকৃত করে শ্রী শ্রী...ইত্যাদি বলেছিলেন এবং তাঁর ছবি বিকৃত করেছেন, তাঁকে গালমন্দ করেছেন-তারা নিজেদেরকেই ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেননি। যারা তার বক্তব্য না শুনেই তাকে ইসলাম ত্যাগী বলেছেন তারা সীমালঙ্ঘন করেছেন।
কারো কোনো ভুল হলেই এক শ্রেণীর লোক তাকে নিয়ে ট্রল, গালমন্দ এবং নাম ও ছবি বিকৃতি ইত্যাদি আরম্ভ করেন। নিজেদের এসব ভ্রান্তকর্মের মাধ্যমে আদতে তারা ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি করছেন; অবশ্য তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছেন নিজের।
মহান আল্লাহ বলেছেন-'তোমরা পরস্পরকে মন্দ নামে ডেকো না'। (সুরা হুজরাত, আয়াত ১১)
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপকারী, অশ্লীল ও গালিগালাজকারী হয় না।’-জামে তিরমিযী হাদীস : ২০৪৩
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যদি কাউকে ফাসেক বলে, কিংবা কাফের বলে অথচ লোকটি এমন নয়, তাহলে যা সে বলেছে সেটা তার উপর বর্তায়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬৯৮}
সুবহা-নাল্লাহ! কতো কঠিন বিষয়! মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ধারণ করার তাউফীক দান করুন।”
মুফতী রফিকুল ইসলাম আল মাদানী লিখেন, সাকিব আল হাসানের বক্তব্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি শুনেছি। তার বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে সে অনুতপ্ত হয়েছে, দুঃখিত হয়েছে, মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে , । অবশ্য সে এবং যারাই এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত তাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।যে কাজটি সে করেছে ইসলামকে খাটো করার ইচ্ছায় বা কোন ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা রেখে করেছে এমনটা তার আলোচনায় বোঝা যাচ্ছে না।
অতএব আমি তাকে দুঃখ প্রকাশ করার জন্য অনুতপ্ত হওয়ার জন্য ভুল স্বীকার করার জন্য সাধুবাদ জানাই।
সমস্ত মুসলমানদেরকে অনুরোধ করব তাকে আমরা আপন করার চেষ্টা করি ।সত্যিকারের ইসলাম এবং ইসলামের নীতি ও আদর্শ তাকে বোঝানো এবং তাঁকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি।
মূল বিষয় উপলব্ধি করার জন্য আমরা আরো অপেক্ষা করি । তাকে নিয়ে কোন ধরনের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা এখন আর ঠিক হবে না।
সাথে সাথে যত নাস্তিক মুরতাদ এবং ইসলামকে নিয়ে কটাক্ষকারী রয়েছে তাদেরকেউ এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
মাওলানা আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ লিখেন, কাউকে এক পলক দেখে কিংবা তার সম্পর্কে অল্পকিছু জেনেই দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন না। হয়তো আল্লাহ্ তা'আলা তাকে আপনার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। তাকে অপছন্দ করার কারনে আল্লাহ আপনাকে অপছন্দ করবেন।
আসিফ মাহমুদ লিখেন, সাকিবের ঘটনাটা সবার জন্য শিক্ষা। কেন শিক্ষা? বলছি।
সাকিব বারবার বলেছে, 'আমার ইসলাম সম্পর্কে খুব একটা জ্ঞান নেই'। আমি তার এই কথাটা বুঝি, আর আপনাদেরও এটা বোঝা উচিত। আর আমি ভয় পাই সাকিবের মতো যারা আছেন, তাদের সবার জন্য। জ্ঞান না থাকার কারণেই সাকিব এখনো শির্ক উদ্বোধন করা আর শিরকের অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করার মধ্যে পার্থক্য করছে।
মূলত দুটোই সমান পর্যায়ের না হোক, কাছাকাছি পর্যায়ের গুনাহ। দুটোই অন্তত শিরকের ক্যাটাগরিতে পড়েছে। এটা সাকিব জানে না, তার মতো অনেকেই জানেনা। সাকিব অন্তত এটা বলেছে, কেউ যদি তাকে নাসীহাহ করতে চায়, সে সাদরে গ্রহণ করবে। এই ভাবনাটুকু আমাদের অনেকের মধ্যেই নেই। আমরা ভাবি- জানিনা এবং জানার দরকারও নেই। না জেনে গুনাহ করলে কি পার পেয়ে যাবেন?
ভুল, জানতে হবে। ইলম অন্বেষণ করা, দ্বীন সম্পর্কে জানা মুমিন নর-নারীর জন্য ফরজ করা হয়েছে। কেন করা হয়েছে? কারণ, যাতে আপনারা বুঝতে পারেন 'শিরকের উদ্বোধন করতে যাওয়া' অথবা 'তাদের কারো রিকোয়েস্টে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা' দুটোই শিরক। এই জ্ঞানটুকু না থাকলে আপনি কীভাবে 'গর্বিত মুসলিম'? সাকিবের জন্য দু'আ করি, সে যে কোনো আলিমের নাসীহাহ গ্রহণ করার ইচ্ছা করেছে, সেটা যদি মিন করে থাকে, তাহলে আল্লাহ যেন তাকে কবুল করেন।
যারা সাকিবের মতো আছেন, ইলম নেই। এটাই আপনাদের সময় রিয়েলাইজ করার। দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আখিরাত চিরস্থায়ী। দুনিয়াবি জ্ঞানের জন্য আমরা এতো সময় দেই, আখিরাতের জ্ঞানের জন্য কেন একটু সময় দিতে এতো অনিহা? একটু চেষ্টা করলেই তো হয়! একটু চেষ্টা করলেই তো পারেন। প্রিয় ভাইবোনেরা, এবার একটু সতর্ক হোন। আল্লাহর দ্বীনকে জানুন, ইসলামকে জানুন। ইসলাম জেনে, বুঝে, শিখে বুকভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে তারপর বলুন, "আমি একজন গর্বিত মুসলিম।"
কমরেড মাহমুদ লিখেন, পূজা ইস্যুতে ভারতে যাওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন সাকিব।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইউটিউব লাইভে সাকিব বলেছেন, ‘অনেকেই বলছে, আমি পূজা উদ্বোধন করেছি। যেটি আমি কখনোই করিনি। সচেতন মুসলমান হিসেবে আমি এটা করবো না। তারপরও হয়তো ওখানে যেয়ে ছবি তোলা আমার ঠিক হয়নি। সেটি যদি আপনারা মনে করে থাকেন তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ক্ষমা প্রার্থী।
সাকিব আরো বলেন - 'আমি আশা করবো, আপানারা এটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এরকম কোনও ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেটিও আমরা চেষ্টা করবো।’
তিনি আরও বলেন, আমি ইসলাম সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করবো আর কেউ যদি আমাকে এ সম্পর্কে ভালো কিছু জানাতে পারেন তাহলে আমি তা সাদরে গ্রহণ করবো।
সবাইকে আল্লাহ সঠিক পথ দেখিয়ে দিন আমরা এই দোয়া করি। যেহুতু ক্ষমা চাইছে, আর কোনদিন হবে না কথা দিয়েছে, তাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ...