সুব্রত বিশ্বাস: বৃষ্টিধোয়া নীল আকাশ, কাশফুল, ভোরবেলার শিউলি-গন্ধে আজ আগমনীর সুর। পুজোর আলোময় সন্ধ্যা। ভিড় মণ্ডপ পুজো-পরিক্রমা যে কত বদলে গেলো! পুজোর এই আলো-অন্ধকারেই প্রেমের উন্মেষ ঘটে। শহরতলিতে,পদ্মা নদীর ধারে গ্রামে গ্রামে। পূজার ঢাকঢোল বাজিল, উৎসব, ছেলেবুড়া দু বেলা ঠাকুর দেখিল পুজো মানে শুধুই ‘যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ’ বলে অঞ্জলিদান নয়। এই সময়েই আকাশে-বাতাসে-হৃদয়ে প্রেম-প্রেম পায়। পুজো মানে শুধু প্রেম নয়, ভুল বোঝাবুঝির অবসান এবং অনেক কিছু। পুজোর এই চার দিন ধূপধুনো আরতি ঢাকের বাদ্যিতে উত্তুঙ্গ শিখর।
এখানেই বাঙালির ঐতিহ্য। মৃন্ময়ী দেবীর বিসর্জনে চোখের কোল চিকচিক করে ওঠা, ভরসা থাকে আসছে বছর আবার হবে। বিশ্ব জুড়ে মহামারি, মহালয়ার এক মাস পরে বোধন, মণ্ডপে মণ্ডপে সোশাল ডিস্ট্যান্সিং সবই হতে পারে, কিন্তু এই ভাল লাগা আর শেষ মুহূর্তে বুকের মধ্যে খাঁ-খাঁ শূন্যতা, কান্না ভাবকে অস্বীকার করব কী ভাবে? এই যে দেবীর জন্য অপেক্ষা, আকাশে-বাতাসে ভাল লাগা, শেষ মুহূর্তে কান্না পাওয়া, এখানেই বাঙালির ক্যাথারসিস। নিছক দেবী-ভক্ত সম্পর্ক নয়, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য ভালবাসা!
২০২০ প্রথম নয়, যুগ যুগ ধরে বহুবিধ সমস্যার মাঝেই কৈলাসবাসিনী বঙ্গভূমে আসেন।
এটাই বাঙালির দুর্গোৎসব। হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার স্থান সেখানে কোনও দিন ছিল না। হিন্দু-মুসলমান চাষী এবং পায়ের ধুলো নেয়। সবার হাতে একটি করে ধুতি কিংবা লুঙ্গি এবং পোড়ামাটির বাসন তুলে দেন। অতএব বাঙালির উৎসবকে আজ যাঁরা হিন্দু-মুসলমানে ভাগাভাগির চেষ্টা করবেন, তাঁরা ঐতিহ্যবিচ্ছিন্ন বাতুলমাত্র! নীল আকাশে মান-অভিমান প্রেম-অপ্রেম, নুয়ে পড়া কাশফুল, ভোরবেলায় শিউলির গন্ধ, সব কিছু নিয়ে গ্রামে গ্রামে দুঃখ-দারিদ্র সঙ্গে নিয়ে পুজোর দিন গোনার মধ্যেও তো রয়েছে আশাবরি রাগের ঝঙ্কার। বর্ষার রাত, ঝিঁঝিপোকার একটানা শব্দÑ যে আনন্দ, সেটাই বাঙালির পুজো। এ বারের করোনাসুরের আক্রমণেও মণ্ডপে মণ্ডপে স্যানিটাইজার, দুর্যোগের বছরে এই চ্যালেঞ্জ নেওয়াতেই তো আনন্দময়ীর প্রকৃত আবাহন। শরতের হিমেল অন্ধকারাচ্ছন্ন ভোরে পুজো বদলে যায়।