লিহান লিমা: [২] হযরত মুহম্মদ (সা.) এর কার্টুন প্রদর্শন করার প্রতিবাদ জানিয়ে তুরস্ক, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, পাকিস্তান, মিশর ও ইরানের মতো মুসলিম দেশগুলোতে ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক উঠেছে। সিরিয়া ও লিবিয়াতে ফ্রান্সের পতাকা পোড়ানো হয়েছে। তবে ফ্রান্সের ব্যবসায়ীরা বলছেন রাজনীতি ও ধর্ম নিয়ে ক্যারিকেচারের দীর্ঘ ঐতিহ্যের কথা। ফ্রান্স২৪
[৩]ফ্রান্সের বৃহত্তম নিয়োগকারী ফেডারেশন (এমইডিইএফ) এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের পণ্য বয়কটকে ‘বোকামি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটির প্রধান জিওফ্রে রোক্স বলেন, ‘এটিকে ব্ল্যাকমেইল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি আমাদের ফ্রান্সের আদর্শকে হুমকি দেয়ার স্বরুপ। ব্যবসার ওপরে নীতি-আদর্শের স্থান দেখিয়ে দেয়ার এখনই সময়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এমইডিইএফ সরকারের অবস্থানকে সমর্থন জানাচ্ছে এবং এই হুমকি প্রতিরোধ করার জন্য কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছে।’
[৪]ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে পণ্য বয়কট করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘কিছু সংখ্যারিষ্ঠ চরমপন্থী পণ্য বয়কটের এই ভিত্তিহীন দাবী করছে।
[৫]ফ্রান্সের অর্থনীতিবিদ স্টেফানি ভিলার বলছেন ‘বয়কট ফ্রান্সের অর্থনীতির কিয়দাংশে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারবে। সামগ্রীকভাবে ফ্রেঞ্চ পণ্য বয়কট করা কঠিন। ফ্রান্সের এভিয়েশন ও লাক্সারি সেক্টর এই বয়কটে প্রভাবিত হবে না।’
[৬]প্যারিস বিজনেস স্কুলের ভূরাজনীতির অধ্যাপক ফ্রেডেরিক এনচেল বলেন, ‘কাতার ও কুয়েতের মতো দেশগুলোর সঙ্গে ফ্রান্সের অস্ত্র চূক্তি রয়েছে। কোনো মসজিদ কিংবা এনজিও ফ্রান্স বোম্বার বা রাফায়েল জেট বিক্রি বন্ধ করতে পারবে না। উপরুন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ফ্রান্সের ইউরোপিয় সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের মুখে পড়তে পারে। কারণ চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইইউ মুসলিম দেশগুলোর প্রধান বাণিজ্য সহযোগী। তারা কোনোভাবেই বাণিজ্যিক ঝুঁকি নেবে না।’
[৭]ইতোমধ্যেই জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, ইতালি, নেদারল্যান্ড ও গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীসহ ইউরোপিয় কমিশনের চেয়ারম্যান উরসুলা ভন দের লিয়েন ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ‘একজন চরমপন্থী মুসলিমের হাতে এক শিক্ষকের হত্যার পর এই ধরণের পণ্য বয়কটের দাবী পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।’
[৮]ফ্রান্স কাউন্সিল অব মুসলিম ফেইথ এক বিবৃতিতে ফ্রান্স পণ্য বয়কট থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘মুসলিমরা ফ্রান্সে মুক্তভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করে। কোনো মুসলিম এখানে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয় না।’
[৯]গত ১৬ অক্টোবর চেচনিয়া থেকে আসা এক চরমপন্থী মুসলিম শরণার্থীর হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন প্যারিসের স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি। ফ্রান্সের ব্যাঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি হেবদোর প্রকাশিত মুহম্মদ (সা.) এর কার্টুনের কপি নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করায় তাকে হত্যা করা হয়। স্যামুয়েলের হত্যার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ চরমপন্থী ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ফ্রান্স এই কার্টুন প্রদর্শন বন্ধ করবে না। ম্যাক্রোঁর ঘোষণা মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে উত্তেজনা সৃষ্টি করে ।